1226
Published on মার্চ 17, 2022স্কোয়াড্রন লিডার (অবঃ) সাদরুল আহমেদ খান:
আজ ১৭ মার্চ। ১৯২০ সালের এদিনে বাংলার মাটিতে জন্ম নিয়েছিলেন দেশপ্রমী সাহসী নেতা, তার নাম শেখ মুজিবুর রহমান। তার নেতৃত্বে বাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে পরাজিত করে, বাংলাদেশ নামের দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। তিনিই বাঙালিকে একটি জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়ের সুযোগ করে দিয়েছিলেন, তিনি গোটা জাতিকে নিজ পরিবারের মতোই ভালোবাসতেন, তাইতো তিনি আমাদের জাতির পিতা। তিনি ছিলেন বাংলার সকল মানুষের পরম বন্ধু, তাই তিনি বঙ্গবন্ধু।
শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল অপরিসীম মমতা। বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন নির্ভীক, অমিত সাহসী, মানবদরদি এবং পরোপকারী। স্কুলে পড়ার সময়েই তার নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশ লাভ করতে থাকে। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠেন বাংলার নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের আশ্রয়স্থল।
বঙ্গবন্ধুর ডাকনাম ছিল খোকা, তিনি কিশোর বয়সে ভালো ফুটবল খেলতেন। পড়ালেখার পাশাপাশি শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং খেলাধুলার বিভিন্ন শাখায় তিনি নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এ নেতার রাজনৈতিক জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করা, ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও অশিক্ষার অন্ধকার থেকে মুক্ত করে উন্নত জীবন নিশ্চিত করা।
দেশ স্বাধীনের মাত্র এক বছরের মধ্যে ১৯৭২ সালে তিনি পবিত্র সংবিধান প্রণয়ন করেন, সে সংবিধানে তিনি শিশু অধিকার সমুন্নত রাখেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে শিশু আইন প্রণয়ন ও প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেন। শিশুদের প্রতি জাতির পিতার গভীর ভালোবাসাকে সম্মান জানাতেই তার জন্মদিন ‘১৭ই মার্চ’ কে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয় ।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কিছু বিপথগামী কুচক্রী মানুষের আক্রমণে আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারালাম। বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তার আদর্শ আমাদের চিরন্তন প্রেরণার উৎস।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব শিশুদের কল্যাণে বর্তমানকে উপযুক্ত করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের সমন্বয়ে মাল্টি সেক্টরাল প্রোগ্রামের আওতায় তাঁর সরকার শিশু উন্নয়ন ও সুরক্ষার বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে জাতীয় শিশু নীতি-২০১১, শিশু আইন-২০১৩, ডিএনএ আইন-২০১৪, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭, যৌতুক নিরোধ আইন-২০১৮, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০২০, নারী ও শিশু সহিংসতা প্রতিরোধ কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-৩০ ইত্যাদি প্রণয়ন করেছেন।
প্রিয় মাতৃভূমিকে শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাস ভূমিতে পরিণত করতে বদ্ধপরিকর শেখ হাসিনা সরকার , তাই শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে মোবাইল এপস ‘জয়’, টোল ফ্রি মোবাইল হেল্পলাইন -১০৯ খোলা হয়েছে। দেশব্যাপী ৪৩টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র (ডে-কেয়ার সেন্টার) খোলা হয়েছে। রয়েছে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার, ট্রমা কাউন্সিলিং সেন্টার , ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাব, কিশোর-কিশোরী ক্লাব, এতিম শিশুদের জন্য (অনুর্ধ্ব-১৮) শিশু পরিবার, প্রতিবন্দী শিশুদের বিশেষ শিক্ষালয় (স্পেশাল স্কুল ফর চিল্ড্রেন উইথ অটিজম) ইত্যাদি। আর এসকল উদ্যোগ শুধু বাংলাদেশী শিশু নয়, মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য হচ্ছে।
শিশুদের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত করে তাদের ব্যক্তিত্ব গঠন, সৃজনশীলতার বিকাশ এবং আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং খেলাধুলার বিভিন্ন শাখায় শিশুদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।
জাতীয় শিশু দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়, “বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের অঙ্গীকার, সকল শিশুর সমান অধিকার।” সব শিশুর সমঅধিকার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলাই হউক আমাদের লক্ষ্য। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাবা-মা ,পরিবার ও সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। শিশুর প্রতি সহিংস আচরণ এবং সব ধরনের নির্যাতন বন্ধ করতে আসুন আমরা সবাই এগিয়ে আসি, আগামী প্রজন্মের জন্য গড়ে তুলি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখকঃ সাবেক ডেপুটি সার্জেন্ট এট আর্মস; সদস্য, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটি , বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ।