1127
Published on জুন 24, 2022আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলা, বাঙালি, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এবং আওয়ামী লীগ এক অবিচ্ছিন্ন অনুভূতির নাম। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গণমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন তিনি।
কাদের বলেন, ২৩ জুন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ, সর্বপ্রাচীন এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম অতঃপর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বৈরশাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সংগ্রামসহ আমাদের জাতীয় জীবনে যা কিছু মহৎ অর্জন, তা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই অর্জিত হয়েছে। বাংলা, বাঙালি, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এবং আওয়ামী লীগ এক অবিচ্ছিন্ন অনুভূতির নাম।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান এবং ভ্রান্ত দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা, অতঃপর বাঙালি জাতির ওপর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার, নির্যাতন, চরম অবহেলা ও দুঃশাসনে নিষ্পেষিত বাংলার জনগণের মুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগ। এ দেশের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ভাগ্য বদলের যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরেই।
তিনি বলেন, বাঙালির স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সাফল্যের রচয়িতা আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই বাঙালি তার ভাষার অধিকার পেয়েছে, বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফার সাঁকো পেরিয়ে স্বাধীনতার স্বপ্নভূমিতে পদার্পণ করেছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ জনপদে বিগত ৭৩ বছর ধরে সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতির সমন্বয় এবং রাজনীতিতে সততা, দেশপ্রেম ও সম্প্রীতির আদর্শকে আওয়ামী লীগ সর্বদা ধারণ করেছে। জনগণের ভেতর থেকে উত্থিত একটি প্রগতিশীল সংগ্রামী রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ হচ্ছে সমাজের অগ্রসর চিন্তা-চেতনা, আদর্শ, লক্ষ্য ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের অগ্রবাহিনী। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্যের রূপকার আওয়ামী লীগ বাঙালি জাতির স্বতন্ত্র জাতি-রাষ্ট্র ও আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার সুমহান ঐতিহ্যের প্রতীক।
তিনি বলেন, গত সাত দশকের বেশি সময় ধরে গণমানুষের প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ভাগ্যোন্নয়নে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ এই পথচলায় অধিকাংশ সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। যাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণেই আওয়ামী লীগ সুদৃঢ় সাংগঠনিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে এবং জনমানুষের আবেগ ও অনুভূতির বিশ্বস্ত ঠিকানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের হাত ধরেই নির্দেশিত হয়েছে দেশ ও দেশের মানুষের এগিয়ে চলার পথ। একইভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির গতিপথও নির্ণিত হয়েছে জনকল্যাণ ও গণআকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে। আওয়ামী লীগ আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত-আধুনিক সুখী-সমৃদ্ধশালী কল্যাণকর ও শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র বিনির্মাণে বদ্ধ পরিকর।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ শুধু স্বাধীনতাই এনে দেয়নি, অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির শক্তিশালী ভীতও রচনা করেছে। বঙ্গবন্ধুর সরকার শূন্য কোষাগার হাতে নিয়ে স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করে পৃথিবীর বুকে অনন্য নজির স্থাপন করেছিল।
ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের মধ্য দিয়ে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সয়ম্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রামে আওয়ামী লীগ যখন নিয়োজিত ছিল ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক-চক্র দেশি ও আন্তর্জাতিক অপশক্তির সহায়তায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাসহ জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চতুর্মুখী ষড়যন্ত্র করা হয়। খুনিচক্র অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন চালায়, জেল-জুলুম মামলা-হামলা দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষত-বিক্ষত করার অপচেষ্টা চালায়। এমনই এক ক্রান্তিকালে ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ৬ বছরের নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্বার আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবসান হয়। গণতন্ত্রের উত্তরণ ঘটে, বাঙালি জাতি ফিরে পায় তাদের ভোট ও ভাতের অধিকার। সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার গত চার দশকের বলিষ্ঠ ও ভিশনারি নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভায় অনন্য মর্যাদার আসনে অভিষিক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, ঘাতকের নির্মম বুলেট সে স্বপ্নের গতিপথ রোধ করে দিয়েছিল। পিতার অপূর্ণ সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে ক্লান্তি-শ্রান্তিহীন নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তার হাত ধরেই এক সময়ের দরিদ্রকবলিত বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সম্ভাবনার নব নব দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। ফলে নিজস্ব অর্থায়নে আমরা পদ্মা সেতুর ন্যায় বৃহৎ ও চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। যার মধ্য দিয়ে একটি সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্র বিনির্মাণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার অনন্য নজির স্থাপিত হয়েছে এবং উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনায় পরনির্ভরশীলতা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবো। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পরিকল্পনায় অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০২১-২৫), প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-৪১) এবং ব-দ্বীপ পরিকল্পনা (২১০০)-এর আলোকে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে উন্নত-কল্যাণকর সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ জনপদ।