দূর শিক্ষণ ও অনলাইন শিক্ষাকে সর্বজনীন ঘোষণা করুনঃ ইউনেস্কো সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

1743

Published on নভেম্বর 12, 2021
  • Details Image
  • Details Image

কোভিড মহামারীর এই সময়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম যে ‘নতুন স্বাভাবিকতায়’ পরিণত হয়েছে, সে কথা তুলে ধরে দূর শিক্ষণ ও অনলাইন শিক্ষায় সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার প্যারিসে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা-ইউনেস্কোর ৪১তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের এ আহ্বান আসে।

তিনি বলেন, “মহামারীর এই সময়ে সম্পদ আর প্রযুক্তির অভাবের কারণে স্কুলে যাওয়ার হার, সাক্ষরতার হার এবং তরুণ ও বয়স্কদের শিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের বহু দশকের কষ্টার্জিত অর্জন নষ্ট হয়েছে। এই মহান ফোরামে আমি আহ্বান জানাতে চাই, দূর শিক্ষণ ও অনলাইন শিক্ষাকে সর্বজনীন ঘোষণা করুন।”

আর এ ক্ষেত্রে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে সরকার, বেসরকারি খাত এবং অংশীজনদের নিয়ে কাজ করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে ইউনেস্কোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মহামারীর দুই বছরে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে বড় ধরনের ক্ষত তৈরি হয়েছে, সে কথাও বক্তৃতায় তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

মহামারীর কারণে বহু দেশে আংশিক বা পুরোপুরিভাবে স্কুল বন্ধ রাখতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। আর এর প্রভাব বিশ্বের অর্ধেক শিক্ষার্থীর ওপর পড়েছে বলে তথ্য দিয়েছে ইউনেস্কো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সঙ্কটের মধ্যেও শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রমই ‘নতুন স্বাভাবিকতায়’ পরিণত হয়েছে। একইসঙ্গে তা একটি নতুন বৈষম্যও প্রকাশ্যে এনেছে।

ডিজিটাইজেশন অনেক সেবাপ্রাপ্তি এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহ সহজ করেছে, কিন্তু সেই সঙ্গে ডিজিটাল মাধ্যমের অপব্যহারের কারণে ক্ষতিকর কনটেন্ট ঘৃণা ছড়ানোর মত ঘটনায় উদ্বেগও যে বাড়ছে, সে কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেন।

আর তাতে করে সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ইউনেস্কোর মত বিশ্ব সংস্থাগুলোর এসব বিষয় নিয়েও কাজ করা উচিত।”

জলবায়ু সঙ্কেটের প্রসঙ্গ ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এটা কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়,বিশ্বের বহু দেশের জন্যই একটি ‘প্রাণঘাতী বাস্তবতা’।

“আমরা ইউনেস্কোকে জলবায়ু শিক্ষার উপর আরও বেশি জোর দেওয়ার এবং জলবায়ু সঙ্কটের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে বৃহৎ পরিসরে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে প্রযুক্তি সহায়তা দিয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করার আহ্বান জানাই।”

শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি দ্রুততর হওয়ায় সমুদ্রের পরিবেশ প্রভাবিত হচ্ছে। সেজন্য জরুরি বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রয়োজন।

উপকূলীয় এবং ইউনেস্কোর ইন্টারগভর্নমেন্টাল ওশানোগ্রাফিক কমিশনের (আইসিসি) সম্মুখসারির দেশ হিসাবে বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব সমাধানের ব্যবস্থা নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আমাদের অঞ্চলে আইসিসির শক্তিশালী উপস্থিতি দেখতে চাই।”

তিনি বলেন, শিক্ষা হল একটি মৌলিক মানবাধিকার, আর মানব সমাজের উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষাই হল মূল ভিত্তি। আর সেজন্য বাংলাদেশে যেসব উদ্যোগ সরকার নিয়েছে, তার একটি বিবরণও তিনি বক্তৃতায় তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় ইউনেস্কোকে বাংলাদেশের ‘সত্যিকারের বন্ধু’ হিসেবে বর্ণনা করেন। বাংলাদেশের শহীদ দিবস একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে ইউনেস্কোর ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ যুক্ত করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের জীবনমানের উন্নতিতে কতটা ভূমিকা রাখা গেল, তার ওপরই ইউনেস্কোর সাফল্য নির্ভর করছে।

“আমরা যখন একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, তখন একটি শক্তিশালী, গতিশীল, উদ্ভাবনী বহুপক্ষীয় সংস্থার প্রয়োজনীয়তা আগের চেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে। শান্তির সুরক্ষা বলয় পড়তে বাংলাদেশ ইউনেস্কোর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যেতে প্রস্তুত।”

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত