ভাষা আন্দোলন ও বাঙালির জাতীয়তাবাদের বিকাশ

1958

Published on ফেব্রুয়ারি 21, 2022
  • Details Image

ওয়ালিউর রহমানঃ

দীর্ঘ ২০০ বছর ইংরেজ শাসন ও শোষণের পর ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের মধ্য দিয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানের একটি প্রদেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত প্রদেশটির নাম ছিল পূর্ব বাংলা। তবে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধান রচিত হলে এর নামকরণ করা হয় পূর্ব পাকিস্তান। পাকিস্তানের মূল অংশ পশ্চিম পাকিস্তান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির অধিকার হরণের চেষ্টায় লিপ্ত হয়। জনসংখ্যার দিক থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বৈষম্য এ অঞ্চলের জনগণকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। সূচিত হয় ভাষা আন্দোলন।

ভাষা, নৃতত্ত্ব, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভৌগোলিক পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাসসহ সব ক্ষেত্রে বিস্তর ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও কেবল ধর্মের ভিত্তিতে এক হাজার মাইলের ব্যবধানে অবস্থিত পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশের অন্তভু‌র্ক্ত করে এই অসম রাষ্ট্র গড়ে তোলা হয়। এই রাষ্ট্রের কর্ণধাররা প্রথমেই শোষণ ও বৈষম্যের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয় বাঙালির প্রাণের ভাষা বাংলাকে। অথচ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় পাকিস্তানের ভাষাগত জনসংখ্যার একটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, মোট জনসংখ্যার ৫৪.৬০ শতাংশ বাংলা, ২৮.০৪ শতাংশ পাঞ্জাবি, ৫.৮ শতাংশ সিন্ধি, ৭.১ শতাংশ পশতু, ৭.২ শতাংশ উর্দু এবং বাকি অন্যান্য ভাষাভাষী নাগরিক। এর থেকে দেখা যায় উর্দু ছিল পাকিস্তানি ভাষাভাষীর দিক থেকে তৃতীয় স্থানে।

অন্যদিকে তদানীন্তন পূর্ববঙ্গের জনসংখ্যা ৪.৪০ কোটির মধ্যে ৪.১৩ কোটি ছিল বাংলা ভাষাভাষী। এখানে ৯৮ শতাংশ বাংলা এবং মাত্র ১.১ শতাংশ ছিল উর্দুভাষী। অথচ বাংলা ভাষাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বেশ কিছু পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু সংগ্রামের ঐতিহ্যে লালিত বাঙালি জাতি মাতৃভাষার ওপর এ আঘাতের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।

রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে ১৯৪৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে তমদ্দুন মজলিস নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। তমদ্দুন মজলিস সভা-সমিতি ও লেখনীর মাধ্যমে বাংলা ভাষার পক্ষে জনমত গড়ে তোলে।

১৯৪৭ সালের ৫ ডিসেম্বর করাচিতে অনুষ্ঠিত শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব গৃহীত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এর প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। তারা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানায়। এছাড়াও পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম বাংলা করার ব্যাপারে চাপ দিতে থাকে । ক্রমে ভাষার প্রশ্নে রাজনৈতিক দাবিতে পরিণত হয়। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে নূরুল হক ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক করে তমদ্দুন মজলিস রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। পরবর্তীকালে এ উদ্দেশ্যে আরো কয়েকটি কমিটি গঠিত হয়। ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ ছাত্রসমাজ দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের উপস্থিতিতে দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। এ পরিষদের আহ্বায়ক মনোনীত হন শামসুল আলম। শুরু হয়ে যায় একের পর এক আন্দোলন কর্মসূচি। নবগঠিত পরিষদ ১১ মার্চ হরতাল আহ্বান করে। হরতাল চলাকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শামসুল হক, অলি আহাদ, কাজী গোলাম মাহবুবসহ অনেকে গ্রেফতার হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ১৩-১৫ মার্চ ঢাকার সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। ছাত্রসমাজের প্রতিবাদের মুখে ১৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য নেতাদের মুক্তি দেওয়া হয়।

