1128
Published on নভেম্বর 11, 2021যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেছেন, দেশের অবকাঠামো ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ হিসেবে যুবলীগের ভূমিকা রাখা দরকার। প্রয়োজনের দলের মধ্যেও যেকোনো দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা, কর্মচিত্র প্রদর্শনী ও তৃতীয় ধাপে আশ্রয় প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সংগঠনটির সাবেক চেয়ারম্যান আমির হোসেন আমু। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংগঠনটির আরেক সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যার জনপ্রিয়তা এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কারণে ১৩ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করছি। তার নেতৃত্বে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবেও মর্যাদা পেয়েছি। এই নতুন বাস্তবতায় আমাদের দায়িত্ব ও ভূমিকা অনেক গুণ বেড়ে গেছে। ঐতিহাসিকভাবে যুবলীগ সবসময় বিভিন্ন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।’
এ বিষয়ে তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনসহ যুবলীগের অগণিত নেতাকর্মী যারা বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিজের জীবন আত্মহুতি দিয়েছেন তাদের স্মরণ করেন এবং বর্তমান প্রজন্মের যুবলীগকে সেই ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান। যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ পরশ বলেন, ‘দেশের অবকাঠামো ও উন্নয়নমূক প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ হিসেবে যুবলীগের ভূমিকা রাখা দরকার। প্রয়োজনে দলের মধ্যেও যেকোনো দুর্নীতির বিরুদ্ধ প্রতিবাদ করবে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।’
যুবলীগ বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এবং বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধু কন্যার সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সর্বদা আপসহীন দাবি করে তিনি বলেন, ‘পরিতাপের একটি জায়গা রয়েছে। পরিতাপের একটি বিষয়, দুর্দিনের অগণিত নেতাকর্মীরা এখনও অবহেলিত এবং নির্যাতিত হচ্ছে। কিছু অসাধু তথাকথিত নেতা ব্যক্তিস্বার্থে দলে অনুপ্রবেশকারীদের জায়গা দিয়ে আমাদের পরীক্ষিত এবং দুঃসময়ের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করছে। এটা সংগঠনের জন্য অপরিসীম ক্ষতিকর এর মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী-দুষ্কৃতিকারীরা পুনর্বাসিত হচ্ছে ও দলের ভিতরের ঢুকে আমাদের চরম ক্ষতিসাধন করছে।
তিনি বলেন, ‘যুবসমাজের উপর বঙ্গবন্ধুর ছিল অগাধ বিশ্বাস। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হচ্ছে- দেশপ্রেমভিত্তিক রাজনীতি, সততার রাজনীতি, ও শোষণ মুক্ত সমাজব্যবস্থা বিনিমার্ণঅ। আর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন হচ্ছে- অর্থনৈতিক মুক্তি তথা আত্মমর্যাদাশীল সুখী সমৃদ্ধ একটি বাংলাদেশ। আমি বিশ্বাস করি ন্যায়পরায়ণ এবং সমঅধিকারের ভিত্তিতে সমাজ ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে যুবলীগ ভূমিকা রাখবে।’
যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের সামনে আমাদের নেত্রী জ্বলন্ত উদাহরণ। যিনি চার যুগ ধরে সংগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীর অন্যতম সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আজ সর্বজনস্বীকৃত। তিনি সাফলতার কোনো শর্টকাট খোঁজেন নাই। খুঁজলে তার পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচারও তিনি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিচার আইনে করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি বিদেশি প্রভুদের সঙ্গে আপস করলে ২০০১ সালেও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে পারতেন। তিনি তা করেননি। আমাদের গর্ব আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে রাজনীতি করি।’
দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যুবলীগ নেতাকর্মীদের জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ পরশ বলেন, ‘আমার পিতা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণি অনেক স্বপ্ন নিয়ে এই সংগঠনটি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সৃষ্টি করেছিলেন। তিনিও চেয়েছিলেন একটা ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে সমাজ ব্যবস্থা গঠন হোক। যেই সমাজ ব্যবস্থা গঠনে বাংলার যুব সমাজ একাধারে কারিগর হিসাবে ভূমিকা রাখবে এবং একইসঙ্গে সমাজব্যবস্থার রক্ষক হিসেবেও ভূমিকা রাখবে।’
যুলীগ চেয়ারম্যানের দায়িত্বভার নিয়ে দেওয়া সেই বার্তার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ পরশ বলেন, ‘কাউকে কোনো অত্যাচার-নির্যাতন করা যাবে না। কারণ আমাদের নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সারাটা জীবন অত্যাচার আর শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। তাই তার বাংলাদেশে তার মানুষ নির্যাতিত হবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। এটা বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগও মেনে নিতে পারে না। তাই আমরা উগ্রবাদী মৌলবাদী শক্তিকে প্রতিহত করব। এবং যখনই এরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে তখনি তাদের ঘায়েল করতে হবে। এটা যেকোনো সভ্য সমাজের সকল নাগরিকের দায়িত্ব।’
বর্তমান প্রজন্ম এই সমাজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দ্বারা লালিত বিজ্ঞানভিত্তিক প্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।
সংগঠনটি ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ভোর ৬টায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করে। পরে সকাল সাড়ে ৮টায় ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা এবং সকাল সাড়ে ৯টায় বনানী কবরস্থানে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহিদ শেখ ফজলুল হক মনিসহ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নিহত সব শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতেহা পাঠ এবং মোনাজাত হয়। এছাড়া বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।