1404
Published on ফেব্রুয়ারি 8, 2022নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসনে জাপানের সমর্থন চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার বাংলাদেশ-জাপান কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও বার্তায় বন্ধুপ্রতীম দেশটির কাছে এ সমর্থন চান।
তিনি বলেন, “আমরা এই বাস্তুচ্যুত (রোহিঙ্গা) জনগণকে মিয়ানমারে তাদের পৈত্রিক বাড়িতে দ্রুত স্বেচ্ছায়, নিরাপদ এবং টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য জাপানের সমর্থন চাই।” মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের সঙ্কট সমাধানে উভয় দেশই অভিন্ন মত পোষণ করে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বিশ্ব শান্তি, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি, স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ ও জাপান বিশ্বস্ত অংশীদার এবং শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে উভয়েই সবসময় একে অপরকে সমর্থন করে কাজ করেছে।
কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকায় জাপানি দূতাবাস যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
স্বাধীনতা লাভের পরপরই ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জাপানের স্বীকৃতির পর থেকে দুই দেশের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় আবাসিক কূটনৈতিক মিশন খোলার জন্য প্রথম কয়েকটি দেশের মধ্যে জাপান ছিল।
তিনি বলেন, “আমাদের জনগণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় জাপান এবং সে দেশের জনগণ, বিশেষ করে স্কুল-ছাত্রদের মূল্যবান সমর্থন ও অবদানকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে।”
তিনি বলেন, পারস্পরিক আস্থা, শ্রদ্ধা, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতাই বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তি। ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাপানে ঐতিহাসিক সফরের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এটি একটি অবিচল ও দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছে।”
তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০১০, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে তার বাবার উত্তরাধিকার বহনের পাশাপাশি জাপানে এসব সফর ছিল তার জন্য একটি সম্মানের বিষয়।
শেখ হাসিনা বলেন, সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আমাদের এই বন্ধুত্ব গভীরতা ও মাত্রায় অনেক বিকশিত হওয়ায় আজ আমি আনন্দিত। আমাদের 'ব্যাপক অংশীদারিত্ব' এখন নিকট ভবিষ্যতে 'কৌশলগত অংশীদারিত্বে' উন্নীত হওয়ার জন্য প্রস্তুত।
তিনি এসময় জাপানের টেকসই অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সমর্থনের কথাও উল্লেখ করেন। বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে জাপানি বিনিয়োগ বাড়ায় আনন্দিত প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি আনন্দের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে জাপানি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশকে আকর্ষণীয় বলে মনে করছে এবং বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত রয়েছে।”
তিনি বলেন, ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের লোগোটি ‘বাংলাদেশ-জাপান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের’ মনের ভাবের প্রতীক। লোগোটি কোভিড -১৯ মহামারী সত্ত্বেও দুই দেশের মাইলফলক বছরটিকে অনেক অনুষ্ঠানের সঙ্গে যথাযথভাবে উদযাপন করার প্রতিফলন করে।
মহামারী মোকাবিলায় সহায়তার জন্য অবশ্যই জাপান সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানাতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আজ আমি যখন দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দেখছি, উন্নতির অনেক সুযোগ দেখছি। প্রকৃতপক্ষে, সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারস্পরিক উদ্যোগ অপরিহার্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত এবং জাতির পিতার সোনার বাংলা বা সোনার বাংলাদেশ হওয়ার চেষ্টা করছে। তাই আমাদের বিগত ৫০ বছরের ঈর্ষণীয় সহযোগিতা আগামী ৫০ বছরের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। পারস্পরিকভাবে লাভের জন্য বাংলাদেশ সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বন্ধু জাপানের সঙ্গে যুক্ত থাকতে দৃঢ় প্রত্যয়ী।
ঐতিহাসিক এ অনুষ্ঠানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে মিলে শেখ হাসিনা দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী এ উপলক্ষকে সামনে রেখে জাপানের সম্রাট ও সম্রাজ্ঞীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি সম্রাট ইমেরিটাস আকিহিতোর সঙ্গে সাক্ষাতের কথা স্মরণ করেন। ৮৮ বছর বয়সে দেশটির দীর্ঘতম জীবিত সম্রাট হওয়ার জন্য তাকে অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা।
খবরঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম