জননেত্রী’র গ্রাম-শহর উন্নয়ন হবে জনমানুষের অভিজ্ঞতা ও জীবনবোধ থেকে

763

Published on মার্চ 4, 2022
  • Details Image

সজল চৌধুরী:
গ্রামের রাস্তা দিয়ে ভ্যানে করে ভ্রমণ করছি। স্বভাবতই যেকোনো জায়গায় গেলে ভ্যান কিংবা রিকশায় উঠলে কিংবা চায়ের স্টলে দেশের উন্নয়ন নিয়ে মানুষজনের সাথে কথা বলা আমার একটি অভ্যাস বলতে পারি। কারণ তাদের সাধারণ কথার মধ্যে নেগেটিভ পজেটিভ অনেক তথ্য পাওয়া যায়। সেই তথ্যগুলোকে আমি খুব গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে। কারণ বর্তমানে আমরা যে সামগ্রিক উন্নয়ন দেখছি কিংবা গ্রাম ও শহরের অবকাঠামোগত পরিবর্তন দেখছি তার সবকিছুর মূলেই রয়েছে সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন। সেই সাধারণ মানুষ চাকরিজীবী থেকে শুরু করে একজন কৃষক কিংবা রিকশাচালক যে কেউ হতে পারে। তাই সময় পেলেই তাদের কথাগুলো খুব মনোযোগ সহকারে শুনি এবং খুঁজে বের করার চেষ্টা করি তাদের চিন্তা ভাবনা গুলোকে। যে চিন্তা ভাবনা হয়তোবা সঠিক স্থানে কিংবা সঠিক সময়ে বাস্তবায়িত হলে তাদের জীবন যাপনের উন্নয়নের কথা বলা হবে। কেননা প্রত্যেকটি সফলতার পেছনে যেমন একটি-কষ্টের-গল্প থাকে ঠিক তেমনি সফল কোন কিছুর ভেতরেও ব্যর্থতা থাকতে পারে। এটিই স্বাভাবিক। আর সেই ব্যর্থতাগুলোকে উন্নয়নের সোপানে নিয়ে আসতে হলে সর্বপ্রথম মানুষের অভিজ্ঞতাগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে। আর সেখান থেকেই হয়তোবা স্বল্পমেয়াদী কিংবা দীর্ঘমেয়াদী সমাধান আসবে।

যাইহোক আসল কথায় ফেরা যাক। ভ্যান চালককে কথাপ্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলাম এইযে চারদিকে এত সুন্দর পাকা রাস্তা, এত উন্নয়ন এসব বিষয়ে তার মতামত কি? তার অনুভূতি কি? কথা প্রসঙ্গে সবথেকে প্রথমে তিনি যে বিষয়টি জানালেন বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে যাতায়াত ব্যবস্থায়। এমনকি তিনি গ্রামগুলোর শিক্ষাব্যবস্থা, ইন্টারনেট এর সুব্যবস্থা এসব বিষয়েও তার পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করলেন। একসময় তার বাড়ির চারপাশে তেমন কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা ছিল না। যে কারণে তাকে এবং তার পরিবারকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে উন্নত চিকিৎসা, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা এমনকি জীবিকা নির্বাহের জন্য। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে আজ তার বাড়ির পাশেই নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যেই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে। তার নিজ গ্রামের স্কুলে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতে যাচ্ছে। সকাল থেকে রাত অবধি বিদ্যুৎ সেবা পাচ্ছে এবং শহরে ভ্যান চালিয়ে পাকা রাস্তা ধরে খুব সহজেই রাতের বেলাতেও সে বাড়ি ফিরতে পারছে নির্বিঘ্নে। জীবনটা আগের থেকেও অনেক সহজ হয়েছে। আয় উপার্জনও বেড়েছে। একথা বললে অত্যুক্তি হবে না বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি বারবার ধন্যবাদ জানালেন গ্রাম উন্নয়ন এর মাধ্যমে তাদের মতো সাধারণের জীবনযাপনের উন্নয়নের জন্য।

তবে তার কিছুটা আক্ষেপ রয়েছে। জানতে চাইলাম আক্ষেপ গুলো কি কি? তিনি নির্দ্বিধায় বললেন তার চারপাশে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। গ্রামের অনেক উন্নয়ন হচ্ছে আগের তুলনায়। কিন্তু বেশ কিছু ক্ষেত্রে মোটাদাগে কিছু সমন্বয়হীনতার জন্য সকল সুযোগ-সুবিধা সাধারণ মানুষের কাছে সঠিকভাবে আসছে না। কথা প্রসঙ্গে বললেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কথা এবং তিনি অনুরোধ করলেন যদি গ্রাম গুলোর দিকে বিশেষ করে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ গুলোর দিকে আরো নিবিড় দৃষ্টি দেয়া যায়-যার মাধ্যমে কিভাবে সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা তাদের কাছে পৌঁছানো যায় এবং সেই সুযোগ সুবিধা গুলো যেন জীবন ঘনিষ্ঠ হয় সেই সব বিষয়ে তিনি মতামত প্রদান করলেন। গ্রামের মানুষগুলোর কথা বিশেষ করে বিভিন্ন নিম্ন মধ্যবিত্ত পেশাজীবীর কথা তাদের অভিজ্ঞতাগুলোকে যদি একটু লিপিবদ্ধ করা হয় তাহলে হয়তোবা উন্নয়ন গুলো আরো জীবনঘনিষ্ঠ হবে। তার অভিযোগ আরো কিছু বাস্তবসম্মত পরিবর্তন দরকার। হয়তোবা সেই পরিবর্তনগুলো খুব বৃহদাকারে নয়। ছোট ছোট পরিবর্তন! যেদিকে আরও দৃষ্টিপাত দেয়া প্রয়োজন। এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো হয়তোবা জীবনের চলার পথ সুগম করবে। কিন্তু সেই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো সঠিকভাবে দেখা হচ্ছে না কিংবা সমন্বয় করা হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় নীতিনির্ধারকদের আরো বেশি সচেতনতা প্রয়োজন। আর তাদের এই সচেতনতার অভাবে একদিকে যেমন বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড বাধাগ্রস্থ হচ্ছে অন্যদিকে জীবন ঘনিষ্ঠ কর্মকাণ্ড থেকে সাধারণ মানুষ দূরে সরে যাচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সরকারের উপর।

মনে পড়ে গেল একটি দৃশ্যের কথা। গ্রামের রাস্তা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভ্যানে চড়ে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় নিজ এলাকা ঘুরে দেখলেন ২৭ জানুয়ারি ২0১৭। হাস্যোজ্জ্বল শেখ হাসিনা কোলে নাতিকে নিয়ে বসেন ভ‌্যানের সামনের দিকে; অন‌্য পাশে ভাগ্নে ছোট বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। পেছন দিকে বসেন রাদওয়ানের মেয়ে ও স্ত্রী পেপি সিদ্দিক। আর এভাবেই বঙ্গবন্ধু কন্যা নিজেকে অতি সাধারন বানিয়ে সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষদের অন্তরের অন্তঃস্থলে জায়গা করে নিয়েছেন। সকলকে ভাবতে শিখিয়েছেন উন্নয়ন শুধু এককেন্দ্রিক নয়, উন্নয়ন বহুমাত্রিক। শহরের পিচঢালা রাস্তা থেকে গ্রামের মেঠোপথ সর্বস্তরেই তিনি উন্নয়নের এ বহুমাত্রিকতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিতে চেয়েছেন। তবে সর্বস্তরের উন্নয়ন আমরা তখনই আরো বেশি করে উপলব্ধি করতে পারবো যদি এই উন্নয়নের সাথে সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো যায়। গ্রামে কিংবা শহরে কে কি বলছে, কে কী ভাবছে, কি তাদের উন্নয়ন চিন্তা এই সকল তথ্যগুলোকে সংগ্রহ করতে হবে এবং সেই তথ্যগুলো সংগ্রহ করে গবেষণার মাধ্যমে সেখান থেকে বের করতে হবে ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তাকে। অভিজ্ঞতার সাথে প্রয়োজনীয়তার একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। একে অপরের পরিপূরক। দৈনন্দিন জীবনে জনমানুষের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সেখান থেকে প্রয়োজনের তাগিদ নিরূপণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ উন্নয়ন সম্ভব। কারণ আজ যে উন্নয়ন হচ্ছে কালকে সেখান থেকে পরবর্তী উন্নয়নের দিকে যেতে হবে এবং সেই উন্নয়নকে হতে হবে জীবনঘনিষ্ঠ। এজন্য চাই মাঠ পর্যায়ের তথ্য উপাত্ত। সেই তথ্য উপাত্ত এমনভাবে সংগ্রহ করতে হবে মানুষের কাছ থেকে যেখানে কোন ধরনের কৃত্রিমতা যেন না থাকে। সঠিক তথ্য পেলে (সে তত্ত্বটি কোন কোন ক্ষেত্রে পজেটিভ কিংবা নেগেটিভ হতে পারে) সেই তথ্যগুলোর বিচারে পরবর্তী উন্নয়ন কর্মকান্ড হাতে নিলে ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নয়ন আরো দ্রুতগতিতে জনগণের সামনে উপস্থিত হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে এই মাঠ পর্যায়ের তথ্য অনুসন্ধান এর কার্যক্রম চলতে পারে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি গ্রামে গ্রামে তরুণ প্রজন্মকে এই তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন তরুণ প্রজন্মের মানুষের জীবনবোধের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মেশার সুযোগ তৈরি হবে অন্যদিকে বাংলাদেশকে ভালোবাসতে শিখবে এবং তাদের চিন্তা চেতনার মধ্যে এ দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড আরো প্রসার লাভ করবে। আর সবশেষে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তারা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শিখবে।

লেখকঃ শিক্ষক ও স্থপতি

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত