ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের খিলগাঁও থানার ৭৫নং ওয়ার্ডের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

476

Published on মার্চ 29, 2022
  • Details Image

জিয়াউর রহমানের কারণে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া যায়নি বলে মন্তব্য  করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি। 

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে দালাল আইন বাতিল করে রাজাকারদের মুক্ত করে দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামী পাশবিক নির্যাতন করেছিল তাদেরকে রাজনীতির সুযোগ করে দিয়েছেন। এসব কারণে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া যায়নি।

মঙ্গলবার রাজধানীর খিলগাঁও ত্রিমোহিনী ঈদগাহ মাঠে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের খিলগাঁও থানার ৭৫নং ওয়ার্ডের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন  এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে হানিফ বলেন, জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে রাজাকারদের নিয়ে সরকার গঠন করে প্রমাণ রেখে গেছেন তিনি ছিলেন পাকিস্তানের এজেন্ট। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হলে তিনি কখনো পরাজিত শক্তি নিয়ে সরকার গঠন করতে পারতেন না। তিনি নামে মুক্তিযোদ্ধা, কাজে পাকিস্তানের এজেন্ট। আর তার স্ত্রী খালেদা জিয়া রাজাকার নিজামী, মুজাহিদের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনিও ছিলেন পাকিস্তানের অনুচর।

মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমান অংশগ্রহণ করেছেন কোথাও এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে হানিফ বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের চর হিসেবে কাজ করেছেন। আমি সিলেটে বহু সমাবেশে প্রকাশ্যে বলেছি জিয়াউর রহমান কোথায় মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কেউ জানা থাকলে বলার জন্য। আজ পর্যন্ত কেউ বলতে পারেনি।

হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ জাতির জনকের হাতে গড়া সংগঠন। এটা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। দেশের সব অর্জন আওয়ামী লীগের হাত ধরে এসেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালিকে মানচিত্র, পতাকা, স্বাধীন দেশ দিয়েছেন। আর তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক মুক্তির দাঁড়পান্তে নিয়ে এসেছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অহংকার করতে পারে কারণ শেখ হাসিনার কারণে আজ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ চরম দারিদ্রশীল দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে। আমরা খুব দ্রুত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো।

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় শক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে খণ্ড বিখণ্ড করে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিলো। লাখ লাখ নেতাকর্মীকে আটক করে নির্যাতনের স্টিম রোলার চালানো হয়েছে। দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে দেশ অচল অবস্থায় পরণিত করা হয়েছিল। সেসময়ে ফিনিক্স পাখির মতো তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জেগে উঠেছিল। স্বাধীনতার পর অনেক সময় দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকে বিপথগামী হলেও তৃণমূল হয়নি। নেতাকর্মীরা ঘুরে দাঁড়ানোর কারণে আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশকে উন্নয়নশী দেশে পরিণত করতে পেরেছেন।

আওয়ামী লীগের এ সিনিয়র নেতা বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে আরো বহুদূর চলতে হবে। বঙ্গবন্ধু জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। স্বপ্ন দেখেছেন ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার। আমরা এখনো সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি। উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবো।

বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি বারবার বাধাগ্রস্ত করেছে উল্লেখ করে হানিফ বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াত পাকিস্তানের মওদূদীর হাতে তৈরি আর বিএনপি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের হাতে তৈরি। একই জায়গা থেকে তাদের সৃষ্ট হয়েছে। তারা বাংলাদেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে চায়, বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করাই তাদের মূল লক্ষ্য।

স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বাধীনতার মাসে বিএনপি ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করছে। তাদের দাবি, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান। ২৬ মার্চ হঠাৎ করে আসেনি। ৪৮ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তির জন্য সংগ্রাম শুরু করেছেন। ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নিবাচন, ৬২’র শিক্ষা আন্দলন,  ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে বিজয় অর্জনের পর, একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। মূলত এদিন থেকেই দেশের মানুষ তার নির্দেশে চলেছেন। ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরু হলে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা করেন, যা বেতারে প্রচার হয়েছিল।

তিনি বলেন, ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতারা চিন্তা করলেন বাঙালি কোনো সেনা অফিসার দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করালে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে থাকা বাঙালি সেনারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিবেন। এতে বিজয়টা দ্রুত হবে। চট্টগ্রাম শহর থেকে জিয়াউর রহমান যখন কালুরঘাটের দিকে যাচ্ছিলেন তখন তাকে ধরে প্রস্তাব করা হয়। প্রথমে তিনি না করেছিলেন, পরে রাজি হলেন। এরপর ২৭ মার্চ বিকেলে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তিনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করলেন। ঘোষণা পাঠকারীকে চক্রান্ত করছে বিএনপি।

এসময় শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে হানিফ বলেন, অশুভ শক্তি সবসময় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার তৎপরতা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে সজাগ থেকে মাঠ পযায়ে শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।

সম্মেলনের শুরুতে পতাকা ও পায়রা উড়িয়ে উদ্বোধন করেন অতিথিরা। পরে সম্মেলন উদ্বোধন ঘোষণা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আবু আহমেদ মন্নাফী। ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, নার্গিস সুলতানা এমপি। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ৭৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি জয়নুল হোসেন।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত