করোনাকালে মানবতার সেবায় নিয়োজিত ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

1461

Published on নভেম্বর 30, 2021
  • Details Image

তাজিন মাবুদ ইমনঃ

এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।  বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় বলতেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস’।  বাংলা, বাঙালি, স্বাধীনতা ও স্বাধিকার অর্জনের লক্ষে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের অ্যাসেম্বলি হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার আগে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার পর সর্বপ্রথম মাতৃভাষা বাংলার জন্য সংগ্রাম করেছিল।  আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ভাষা আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জল ভূমিকা ছিল।  বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছিল অনেককে।  তারপর আমরা আমাদের ভাষা হিসেবে বাংলাকে পেয়েছি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী শহীদ হয়। জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ ও যুক্ত করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। দেশের প্রতিটা ন্যায় আন্দোলন এবং সংগ্রামে ছাত্রলীগ এর ভূমিকা ছিল যা আমরা কখন ও অস্বীকার করতে পারব না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

প্রথম যখন করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে শনাক্ত হয় তখন থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর প্রতিটা নেতা কর্মী মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, এবং সচেতনমূলক লিফলেট বিতরণ করেছে। নিজেদের তৈরী হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেশের মানুষের কাছে বিতরন করেছে। যখন করোনা উপসর্গ হলে কি করা উচিত এবং অন্যান্য রোগ হলে ডাক্তার এর চেম্বারে মানুষ যেতে পারছে না। তখন সব মেডিকেল ছাত্রলীগ এর নেতৃত্বে টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া হয়। অসহায়, দরিদ্র, এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের মাঝে স্বেচ্ছাসেবক হয়ে ত্রাণ পৌছায় দেয়। যখন ছাত্ররা মেস ভাড়া দিতে পারছিলো না মালিকরা তাদের আসবাবপত্র, সার্টিফিকেট ফেলে দেয়। এই মালিকদের বিরুদ্ধে প্রথম স্বোচ্চার হয়ে কাজ করছে এবং মেস ভাড়া মওকুপ করার জন্য মালিক দের অনুরোধ জানিয়েছে। ২য় ধাপে করোনা এর প্রকোপ আবার যখন বাড়তে থাকে। যখন শুরু হয় লকডাউন। আবার মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।ফ্রি এম্বুলেন্স এর ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। রমজান মাসে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় দরিদ্র এবং পথশিশুদের মাঝে ইফতার এবং সেহেরী এর বিতরন করছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। পুরো রমজান মাস এই ইফতার-সেহেরী বিতরন অব্যাহত ছিল।

এই মহামারী তে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর কিছু উদ্যোগ ছিল প্রশংসনীয়।

করোনায় মৃতদের লাশ দাফন: যখন করোনায় আক্রান্ত মৃতদের দেহ দাফন করার জন্য কেউ এগিয়ে আসছিল না ভয়ে, আপনজনের লাশ নিতেও অস্বীকৃতি জানাচ্ছিলো স্বজনরা; তখন ধর্মীয় অনুশাসন মেনে মৃতদের দাফনের কাজ করেছে ছাত্রলীগ। জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনায় আক্রান্ত প্রায় শতাধিক মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।  করোনা মহামারিতে ‘দাফন টিম’ গঠন করা ছাত্রলীগের অন্যতম সাহসী উদ্যোগ।

হ্যালো ছাত্রলীগ সেবা: দেশের বিভিন্ন স্থানে এই সেবার মাধ্যমে ২ লাখ ৯২ হাজার মানুষ সহায়তা পেয়েছে। 

জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা: দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর যখন অক্সিজেন সিলিন্ডার সঙ্কট ও দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় সেই সময়ে মুমূর্ষু রোগীদের জন্য বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবার উদ্যোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের তিন নেতা। তাদের উদ্যোগে এখন পর্যন্ত প্রায় দশ হাজার মানুষ অক্সিজেন সেবা পেয়েছে। ২০২০ সালের ২৫ জুন থেকে তারা ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’ নামে বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার সেবা চালু করে।

বঙ্গমাতা অক্সিজেন সেবা: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য সারা দেশে বিনামূল্যে ‘বঙ্গমাতা অক্সিজেন সেবা’ চালু করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

করোনাকালে অসহায় মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য সহায়তায় দিয়েছে ছাত্রলীগ: করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ভুগছে পুরো দেশ।  বন্ধ হয়ে গেছে অনেক মানুষের আয়-রোজগার। এর মধ্যে অন্যান্য এলাকার মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও এর আশপাশের এলাকার ছিন্নমূল মানুষও সংকটাপন্ন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে। একদিকে করোনার ভয়, অন্যদিকে ক্ষুধার জ্বালা।  আর এর মধ্যেই এমন শত মানুষের খাদ্য জোগানোর ভার কাঁধে নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদস্য ও ছাত্রলীগ নেতা তানভীর হাসান সৈকত। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির শুরু থেকে এ কাজ করে গিয়েছেন তরুণ এই ছাত্রনেতা। দুর্দশাপীড়িত মানুষকে সহায়তার জন্য তানভীরকে জাতিসংঘের ‘বাস্তব জীবনের নায়ক’ (রিয়েল লাইফ হিরো) হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

কৃষকের ধান কেটে ঘরে পৌঁছে দেয় ছাত্রলীগ: ২০২০ সালের ১৮ই এপ্রিল চলমান করোনা পরিস্থিতিতে এক প্রকার অচলবস্থা বিরাজ করছে দেশে।  এরই মধ্যে কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলের হাফেজ আহমদের ক্ষেতের ধান পেকেছে।  ধান কাটার লোক না পেয়ে দুশ্চিন্তাই ভুগছিলেন এই কৃষক। খবর পেয়ে কৃষক হাফেজের ধান কেটে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের ৩০ নেতাকর্মী। এর পর সারা বাংলাদেশে ছাত্রলীগ এর নেতা কর্মীরা কৃষকদের ধান কেটে ঘরে পৌঁছে দেয় ছাত্রলীগ।

হ্যালো ছাত্রলীগ অ্যাম্বুলেন্স : করোনা মহামারির এসময়ে রোগীর স্বজনদের পাশে দাঁড়াতে বান্দরবানে রোগী বহনের জন্য ‘হ্যালো ছাত্রলীগ’ অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করেছিল বান্দরবান জেলা ছাত্রলীগ।

এইভাবে বাংলাদেশের প্রতিটা সংগ্রাম-মহামারীতে কাজ করে যাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এর নেতৃত্বে এই সংগঠন আর ও এগিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।

লেখক: কর্মী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগ।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত