964
Published on জুলাই 27, 2022বাংলার নবজাগরণের দিন থেকে বড় স্বপ্ন দেখা বাঙালির স্বতন্ত্র গুণ। তাই গোপাল কৃষ্ণ গোখলে বলেছেন: "বাংলা আজ যা ভাবে, ভারত তা পরের দিন ভাবে "। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের মাধ্যমে বাংলা ভেঙে গিয়েছিল, কিন্তু বাঙালিরা ঔপনিবেশিক পরবর্তী দক্ষিণ এশিয়ায় বড় স্বপ্ন দেখা বন্ধ করেনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সময়ের অনেক আগে সত্যিকারের বড় স্বপ্ন দেখেছিলেন, কারণ তিনি 'সোনার বাংলা' (সোনার বাংলা) রূপকল্পে রূপান্তর করেছিলেন। ১৯৭৪ সালে যখন ইন্দিরা গান্ধীর ভারত পোখরানে তাদের প্রথম পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়, তখন বঙ্গবন্ধু মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প তৈরি করেন।
মাতামহের স্বপ্নের পুনরুজ্জীবন হল বাংলাদেশে সজীব ওয়াজেদ জয়ের অনেক অবদানের মধ্যে একটি, যে দেশটি ৫১ বছর বয়সে নিজের স্বপ্নকে আরো বড় করে তুলছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ৫৭তম দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নামে নামকরণ করা ভূ-স্থির যোগাযোগ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে।
আজ ৫১ বছর পূর্ণ করেছেন সজীব ওয়াজেদ। বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তর প্রকাশের জন্য ব্যাপকভাবে কৃতিত্বের দাবীদার এই তরুণ নেতা বাংলাদেশের জন্য আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিকে বাস্তবে পরিণত করেছেন৷ অনেক আগেই তিনি বাংলাদেশের আশ্চর্যজনক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের পূর্বাভাস করেছিলেন।
তাঁর মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটি উপদেষ্টা হিসাবে সজীব ওয়াজেদ অনলাইনে পাঠদান থেকে শুরু করে ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন পর্যন্ত - জীবনের সব ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির এর অনুপ্রবেশ ঘটাতে মূল ভূমিকা পালন করেছেন।
সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস বিপর্যয়ের সময় সেই ডিজিটাল রূপান্তরের সবচেয়ে বড় সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ। টেলিমেডিসিন, ভার্চুয়াল কোর্ট, মোবাইলের মাধ্যমে দরিদ্রদের কাছে অর্থসাহায্য ও ভাতা পৌঁছে দেওয়া, ই-কমার্সের মাধ্যমে পণ্য বেচাকেনাসহ ডিজিটাল কার্যক্রমের বিস্তৃত মধ্য দিয়ে তার অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। কোভিডের কারণে লকডাউন চলাকালীন সময়ে প্রতিবেশি দেশগুলোর চাইতে বেশি প্রবৃদ্ধির মূল কারনও ডিজিটাল বিপ্লব।
টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক এবং জনপ্রশাসনে হার্ভার্ডের স্নাতকোত্তর জয়কে রাজনীতির চেয়ে তথ্যপ্রযুক্তিই বেশি টানে। বঙ্গবন্ধুর প্রথম নাতি এবং হাসিনার একমাত্র ছেলে হওয়ায় তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ সহজ ও স্বাভাবিক হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তিনি তাঁর মায়ের আইসিটি উপদেষ্টা হিসাবে সন্তুষ্ট রয়েছেন, জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের জন্য জোর দিচ্ছেন এবং একটি অনন্য প্রযুক্তি সচেতনতা তৈরি করেছেন যা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আসন্ন চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে কারণ বাংলাদেশ নির্ধারিত সময়ের আগেই মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে।
আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) চেয়ারপারসন হিসেবে জয় একটি সুপার অ্যাচিভার প্রজন্ম তৈরির স্বপ্ন পূরনের কাজ করছেন।
তার সিআরআই টিমকে সাথে নিয়ে তরুণ বাংলাদেশীদের সাথে মিথষ্ক্রিয়াভিত্তিক ধারাবাহিক কিছু অনুষ্ঠান চালু করেন। দেশের যেসকল তরুণেরা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে নিরবে নিরলস পরিশ্রম করছে তাদের কাজের স্বীকৃতি দিতে ও তাদের মধ্যে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করতে ইয়াংবাংলা প্ল্যাটফর্ম ও জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড এর প্রবর্তন করে সিআরআই। এটি বাংলাদেশের প্রথম কোন প্ল্যাটফর্ম যেখানে স্বেচ্ছাসেবী তারুণ্যনির্ভর সংগঠনগুলো এক ছাতার নিচে এসে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে।
ঢাকার পথশিশুদের শিক্ষিত করা থেকে শুরু করে সিলেটের দরিদ্র ও দুর্বল চা শ্রমিক সম্প্রদায়কে সাহায্য করা- এমন পরিবর্তনমুলক সামাজিক কার্যক্রমকে সবার কাছে তুলে ধরে জয় বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের আশ্চর্যজনক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্য এমন নীরব কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ সামাজিক রূপান্তরকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। আর এই তরুনদের কাছে আইকন হিসেবে সজীব ওয়াজেদের স্থানটি অনস্বীকার্য।
জয় মর্মহীন প্রগল্ভতা পছন্দ করেন না। তাঁর সাক্ষাতকারে তিনি অল্প কথায়, সাধারনভাবে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেন। বাগাড়ম্বর হয়তো অনেক ক্ষমতাশালীদের পছন্দ হতে পারে, কিন্তু তিনি তা পরিহার করে চলেন। মহামারী চলাকালীন, তিনি কেবল স্বাস্থ্য নির্দেশনা অনুসরণ করার ওপর জোর দিয়েছিলেন। নির্দেশনাগুলো বারবার সবাইকে মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন করেছিলেন যতক্ষণ না এটি জাতীয় চেতনার অংশ হয়। সিআরআই-এর লেটস টক প্রোগ্রাম ব্যবহার করে, তিনি বাংলাদেশের তরুণদের সার্বক্ষনিক অহেতুক বিতর্ক বাদ দিয়ে মাঠে নেমে কাজ করার আহ্বান জানান।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অস্থিরতার মধ্যে জন্ম নেওয়া জয়ের শৈশব কেটেছে আনন্দহীন।
শৈশবে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই ভয়াল রাতে 'মিডনাইট ম্যাসাকার'-এর সাথে তাকে মানিয়ে নিতে হয়েছিল, যখন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য নিহত হয়েছিলেন ঘাতকের বুলেটে। শুধুমাত্র হাসিনা এবং তাঁর বোন শেখ রেহানা ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।
সিআরআই এর তত্ত্বাবধানে নির্মিত এক অনবদ্য ডকুড্রামা 'হাসিনা- এ ডটারস টেল' এর নির্মাণে নীরব প্রভাবকের ভুমিকা পালন করেছেন। ১৯৭১ সালের সেই শিশু আজ ২০২২ সালে এক দারুণ যুবক, আশার পতাকাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, প্রচণ্ড আবেগে মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে সবার ওপরে ধারণ করছে এবং সুন্দর ও আধুনিক ভবিষ্যত নির্মাণের রূপরেখায় অবিরাম কাজ করছে যা বাংলাদেশকে এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড়ে তুলছে।