1180
Published on ফেব্রুয়ারি 16, 2022মো. আনোয়ার হাবিব কাজল:
বাংলাদেশের বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রয়াত স্বামী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার আজ ৮০তম জন্মদিন। ১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুর জেলার অন্তর্গত পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম ‘মিয়া’ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া পরমাণু বিজ্ঞানী হিসেবেই দেশবাসীর কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ জামাতা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী- এই দুই পরিচয় ছাপিয়ে তার ছিল নিজস্ব পরিচয় ও অবস্থান। তিনি একজন খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী। বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের ভৌতবিজ্ঞান সদস্য ছিলেন এবং পরে কমিশনের চেয়ারম্যানও নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ বিজ্ঞান উন্নয়ন সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭ সালে তাকে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে সরকার।
সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ছিল ড. ওয়াজেদ মিয়ার। তার প্রশাসনিক দক্ষতা ছিল ঈর্ষণীয় এবং অনুসরণীয়। জাতীয় উন্নয়নে বিজ্ঞানের ভূমিকা এবং এ মহৎ লক্ষ্য অর্জনে আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বে তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। ছাত্রজীবনে তিনি প্রগতিশীল রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন এবং নেতৃত্ব দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাকালে ছাত্রলীগে যোগদান করলে তাকে ফজলুল হক হল শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সে সময় শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের বিভিন্ন দাবির জন্য ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে অন্যদের সঙ্গে তিনিও গ্রেপ্তার হন এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েক মাস অন্তরীণ থাকা অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পরিচিত হন।
বঙ্গবন্ধু ড. ওয়াজেদ মিয়াকে রাজনীতিতে আনতে চাননি। বিজ্ঞানী হিসেবেই তাকে দেখতে চেয়েছেন। রাজনীতিতে তাকে কখনই জড়ানোর চেষ্টা করেননি। ড. ওয়াজেদ মিয়ার জীবনকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথমত স্বাধীনতা পূর্ববর্তী তার ছাত্র ও ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া জীবন এবং দ্বিতীয়ত তার বিজ্ঞান গবেষণায় নিবেদিত জীবন। তবে দ্বিতীয় জীবনে বিজ্ঞানী হিসেবেই তিনি বেশি সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে গেছেন।
তিনি ১৯৬১ সালে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৩ সালের ১ এপ্রিল পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে যোগদান করার পর লাহোরে প্রশিক্ষণে থাকা অবস্থায় বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালে ওই কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এমএস ডিগ্রি এবং ১৯৬৭ সালে ইংল্যান্ডের ‘দারহাম বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশে ফিরে পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনের অধীনে আণবিক শক্তি কেন্দ্র, ঢাকায় ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৬৭ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম কন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মুক্তিযুদ্ধকালে ড. ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন শেখ হাসিনা, বেগম মুজিব, শেখ রেহানা ও শেখ রাসেলের ভরসার স্থল। ড. ওয়াজেদ বঙ্গবন্ধুর ভবন ত্যাগ করে ধানমন্ডি ৮নং সড়কের বঙ্গবন্ধুর এক হিতাকাক্সক্ষীর বাসায় সবাইকে নিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে যখন সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তখন তিনি স্ত্রীসহ পশ্চিম জার্মানিতে ছিলেন। এ নির্মম হত্যাকা-ের ঘটনায় তিনি প্রচণ্ড রকম মানসিক আঘাত পান। যা তার সৃজনশীল জীবন থেকে কয়েক বছর কেড়ে নেয়। জীবনের শেষ প্রায় বিশ বছর তিনি মানসিকভাবে আহত ছিলেন। শেখ হাসিনা তাকে কাছে থেকে যেভাবে সেবা শুশ্রুষা ও সাহচর্য দিয়েছেন, তা দৃষ্টান্ত হয়ে রইবে।
পারিবারিক জীবনে ড. ওয়াজেদ মিয়ার জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আজকের প্রধানমন্ত্রী তার পাশে থেকে যে ধৈর্য, সাহস ও সেবার পরিচয় দিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছেন, তা অসাধারণ ও অসামান্য। একজন বিজ্ঞান আন্দোলনের কর্মী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, আপনি তো বিভিন্ন দেশে ঘুরে বিজ্ঞানের আয়োজন, গবেষণা ও কার্যক্রম দেখেছেন, বিজ্ঞানের প্রয়োগ ছাড়া কি আমরা দিন বদল করতে পারব, কিংবা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে পারব? এ কথা মাথায় রেখে যদি দেশের বিজ্ঞানীদের দেশ গড়ার কাজে আপনার পাশে রাখেন, তাহলে এটুকু আশ্বাস রাখতে পারেন এ ব্যাপারে আপনি নিঃসঙ্গ থাকবেন না। বাংলাদেশ বিজ্ঞান উন্নয়ন সমিতিসহ দেশের সকল বিজ্ঞানভিত্তিক সংগঠন, বিজ্ঞানী ও গবেষক এবং বিজ্ঞান মনস্ক ব্যক্তিত্বরা দেশের জন্য কল্যাণকর সকল কাজে আপনার পাশে থাকবে। ড. ওয়াজেদ মিয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে আজ ৮০তম জন্মদিনে এ প্রত্যাশা রইল।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সৌজন্যেঃ আমাদের সময়