1292
Published on জুন 25, 2022প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আজ গর্বিত। অনেক বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে, ষড়যন্ত্রের জাল ছিঁড়ে আজ পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। এই সেতু শুধু সেতু নয়, শুধু ইট-সিমেন্ট-কংক্রিটের কাঠামো নয়, এই সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব। সক্ষমতার, মর্যাদার প্রতীক।’
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে মাওয়া প্রান্তে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আবেগ, সাহসিকতা, সহনশীলতা। বাঙালি জাতির জেদ, প্রত্যয়। শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আলোর পথে যাত্রা করেছি। আমরা বিজয়ী হয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের ২২ দিনের মাথায় সেতুর নকশা তৈরির জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। বিশ্বব্যাংক প্রকল্পে টাকা দিতে রাজি হয়। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের প্ররোচণায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে যায়। তাদের চ্যালেঞ্জ করলাম, দুর্নীতির প্রমাণ দেখাতে হবে। আমরা থেমে যাইনি। স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদদের কথা শুনেও মনে হয়েছে, সত্যি বুঝি দুর্নীতি হয়েছে। অনেক পানি ঘোলা হয়েছে, ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হয়েছে।’
হতোদ্যম হইনি, মাথা নোয়াইনি
ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ দুই বছর বিলম্ব হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হতোদ্যম হইনি। মাথা নোয়াইনি। নিজেদের অর্থায়নে সেতু করার ঘোষণা দিই। উপদেষ্টা কমিটি হয়েছিল জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে। তাঁরাও বিশ্বাস রেখেছিলেন, আমরা পারব। নিজস্ব অর্থায়নে সেতু করা নিয়ে অনেকের সন্দেহ ছিল। তাঁরা মনে করেছিলেন, সারা জীবন অন্যের দয়ায় চলব। বাংলাদেশকে আত্মনির্ভরশীল করার সিদ্ধান্ত নিয়েই এগিয়ে চলেছি।’
জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের শক্তি বড় শক্তি। এ শক্তি নিয়েই নির্মাণকাজ শুরু করি। বাংলাদেশের জনগণকে স্যালুট জানাই। বাবা, মা, ভাই—সব হারিয়ে এ দেশের মানুষের ওপর ভরসা রেখেছি। জনগণের অনেকেই অর্থ দিতে চেয়েছিলেন। বাজেটের টাকাও জনগণের টাকা।’
ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাঁরা বলেছিলেন নিজেদের অর্থায়নে সম্ভব নয়, স্বপ্নমাত্র। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ, অনুযোগ নেই। তাঁদের চিন্তার, আত্মবিশ্বাসের দৈনত্যা আছে। আজকের পর তাঁদেরও আত্মবিশ্বাস বাড়বে যে বাংলাদেশ পারে। অর্থনীতি ধসে পরেনি, সচল আছে। করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ মোকাবিলা করেও বাংলাদেশের অর্থনীতি গতিশীল। যাঁরা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করেছেন, বাধা দিয়েছেন, তাঁদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। হৃদয়ে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে, দেশের মানুষের প্রতি তাঁরা আরও দায়িত্বশীল হবেন।’
পদ্মার মতো স্রোতস্বিনী নদীতে সেতু নির্মাণ চ্যালেঞ্জের ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্রোতস্বিনী পদ্মার গতি, পথ ধারণা করা কষ্টকর। এর বাস্তবায়ন ছিল কঠিন, চ্যালেঞ্জের। গুণগতমানে কোনো আপস করা হয়নি। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণ ব্যবহার করে সর্বোচ্চ মান ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়েছে। গভীরতম পাইল ব্যবহার করা হয়েছে। পদ্মা নদীকে শাসনে রাখাও চ্যালেঞ্জ। তা মোকাবিলা করেই দুই পাড়কে সুরক্ষিত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু আঞ্চলিক যোগাযোগে অবদান রাখবে। এই সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার উন্নতি হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে, সহজে যাতায়াত করতে পারবে। রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হবে। পদ্মার ওপারের অবহেলিত মানুষ আর অবহেলিত থাকবে না। জিডিপি বাড়াবে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ। নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাই–টেক পার্ক গড়ে তোলা হবে।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে। শিল্পায়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। আঞ্চলিক বাণিজ্যে এই সেতু বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এই অঞ্চলে বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের ঐতিহাসিক দিনে যার যার অবস্থান থেকে দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার শপথ নেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।