১৯৪৯ সালের ১৯ মার্চ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ ঢাকায় আসেন। ২১ মার্চ রমনার রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় এবং ২৪ মার্চ কার্জন হলে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেন উর্দুই এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। উপস্থিত ছাত্ররা ‘না না’ ধ্বনি দিয়ে এর প্রতিবাদ জানায়। এ সময় সারা পূর্ব পাকিস্তানেই ভাষা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জিন্নাহর মৃত্যু হলে ভাষা আন্দোলন কিছুদিনের জন্য স্তিমিত থাকলেও বাংলার অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন সংগঠিত হয়। এই অবস্থায় ১৯৪৮ সালের ১৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ঢাকা এলে ছাত্রসমাজ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানায়। লিয়াকত আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া বক্তৃতায় সুকৌশলে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে ছাত্রদের মধ্য থেকে আবারও না না ধ্বনিসংবলিত প্রতিবাদ ওঠে।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। এর মধ্যে খাজা নাজিমুদ্দীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি তিনি করাচি থেকে ঢাকায় আসেন। এবং পল্টন ময়দানের এক জনসভায় দীর্ঘ ভাষণ দেন। তিনি মূলত জিন্নাহর কথারই পুনরুক্তি করে বলেন, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু'। এর ফলে নতুন করে শুরু হয় ছাত্র বিক্ষোভ, ধর্মঘট, হরতাল।

গঠিত হয় সর্বদলীয় একটি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে স্হানীয় প্রশাসন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা ঠিক করেন—তারা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করবেন।

সেখানে ২১ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভকারীরা ১৪৪ ধারা ভাঙতে গেলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। ১৯৫২ সালের এ দিনে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল রফিক, সালাম, বরকত, সফিউর, জব্বার আরো কত নাম না জানা বাংলার দামাল ছেলেরা। মাতৃভাষার জন্য তাদের এ ত্যাগ ছিল অবিস্মরণীয়।

আটচল্লিশ ও বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলনে তত্কালীন এ দেশের নারীসমাজের প্রত্যক্ষ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। মিছিল, ‌স্লোগান, সভা-সমিতিতে তারা পুরুষের পাশাপাশি সংগ্রাম করেছেন। ঢাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশেষ করে কামরুন্নেসা স্কুল এবং ইডেন কলেজের ছাত্রীদের ভূমিকা ছিল সংগ্রামী। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের প্রথম স্তম্ভ রচিত হয় ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি ভাষা আন্দোলনের মূল বিষয় হলেও এ আন্দোলনের প্রভাব ছিল অনেক সুদূরপ্রসারী।

ভাষার জন্য আন্দোলন বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই হয়েছে। কোথাও অহিংস আবার কোথাও সহিংস।

ভাষা নিয়ে কিংবা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, লাটভিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ পৃথিবীর নানা স্হানে ভাষার দাবিতে সংগ্রাম হয়েছে বা এখনো হচ্ছে। কিন্তু ভাষা আন্দোলন থেকে একটি রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার ঘটনা শুধু বাংলাদেশ রাষ্ট্র জন্মের মাধ্যমে ঘটেছে।

ভারতের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দেশটির স্বাধীনতারও আগের। ১৯৩৭ সালে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির স্থানীয় কংগ্রেস সরকার স্কুলে হিন্দি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করলে ভাষা নিয়ে প্রথম আন্দোলন শুরু হয়। ভাষাকে কেন্দ্র করে ভারতে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ-সংগ্রাম হয় ১৯৬৫ সালে। যখন হিন্দিকে একমাত্র সরকারি ভাষা করা হয় তখন এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়, মানুষ রাস্তায় নেমে আসে দলে দলে। শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৬৭ সালে হিন্দির সঙ্গে ইংরেজিকেও ব্যাবহারিক সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকার ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল স্কুল পর্যায়ের ছাত্ররা। দক্ষিণ আফ্রিকার গাউটাং-এর জোহানসবার্গ শহরের সোয়েটোতে এই সংঘটিত আন্দোলনটি হয়েছিল ১৯৭৬ সালের ১৬ জুন। তখন দেশটির রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গদের সাম্রাজ্যবাদী সরকার। গাউটাং কর্তৃপক্ষ আফ্রিকানার ভাষায় শিক্ষাদান স্কুলে বাধ্যতামূলক করলে স্কুলের শিশু-কিশোররা প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে আসে। কারণ তারা তাদের মাতৃভাষা জুলু এবং ব্যবহারিক লিংগুয়া ফ্রাংকা ইংরেজিতে শিক্ষা নিতে বেশি আগ্রহী ছিল। তৎকালীন বর্ণবাদী সরকার প্রতিবাদ সভায় যোগ দিতে যাওয়া ছাত্রদের মিছিলে গুলি করে। শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

যুক্তরাষ্ট্রে অনেক নেটিভ আমেরিকান ভাষা ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসকদের হাতে মৃত্যুবরণ করেছে। গত শতকের ষাট-সত্তরের দশকে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সময় এই নেটিভ আমেরিকান ভাষা রক্ষার দাবিও সামনে চলে আসে।

কানাডার পূর্ব অংশের অঙ্গরাজ্য কুইবেকের রাজনীতিতেও ভাষা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল। ভাষার প্রশ্নে লাটভিয়ানদের ভূমিকাও ইতিহাসে এক বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। এরকম আরো অনেক ইতিহাস আছে নিজ মাতৃভাষা আন্দোলন নিয়ে।

কিন্তু বাঙালির ভাষার জন্য আন্দোলন এবং জীবনদানের মাধ্যমে তা প্রতিষ্ঠিত করা এবং একটি রাষ্ট্রের জন্ম দেওয়া পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত।

ভাষা আন্দোলন বাংলার জনগণের মধ্যে নতুন জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটায় এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত করে। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি যে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিল, তা পরবর্তী আন্দোলনগুলোর জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনে।

১৯৫২ সালে বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে ভিত্তি রচিত হয়, তা পরবর্তীকালের সকল ঘটনা প্রবাহকে প্রভাবিত করে। ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-র ছয় দফা, ৬৯’র গণ-অভু্যত্থান, ৭০-এর নির্বাচন এবং ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে একুশের চেতনা তাত্পর্যপূর্ণভাবে ভূমিকা পালন করেছে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল বাঙালির জাতীয় চেতনা এবং বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রের। মূলত বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাঙালিয়ানার জোয়ার ১৯৫২ সালের একুশে ফেরুয়ারির মধ্য দিয়েই এসেছে।

ভাষা আন্দোলন তৎকালীন রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়। এই আন্দোলনের ফলে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিকাশ ঘটে।

একুশের উৎস থেকে জেগেছিল গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্ন। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুই বাংলা ভাষাকে প্রথম রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন, বাংলা ভাষা পৃথিবীর অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ভাষা হোক। বাংলা ভাষায় সংবিধান প্রণয়ন করেন বঙ্গবন্ধু। এটিই একমাত্র দলিল, যা বাংলা ভাষায় প্রণীত। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রথম বাংলায় বক্তব্য দিয়ে বিশ্বসভায় বাংলাকে তুলে ধরেন। একুশে ফেব্রুয়ারি আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো ভাষা আন্দোলনকে সম্মান জানিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এটা আমাদের জন্য একটা গর্ব। সিয়েরা লিওনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের ভূমিকার কারণেই ২০০২ সালের ১২ ডিসেম্বর দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আহমাদ তেজান কাব্বাহ বাংলাকে সিয়েরা লিওনের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন। ভারতে ভারতীয় সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত ২৩টি সরকারি ভাষার মধ্যে বাংলা অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগে ও ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইটে বাংলা ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। আর উন্নতির এই সোপানে এগিয়ে যেতে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ যেমন প্রেরণা জোগায়, ঠিক একইভাবে প্রেরণা দেয় আমাদের ভাষা। কারণ আমরাই সেই জাতি, যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি।

লেখক: গবেষক

সৌজন্যেঃ দৈনিক ইত্তেফাক

 

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত