1015
Published on জানুয়ারি 4, 2022বাহালুল মজনুন চুন্নুঃ
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শচর্চার আঁতুড়ঘর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এই সংগঠনটির উত্থান ও বিকাশের প্রতিটি পরতে পরতে মিশে আছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়ে ওঠা এই সংগঠনটি যাত্রার শুরু থেকেই বাঙালি জাতীয়তাবোধ, মানবতাবোধ, দেশপ্রেমসহ সব মানবীয় গুণাবলির চর্চার কেন্দ্রবিন্দু। বঙ্গবন্ধুর দিকনিদের্শনায় পরিচালিত এই সংগঠনটি ঘুমন্ত বাঙালি জাতিকে অধিকারসচেতন করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েই কেবল ক্ষান্ত হয়নি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে এর প্রতিটি নেতাকর্মী নিজ জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে বাঙালিকে দীর্ঘ বন্দিত্বের শেকল থেকে মুক্তি করার জন্য, শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে বাঙালির আর্থ-সামাজিক মুক্তির জন্য স্বাধীনতার দীর্ঘ সংগ্রামে রাজপথ ও যুদ্ধের ময়দানকে মুখরিত করে তুলেছিল। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছিল। তাই তো, এই সংগঠনটি দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে থাকা এক অবিচ্ছেদ্য নাম, আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকা এক অমলিন ছাত্র সংগঠনের নাম। হে তারুণ্যে, জীবনের প্রত্যেক প্রবাহ/ অমৃতের স্পর্শ চায়, অন্ধকারময়/ ত্রিকালের কারাগৃহ ছিন্ন করি/উদ্দাম গতিতে বেদনা-বিদ্যুৎ-শিখা/ জ্বালাময় আত্মার আকাশে, ঊর্ধ্বমুখী/ আপনারে দগ্ধ করে প্রচ- বিস্ময়ে। সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার এই লাইনগুলোতে তারুণ্যের যে মাহাত্ম্য প্রকাশিত হয়েছে তা খুঁজে পাওয়া যায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে। তারুণ্যের উচ্ছলতায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এই দেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিটি আন্দোলনে রেখেছে বলিষ্ঠ ভূমিকা। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের গর্বিত অংশীদার এই ছাত্র সংগঠনটি। বাঙালি জাতির ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায় ও অর্জনে রয়েছে ছাত্রলীগের প্রত্যক্ষ ভূমিকা। তাই ছাত্রলীগ সম্পর্কে গর্ব করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস, ছাত্রলীগের ইতিহাস স্বাধীনতার ইতিহাস। এটাই হচ্ছে ছাত্রলীগের সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি, সবচেয়ে বড় অর্জন। এ দেশের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের গর্বিত অংশীদার এই ছাত্রলীগ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতি এই মূলনীতির চেতনায় অধ্যয়নের পাশাপাশি জাতি গঠনে অনন্যসাধারণ ভূমিকা রেখেছে নির্যাতিত-নিষ্পেষিত মানুষের মুখপাত্র হিসেবে বিবেচিত সংগঠন ছাত্রলীগ।
সাতচল্লিশের দেশভাগের পর মুসলিম লীগ সরকার জনবিরোধী কাজ করা শুরু করলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একঝাঁক তরুণ ছাত্রলীগের পতাকাতলে সমবেত হয়েছিল। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছিল ছাত্রলীগ শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি এই স্লোগানকে সামনে রেখে। সংগঠনটি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠনের এক বছর আগেই গঠন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বিশ্বাস করতেন, ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধতাই পারে সব অন্যায়-অবিচারকে রুখে দিয়ে শোষণ ও বঞ্চনাহীন সমাজ গড়তে। আর তাই তিনি গড়ে তুলেছিলেন ছাত্রলীগ। এই সংগঠনটির প্রথম আহ্বায়ক ছিলেন নাঈমউদ্দিন আহমেদ। ছাত্রলীগ সাংগঠনিকভাবে কার্যক্রম শুরু করলে সংগঠনটির সভাপতি মনোনীত হন দবিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন খালেক নেওয়াজ খান। তাদের নেতৃত্বেই বাঙালি জাতির ‘মহান ভাষা আন্দোলন’-এ সংগ্রামী যাত্রাপথের সূচনা হয়েছিল এই সংগঠনটির। তার পর থেকে সংগঠিত প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগ সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সফল হয়।
আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাবিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানসহ স্বাধিকারের সব আন্দোলন সংগ্রামে এই সংগঠনের নেতাকর্মীদের জীবনদান, জেল-জুলুম-কারাবরণ, নির্যাতন-নিপীড়ন ভোগের মধ্য দিয়েই উপলব্ধি করা যায়, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা নোয়ানোর নয়; তারা দুর্বার, দুর্বিনীত। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য ১৯৬৬ সালে যে ছয় দফা দাবি দিয়ে সারাদেশের মানুষকে এ সম্পর্কে সচেতন করার জন্য বাংলার আনাচে-কানাচে চষে বেড়িয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছিল বঙ্গবন্ধুর সহায়ক শক্তি। ১৯৬৯ সালে ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিল। ওই সময় তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বাংলার ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেন, যা ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের গতিকে ত্বরান্বিত করেছিল। সত্তরের নির্বাচনে তৎকালীন ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভ্যানগার্ড হিসেবে ছাত্রলীগ কাজ করত। সারা বাংলাদেশে পাকিস্তানের অপশাসনের বিরুদ্ধে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্বাচিত করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে ছাত্রলীগ। মুক্তি সংগ্রামে ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। উত্তাল মার্চে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজপথ কাঁপিয়ে তুলেছিল। ছাত্রলীগের নূরে আলম সিদ্দিকী, তোফায়েল আহমেদসহ তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতারা সারা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায়, উপজেলায়, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠন করার মধ্য দিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যে গৌরবময় অবদান রেখেছিলেন তা অতুলনীয়। মুজিববাহিনী, নিউক্লিয়াসসহ বিভিন্নভাবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নিজেদের জীবন বাজি রেখে। শহীদ হওয়া আটাশ হাজার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে এই সংগঠনের অবদান এর ইতিহাসকে দিয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য।
স্বাধীনতা-পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা’ গড়ার জন্য ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্র্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হলে সেই হত্যার বিরুদ্ধে গগনবিদারী প্রতিবাদ করেছিল তারই হাতে গড়া ছাত্রলীগ। পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নানা ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষাাপটে যখন বহুদাবিভক্ত হয়ে পড়েছিল, তখন এই ছাত্রলীগই হয়েছিল আওয়ামী লীগের মূল শক্তি। বর্তমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সভাপতি আর আমি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ১৯৭৮ সালে নির্বাচিত হয়ে কঠিন সেই দুঃসময়ে সারা বাংলাদেশের ছাত্রলীগকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলাম। যার প্রমাণ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন রাজপথে লাখ লাখ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর ঢল। খুনি মোশতাক, জিয়াউর রহমানের সরকার ও পরে স্বৈরাচার এরশাদের শাসনামলে জেল-জুলুম-হুলিয়ার শিকার হয়ে অগণিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে কারাবরণ, দেশত্যাগ, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে। দেশের মানুষের অধিকার প্রশ্নে আন্দোলন করতে গিয়ে সামরিক সরকারের পেটুয়া পুলিশ বাহিনী ও তার সমর্থক সন্ত্রাসীদের আঘাতে-আঘাতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের রক্তে দেশের রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। নির্যাতন-নিপীড়ন, জেল-জুলুমের পরোয়া না করেই ছাত্রলীগ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে, গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলনে, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সরকারের জনবিরোধী কাজের প্রতিবাদী আন্দোলনে রাজপথ কাঁপিয়েছে।
এক কথায় এই দেশের ইতিহাসের প্রতিটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সঙ্গে সংযুক্ত আছে ছাত্রলীগ। আমি নিজেকে ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে খুবই ধন্য মনে করতাম। রাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছিল এই সংগঠনের কর্মী হিসেবে। যৌবনের পুরোটা সময় ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে নানা আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি, নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করেছি। জীবনের যত আনন্দ-বেদনার কাব্য রচিত হয়েছে তার বেশিরভাগই হয়েছে ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে। তাই এই সংগঠনটির প্রতি ঠিক আগের মতো এখনো ভালোলাগা, ভালোবাসা হৃদয়ে অনুভব করি। কৈশোরে যখন আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি করতাম, আমার আশপাশের মানুষজন আমাকে যে সম্মান-শ্রদ্ধা-ভালোবাসা দিয়েছিল তা আমি এখনো অনুভব করি। অথচ আজ সেই ছাত্রলীগের ঐতিহ্য, সম্মান হয়ে গেছে অনেকটাই ম্লান। এটা ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের জন্য যে কতটা কষ্টের তা বলে বা লিখে কোনোভাবেই বোঝানো যাবে না। যে ছাত্রলীগের জন্য নিজেদের জীবন বাজি রেখে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি, ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করে রাজপথে থেকেছি, সেই ছাত্রলীগকে যখন অন্যরা অবজ্ঞা করে, ছাত্রলীগকে নিয়ে কটুকথা বলে তখন বুকে মনে হয় শেল বিঁধে।
একটা সময় যে ছাত্রলীগ নিয়ে সবাই গর্ব করত, সেই ছাত্রলীগের নামে পত্রিকার পাতায় নেতিবাচক শিরোনাম লেখা হচ্ছে। ধূসর থেকে ধূসরতর হচ্ছে ছাত্রলীগের ঐতিহ্য, খসে পড়ছে গৌরবের পালক। জনমনে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- সেই আদর্শবাদী ছাত্রলীগ এখন কোথায়? কেন হারাল ঐতিহ্য? ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কেনই বা একের পর এক কলঙ্কিত ঘটনার জন্ম দিচ্ছেন? কেন বারবার বেপরোয়া, বেসামাল ও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছেন তারা? এর উত্তর একটাই। সেটা হচ্ছে আজকের ছাত্রলীগের অনেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করতে পারছে না। তারা বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ^াস করি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পক্ষে কোনো ধরনের নির্যাতন-নিপীড়নমূলক কাজ করা সম্ভব নয়। ছাত্রলীগের মধ্যে আগাছা, পরগাছা ঢুকে গেছে। ছদ্মবেশী অনেকেই ছাত্রলীগের কর্মী হয়ে অনেক রকম কুকর্মের সঙ্গে জড়িত হয়ে গেছে, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করে না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। আদর্শ না থাকলে কুকর্ম করাটাই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। অনাহূত ছদ্মবেশী আগাছারা সংগঠনে ঢুকে নানা কুকর্ম করে সংগঠনটির গায়ে কালিমা লেপন করে চলছে। এদের থেকে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটির নেতাকর্মীকে সতর্ক থাকতে হবে। নতুন কর্মীকে সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করার আগে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে। না হলে ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে ছদ্মবেশী ভিন্নমতাবলম্বীরা নানা কুকর্ম করে এই সংগঠনটিকে আরও বিতর্কিত করে তুলবে। অবশ্য অনেক সময় সাম্প্রদায়িক শক্তি ও ষড়যন্ত্রকারীদের অপপ্রচারের শিকারও হচ্ছে ছাত্রলীগ।
অনেককেই বলতে শুনি, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বই পড়ে না। কেবল ফেসবুকিং, আড্ডা আর নেতাগিরি করে বেড়ায়। ছাত্রলীগকে বই পড়ার প্রতি অধিক মনোযোগী হতে হবে। তাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের খুঁটিনাটি সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের কর্মীদের অধ্যয়নের প্রতি উৎসাহিত করতে শীর্ষনেতাদেরই প্রেরণামূলক নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত পাঠচক্রের আয়োজন করে সেখানে যুগে যুগে সংগঠিত বিভিন্ন বিপ্লব ও বিপ্লবীদের জীবনী, বিভিন্ন দেশের দেশনায়কদের জীবনী পড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর সমগ্র কর্ম ও জীবন সম্পর্কে যেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পুরো ধারণা নিতে পারে সে রকম হাজারো বই আছে যা পড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যদি বঙ্গবন্ধুকে সম্পূর্ণরূপে জানতে পারে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনার কথা জানতে ও বুঝতে পারে এবং হৃদয়ে ধারণ করতে পারে তবে ছাত্রলীগের হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসবে বলে আমি বিশ^াস করি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ, স্বপ্ন দেখছে উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়ক শক্তি হিসেবে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যার দেশপ্রেম, আদর্শ উপলব্ধি করাই কেবল নয়, হৃদয়ে ধারণ করে সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে এবং গড়তে হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা।
লেখক: সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ
সৌজন্যেঃ আমাদের সময়
(মতামত লেখকের নিজস্ব। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)