সংসদে ভোটের মাধ্যমেই কোস্টগার্ডের সূচনা হয়: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

777

Published on ফেব্রুয়ারি 15, 2022
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকে ভবিষ্যতে আরো নতুন নতুন দায়িত্ব পালনে সক্ষম এমন একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন দায়িত্ব পালনে সক্ষম করে তুলতে আমরা কোস্ট গার্ডকে একটি আধুনিক ও যুগপোযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ার লক্ষে কাজ করছি।’ শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের ২৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সৃষ্টির পিছনে চমৎকার বিষয় রয়েছে। আমরা বিরোধী দলে। এত বেশি সংসদ সদস্য ছিল না। কিন্তু আমরা এই বিলটা নিয়ে এলাম। আমরা জানতাম সরকার পক্ষ কখনও এই বিল পাস করবে না।

আওয়ামী লীগের এমপিরা সবসময় পার্লামেন্ট প্র্যাকটিসে আন্তরিক ছিলাম। আমরা নিয়মিত হাউজে উপস্থিত থাকতাম। আর বিএনপির যারা সদস্য জামায়াত ও বিএনপি মিলে সরকার গঠন করেছিল। তারা সংসদে খুব একটা উপস্থিত থাকতো না।

বিলটি (কোস্ট গার্ড বিল) যখন উঠে, তখন কণ্ঠভোট আসে। আমরা নিজেরা গুণে দেখি যে আমরা সংখ্যায় বেশি। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এক সাংসদ সদস্য ডিভিশন ভোটের দাবি করেন। এই ভোটে বিরোধী দল জয়লাভ করে। তখনই এই আইনটি পাস হয়। এটা একটি ঐতিহাসিক ব্যাপার। ১৯৯৪ সালে এই ঘটনাটা ঘটেছিল।

১৯৯৪ সালে কোস্ট গার্ড বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়। ১৯৯৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এ বাহিনীর যাত্রা শুরু করে। গত ১৩ বছরে কোস্টগার্ডের জন্য ৭৭টি জলযান ‍নির্মাণ ও সংযোজন করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আরও জাহাজ নির্মাণ করা হবে। ভবিষ্যতে এই বাহিনীকে আরও আধুনিক যুগপোযোগী করা হবে। এই বাহিনীর সার্বিক কল্যাণে যা যা করার দরকার তা করবে সরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের নিজস্ব জনবল নিয়োগ কার্যক্রম এবং ফোর্স পুনর্গঠনের মাধ্যমে এ বাহিনীর সক্ষমতা অর্জনে আমাদের সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ব্লু-ইকোনমি ও গভীর সমুদ্রে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য এ বাহিনীর রূপকল্প-২০৩০ ও ২০৪১ অনুযায়ী জাহাজ, সরঞ্জামাদি ও জনবল আরও বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’ দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে আরো বিকশিত করার জন্য দক্ষিণাঞ্চলে আরো একাটি শিপইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী ভাষণে উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন ‘নারায়ণগঞ্জ ড্রাইডক এবং চট্টগ্রাম ড্রাইডক সেটাও আমরা নৌবাহিনীর হাতে সমর্পণ করেছি। ভবিষ্যতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরো একটি শিপইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনা আমাদের আছে। আশা করছি, আমরা তা করতে পারবো। ইতোমধ্যে আমরা জায়গা পছন্দ করে রেখেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পরামর্শে অলাভজনক উল্লেখ করে খুলনা শিপইয়ার্ড ও বিএনপি সরকারের আমলে বন্ধ করে দেয়ার প্রক্রিয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা সরকারে আসার পর এই শিপইয়ার্ড নৌবাহিনীর হাতে অর্পণ করি।

শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু আমাদের নদীমাতৃক বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমা রয়েছে, তাই আমরা পরমুখী হয়ে থাকবো কেন। তা ছাড়া ঐতিহাসিক কাল থেকেই বাংলাদেশে জাহাজ শিল্প নির্মাণ এবং রফতানি বাণিজ্য ছিল। তাই সেটাকে আমরা আবারো কার্যকর করি। যার ফলে আমরা শুধু বিদেশ থেকে কিনে না এনে নিজেরাও তৈরি করার সক্ষমতা অর্জন করেছি এবং ভবিষ্যতে আরো করবো।

তিনি বলেন, গত ১৩ বছরে কোস্ট গার্ডের জন্য বিভিন্ন আকারের ৭৭টি জাহাজ ও জলযান নির্মাণ ও সংযোজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড এবং খুলনা শিপইয়ার্ডে কোস্ট গার্ডের জন্য দু’টি ইনশোর প্যাট্রোল ভেসেল, একটি ফ্লোটিং ক্রেন, দু’টি টাগ বোট এবং ১৬টি বোট তৈরি করা হয়েছে। কোস্ট গার্ডের ভেসেল ও জাহাজসমুহ নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণর জন্য গজারিয়ায় একটি ডকইয়ার্ডও নির্মাণ করা হচ্ছে। নিজস্ব ইয়ার্ডে জাহাজ তৈরির সক্ষমতা আমাদের আত্মবিশ্বাসকে আরও সুদৃঢ় করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজের ক্ষেত্রে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমাদের ‘বে অব বেঙ্গল’। তাই এর যথাযথ নিরাপত্তা বিধান জরুরি এবং আমরা তা যথাযথভাবে করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা এবং সামুদ্রিক জলসীমার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখা, মৎস্য সম্পদ রক্ষা, দেশের সমুদ্র বন্দরের নিরাপত্তা বিধান, চোরাচালান ও মাদক বিরোধী অভিযান, ডাকাত দমনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় জনগণের জানমাল রক্ষায় কোস্ট গার্ডের ভূমিকা উত্তরোত্তর বাড়ছে। জাটকা নিধন রোধে এবং মা ইলিশ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের ভূমিকা প্রশংসনীয়। এ সময় উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার জন্য কোস্ট গার্ডকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

শেখ হাসিনা কোস্ট গার্ড সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা সবসময় দেশপ্রেম, সততা ও ঈমানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে কোস্ট গার্ডের সুনাম ও মর্যাদা সমুন্নত রাখবেন। দেশের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন বলে আমি আশা করি।
শেখ হাসিনা বলেন, এই বাহিনীর ধারাবাহিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এবং আপনাদের সার্বিক কল্যাণে প্রয়োজনে যা যা করার দরকার অবশ্যই আমাদের সরকার সব করে যাবে।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত