করোনাকাল: মহামারি মোকাবিলায় ডিজিটাল ব্যবস্থার বাস্তবিক প্রয়োগ

1031

Published on মে 18, 2022
  • Details Image

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। ততদিনে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে আলোকিত ডিজিটাল রাষ্ট্রে। প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট। ফলে মহামারির সময়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেও দেশের সাধারণ মানুষের জন্য সব-রকমের সেবা নিশ্চিত করতে পেরেছে সরকার। আপনারা জানেন, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা জনগণের কাছে এই প্রতিশ্রুতিই দিয়েছিলেন। নির্বাচনি ইশতেহারে তিনি বলেছিলেন- ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ডিজিটাল রাষ্ট্রে পরিণত করা হবে, ক্ষুধা-মন্দা দূর করে বদলে দেওয়া হবে মানুষের জীবন। 

বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ও দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতে এবং আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে, তাই বঙ্গবন্ধুকন্যার আহ্বানে সাড়া দেন সর্বোস্তরের মানুষ। ফলে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিপুল ভোটের জয় লাভ করে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের বিষয়টিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তেমনি মানুষের দিন বদলের জন্য দেশজুড়ে তথ্য-প্রযুক্তির প্রসারে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু করেন। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই দেশ পরিণত হয় ডিজিটাল রাষ্ট্রে। যার পুরো সুফল পেয়েছি আমরা করোনা মহামারির সময়।

দেশে আজ শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রাম, দ্বীপ, চরাঞ্চলেও পৌঁছে গেছে বিদ্যুতের আলো ও ইন্টারনেট। ফলে দেশের যে কোনো প্রান্তে বসে একটি মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই সারা বিশ্বে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে। জনগণের প্রতি সরকারের আন্তরিকতা ও অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে নতুন প্রজন্ম আজ এক নতুন বাংলাদেশকে দেখতে পাচ্ছে।

যে করোনা মহামারির সময় ইউরোপ-আমেরিকার মতো উন্নত দেশেও লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতি দেশেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খুব কম। এর একমাত্র কারণ, ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রতিদিন নিয়মিতভাবে সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছানো হয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে। টেলিভিশনের মাধ্যমে খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে নিয়মিত নির্দেশনা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারপ্রধানকে নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে প্রচারণা চালাতে দেখে, মহামারির  গুরুত্ব উপলব্ধি করতে শুরু করে জনগণ এবং সতর্ক হয় মানুষ। ফলে গ্রামগুলোতে সেভাবে ছড়াতে পারেনি এই ভাইরাস। 

এমনকি পুরো মহামারিকালে কর্মহীন হয়ে পড়া স্বল্প আয়ের মানুষদের মোবাইল ফোনে সরাসরি অর্থ সহায়তা দিয়েছে সরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারা দেশের অসহায়-দরিদ্রদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় খাদ্য, ঔষধ ও স্বাস্থ্যবিধির সরঞ্জাম। ৩৩৩ ও ৯৯৯-সহ বেশ কয়েকটি মোবাইল নাম্বারকে হেল্পলাইন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়, যে কেউ এসব নাম্বারে ফোন করলেই সরকারের পক্ষ থেকে সেবা নিশ্চিত করা হতো তাদের। এমনকি মহামারির কঠিন দুঃসময়েও প্রায় ৯ লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য জমিসহ বাড়ি নির্মাণের কাজ অব্যাহত রেখেছে সরকার। এমনকি নিয়মিত বিরতিতে সেগুলো হস্তান্তরও করা হচ্ছে অসহায় মানুষদের হাতে। 

তবে মহামারির সময়েও, থেমে ছিল না বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রকারীরা। গণমানুষের পাশে কোনো সহায়তা নিয়ে তো তারা আসেইনি, উল্টো উগ্রপন্থীদের মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে লাখ লাখ মানুষের গণমৃত্যু ঘটাতে চেয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল- মহামারির মধ্যে মানুষ যখন জীবন মৃত্যুর দোলাচলে ব্যস্ত, তখন আতঙ্ক ছড়িয়ে সরকার ও রাষ্ট্রের ক্ষতি করা, ক্ষমতা দখল করা। কিন্তু ইন্টারনেটের মাধ্যমে এসব গুজব মোকাবিলা করে- বাংলার সরলপ্রাণ মানুষদের কাছে সঠিক তথ্য পৌছানোর মাধ্যমে- জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে সরকার। এক যুগ আগের বাংলাদেশে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হয়তো সম্ভব হতো না, কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে ওঠা ডিজিটাল বাংলাদেশের সবরকম ডিজিটাল সুবিধা ব্যবহার করে এই মহামারি মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। এমনকি করোনাকালে সামাজিক ভিড় পরিহারের বাধ্যবাধকতা থাকায় ইন্টারনেটকে প্রয়োজনীয় কাজে লাগাতে শুরু করেন সর্বোস্তরের জনগণ। এই সময়েই ব্যাপকভাবে ই-কমার্সে যুক্ত হয়ে নিজেদের সচ্ছল করে তোলেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উদ্যোক্তা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

শুধু তাই নয়, করোনার মধ্যে সারা বিশ্বে যখন মন্দা শুরু হলো, তখনও অগ্রযাত্রা থমকে যায়নি বাংলাদেশের। করোনার মতো অতিমারি মোকাবিলা করেই আজ বিশ্বের বুকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিটি ইউনিয়নে পৌঁছে গেছে ব্রডব্যান্ড সুবিধা। ফলে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে প্রতিটি এলাকায়। ডিজিটাল অর্থ লেন-দেন, ই-কমার্স ও ফ্রিল্যান্সিং খাতে কাজ করে ঘরে বসেই মানুষ  প্রয়োজনীয় অর্থ উপার্জন করতে পারছেন। শুধু তাই নয়, ডিজিটাইজড সিস্টেমের আওতায় আনা হয়েছে কৃষি সেক্টরকে। তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষা এবং সার ও উন্নত জাতের বীজ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের। তারা ১০ টাকায় খুলতে পারছেন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। বিনা জামানতে ও স্বল্প সুদে কৃষকদের ঋণ দিচ্ছে সরকার। গবেষণার মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য উদ্ভাবন করা হয়েছে লবণ-সহনীয় ধানের জাত। ফলে চাল, সবজি ও মাছ উৎপাদনে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি রাষ্ট্রের মধ্যে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।

প্রশাসনিক কাজে গতি আনতে এবং অনিয়ম-দুর্নীতি রোধ করতে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এখন ই-গভর্ন্যান্স চালু হয়েছে দেশে। দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী, তাই তাদের কর্মক্ষম করে তুলতে তথ্য-প্রযুক্তি এবং কুটির শিল্পের জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সরকার। দেশজুড়ে ডিজিটাল সেন্টার, ডিজিটাল ল্যাব ও আইটি পার্ক নির্মাণের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বের উপযোগী করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী পরিকল্পনার কারণে মাত্র এক যুগের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র-উগ্রতার দিন শেষ করে ধূমকেতুর মতো মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ।

সীমিত ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে দুর্যোগ ও মহামারি মোকাবিলা এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার কারণে, আজকের এই বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে অভিহিত করছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে নাম লেখানো এখন আমাদের জন্য শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্যান্য রাজনীতিবিদদের মতো মানুষকে বোকা বানান না, তিনি দেশবাসীকে যে কথা দেন- কর্তব্য গণ্য করে তা পালন করেন। পিতার মতোই শুধু বাংলার মানুষকে ভালোবেসে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন মাননীয় প্রশানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই এতো অল্প সময়ে দেশের অবকাঠামো থেকে শুরু করে মানুষের জীবনযাত্রার ধরন বদলে দিতে পেরেছেন তিনি। দয়া করে এক যুগ আগের স্মৃতিচারণ করুন, আর আজকের বাংলাদেশ কোথায়- পার্থক্যগুলো বিবেচনা করে দেখুন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলার মানুষের দিন বদলের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা আপনার সামনেই আছে, আপনাদের চোখের সামনেই সবকিছু হয়েছে।

এসব-কিছুই সম্ভব হয়েছে শুধু গণমানুষের সহযোগিতার কারণে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই মানুষের প্রতি দেওয়া প্রতিশ্রতিগুলো বাস্তবায়ন শুরু করে, ফলে বাংলাদেশের মানুষের আস্থার প্রতীকে পরিণত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই টানা তৃতীয় বারের মতো সরকার গঠন করতে সমর্থ হয় আওয়ামী লীগ। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই উন্নত বিশ্বের পথে ধাবমান যাত্রায় শরিক হয়েছেন সর্বোস্তরের মানুষ। দেশের মানুষ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ও আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলবেন। গণমানুষকে সঙ্গে নিয়েই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত