মানুষ কেন বিএনপিকে ভোট দেবে?

1133

Published on নভেম্বর 11, 2021
  • Details Image

সাদিকুর রহমান পরাগঃ

গণতন্ত্রে যে কোনো রাজনৈতিক দলের ভোট চাওয়ার অধিকার আছে। সেই হিসেবে বিএনপিও মানুষের কাছে ভোট চাইতে পারে। তাতে কোনো বাধা নাই। কেউ চাইলে বিএনপিকে ভোটও দিতে পারে। তাতেও কোনো বাধা নাই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে মানুষ কেন বিএনপিকে ভোট দেবে। আর এ প্রশ্নটি করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশন শেষে ঢাকায় আয়োজিত এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে আগামী নির্বাচনে সরকারপ্রধানের ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ প্রশ্নটি করেন।

গণতন্ত্রে নির্বাচন হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগণের রায় নিয়ে একটি দল নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সরকার গঠন করে। তারপর সেই মেয়াদ শেষে একটি নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে পরবর্তী মেয়াদের সরকার গঠিত হয়। এভাবেই জনরায়ের প্রতিফলনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র এগিয়ে চলে এবং জনগণের কাছে সরকার ও দলের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। যদিও বাংলাদেশের ৫০ বছরের অভিযাত্রায় বিভিন্ন সময় গণতন্ত্র বারবার ব্যাহত হয়েছে, মানুষের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা হয়েছে, তারপরও জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো বাংলাদেশও এই গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে।

জনগণের কাছে প্রদত্ত কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী অঙ্গীকারে জন-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন, সেই অঙ্গীকার পূরণে তাদের নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা, মানুষের জীবনযাত্রার সার্বিক উন্নয়ন, আইনের শাসন- এসব বিষয়সমূহ দেখে-বুঝেই মানুষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং নির্বাচনে ভোট প্রদান করে।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, বিএনপি কি তার কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জনগণের সেই আস্থা অর্জন করতে পেরেছে? মানুষ কেন বিএনপিকে ভোট দেবে এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিএনপির রাজনীতির অসার দিকটিই আবার সবার কাছে ভেসে ওঠে। তাই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের রেশ ধরে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির তুলনা করে দেখি মানুষ আদৌ কি বিএনপিকে ভোট দেবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের বিস্ময়কর রোল মডেল। তার ভিশনারি ও সাহসী নেতৃত্ব আজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ, মাদার অব হিউম্যানিটি, ভ্যাকসিন হিরোসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন উপাধিতে তাকে ভূষিত করা হচ্ছে।

পক্ষান্তরে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এতিমের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা এবং দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক জিয়া বিদেশে পলাতক। ফলে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনেও অংশ নিতে পারবে না।

সাজাপ্রাপ্ত এবং নেতৃত্ব শূন্য- এই বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এদেশের মানুষের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সংসদকে সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হয়েছে। পক্ষান্তরে বিএনপি মানুষের ওপর আস্থা হারিয়েছে। ফলে নির্বাচন ব্যবস্থায় তাদের বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার চেয়ে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার দিকেই তারা বেশি তৎপর।

নির্বাচনের ওপর বিশ্বাস হারিয়েছে – এই বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?

বিএনপি-জামাত আমলের ভঙ্গুর অর্থনীতি গত ১২ বছরে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। জাতীয় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৮.১৫ শতাংশ। মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ২,২২৭ মার্কিন ডলার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ৪৬ বিলিয়ন ডলার। সোয়া ৫ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নে শীর্ষ পাঁচ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। অথচ বিএনপি ক্ষমতায় থেকে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে ব্যর্থ হয়েছে। উপরন্তু বিএনপি আমলে বাংলাদেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে ব্যর্থ দুর্নীতিগ্রস্ত – এই বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ভারতের সঙ্গে ৬৮ বছরের অমীমাংসিত স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ১১১টি ছিটমহলের ১৭ হাজার ৮৫১ একর জায়গা বাংলাদেশের সীমানার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এবং ছিটমহলের মানুষ মুক্তি পেয়েছে অভিশপ্ত জীবন থেকে।
কিন্তু বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারা কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। কারণ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে তারা চেয়েছিল এ সমস্যাটি যেন জিইয়ে থাকে।

দেশের স্বার্থের চেয়ে দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়- এই বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?

সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার ৯৮ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা আমাদের সীমানায় যুক্ত হয়েছে। অথচ বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ- এই বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?

পদ্মাসেতুর প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ। আশা করা যাচ্ছে যে আগামী বছর এই সেতু চালু করা সম্ভব হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণেই এটি আজ সম্ভব হয়েছে। এই সেতু আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের, কারণ এটি নির্মিত হয়েছে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নের মাধ্যমে। এই সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের সক্ষমতা ও সামর্থ্য বিশ্বের কাছে প্রমাণ করতে পেরেছি। অথচ এই পদ্মাসেতু যেন নির্মিত না হতে পারে, সেজন্য বিএনপি শুরু থেকেই নানারকম অশুভ তৎপরতায় লিপ্ত ছিল। তাদের ষড়যন্ত্রে তাল মিলিয়ে বিশ্বব্যাংকও এই প্রকল্প থেকে তাদের প্রত্যাহার করে নেয়। এমনকি বেগম খালেদা জিয়া ঘোষণা দিয়েছিল যে এই সেতু কখনও নির্মিত হবে না।

দেশের স্বার্থবিরোধী – এই বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?

১৪৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে দেশের ৯৯.৭৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিএনপি আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল মাত্র ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। মানুষের কাছে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার পরিবর্তে তারা ব্যস্ত ছিল বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর দুর্নীতিতে।

বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত বাংলাদেশ চায় না – সেই বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?

আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছে। ১৭ কোটি ৮৬ লাখ মোবাইল ফোন গ্রাহক, ১২ কোটি ৫৪ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, ফাইভ-জি মোবাইল প্রযুক্তি চালু হতে যাচ্ছে, ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রায় ৬ হাজার ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, ইউনিয়নসমূহের মধ্যে অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ স্থাপন, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট থেকে ই-পাসপোর্ট, অনলাইনে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ-ইউটিলিটি বিল প্রদান-টিকিট ক্রয়, ই-টেন্ডার প্রবর্তন, স্কুলে স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা ২০১৮, জাতীয় টেলিকম নীতিমালা ২০১৮, মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি গাইডলাইন, সিগনিফিকেন্ট মার্কেট প্লেয়ার গাইডলাইন, কোয়ালিটি অব সার্ভিস গাইডলাইন, ই-কমার্স গাইড লাইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের কারণে ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মহাকাশ বিজ্ঞানের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। এই স্যাটেলাইট বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের সামর্থ্যকেই তুলে ধরেছে।

পক্ষান্তরে বিনামূল্যে সাবমেরিন ফাইবার অপটিক ক্যাবলে যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তথ্য পাচার হয়ে যাবে এই অজুহাতে বিএনপি সেই সুযোগ গ্রহণ করেনি। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের জন্য মোবাইল ফোন কুক্ষিগত করে রেখেছিল, যাতে সাধারণ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে না পারে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ চায় না – এই বিএনপিকে মানুষে কেন ভোট দেবে?

সবার জন্য শিক্ষা – এখন আর শুধুমাত্র কথার কথা নয়। বছরের প্রথম দিন প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই প্রদান, মেয়েদের জন্য বিনা বেতনে পড়ার সুবিধা, উপবৃত্তি প্রদান, নতুন নতুন বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ, প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের মাধ্যমে লক্ষাধিক শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করাসহ শিক্ষাক্ষেত্রে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে শতভাগ শিশু আজ স্কুলে যায়, কমে গেছে ঝরে পড়ার হার, বেড়েছে উচ্চশিক্ষার হার। এ পর্যন্ত প্রায় ২৬০ কোটি ৮৫ লাখ ৯১ হাজার ২৯০টি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।

আর বিএনপি জাতিকে শিক্ষাবিমুখ করতে আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে সারাদেশে অসংখ্য স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছিল। মাদকের বিস্তার ঘটিয়ে তরুণ ও যুবসমাজকে ধ্বংস করেছিল।

শিক্ষার আলোয় বিকশিত হতে দিতে চায় না – এই বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?

স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে এবং ৪৫ রকমের ওষুধ বিনামূলে দেওয়া হচ্ছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭২.৮ বছরে উন্নীত হয়েছে। মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার কমেছে। ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশে উৎপাদিত হয় এবং ১৫০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

বিএনপি আমলে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দিয়ে মানুষকে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়।

মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ – এই বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?

বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত হয়েছে। বিশ্বে ধান উৎপাদনে তৃতীয়, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে তৃতীয়, শাক-সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম, আলু উৎপাদনে সপ্তম, চা উৎপাদনে চতুর্থ, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম এবং ইলিশ উৎপাদনে প্রথম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

বিএনপি আমলে বাংলাদেশ এ ধরনের অবস্থানে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়। উন্নয়নের এই ধারাকে বিঘ্নিত করতে তারা বিভিন্ন রকমের অপকৌশল ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে চেয়েছে।

বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার বিরোধী অপশক্তি * এই বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?

বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার, ঘরে ফেরা কার্যক্রম, দুস্থ ভাতাসহ বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমানকে নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় ৭৫ লাখ মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আনা হয়েছে।

আর বিএনপি ক্ষমতায় এসে মানুষের কল্যাণ না করে অকল্যাণ ডেকে এনেছিল সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কুখ্যাত রাজাকার আলী আহসান মুজাহিদের ওপর ন্যস্ত করে। বিরোধী দলে থেকেও তারা মানুষের কল্যাণ চায় না। তাই সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে তারা অবলীলায় দেশজুড়ে আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে।

মানুষের জন্য অকল্যাণকর – এই বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?

বর্তমান সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে। যে কোনো মূল্যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন এই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। জাতিসংঘের ৭১তম অধিবেশনে জঙ্গিবাদ দমনে বর্তমান সরকারের কর্মকা- প্রশংসিত হয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৯৩টি জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ৫৮ জঙ্গি নিহত হয়েছে এবং ২৬৫ জন গ্রেফতার হয়েছে। পক্ষান্তরে বিএনপি-জামাত ক্ষমতা থেকে জঙ্গিবাদকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছে। হাওয়া ভবনের নীলনকশা অনুসারে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ৬৩টি জেলায় একযোগে ৫৫০টি বোমা হামলা, বাংলাভাই ও জেএমবির উত্থানসহ সারাদেশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছিল।

জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষক – এই বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?

আওয়ামী লীগ আইনের শাসনে বিশ্বাস করে। তাই দেশের প্রচলিত আইনে বিচারকার্য পরিচালনা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের বিচার হয়েছে। বিচারের রায় ফাঁসির রায় কার্যকরের মাধ্যমে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।

কিন্তু বিএনপি জাতির পিতার হত্যাকারীদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল। বিচারের পথ রুদ্ধ করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, জাতির পিতার খুনিদের তারা পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে নিয়োগ দিয়েছিল।

খুনিদের পৃষ্ঠপোষক – এই বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ম্যান্ডেট নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ৩৬টি মামলায় ৯২ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন হয়েছে। ৬৬৭টি মামলা নিষ্পত্তির জন্য জমা আছে। আসামিদের মধ্যে পাঁচজন বিচারাধীন অবস্থায় মারা গেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে ৫৩ জনকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ, একজনকে যাবজ্জীবন এবং একজনকে ৯০ বছরের কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। কুখ্যাত নরঘাতক মতিউর রহমান নিজামী, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, সাকা চৌধুরী, আলী আহসান মুজাহিদদের ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ গ্লানিমুক্ত হয়েছে। পক্ষান্তরে বিএনপি ক্ষমতায় এসে এসব চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসিত এবং পুরস্কৃত করেছে। গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব দিয়েছে, জামাতের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজনীতি করেছে, নিজামী ও মুজাহিদদের মন্ত্রী বানিয়েছে। এখানেই তারা থেমে ছিল না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে তারা দেশে এবং বিদেশে মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছে, এমনকি বিচার বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির লক্ষ্যে লবিস্ট পর্যন্ত নিয়োগ করেছে।

যুদ্ধাপরাধীদের দোসর – এই বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে?

বিএনপির রাজনীতি এবং তাদের কর্মকা- পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে তাদের ভোট দেওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ তারা তো মানুষের রাজনীতি করে না – মানুষের জন্য রাজনীতি করে না। তাদের রাজনীতি হচ্ছে লুটপাট আর সন্ত্রাসের রাজনীতি। তাদের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে সবকিছু গোল্লায় যাক, তাদের আখের যেন ঠিক থাকে। দেশ ও মানুষ তাদের কাছে অত্যন্ত গৌণ।

তাই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত বক্তব্যের অংশবিশেষ দিয়েই এই লেখাটি শেষ করছি, “ওদেরকে ভোট দেবে কে, সেইটা আগে জিজ্ঞাসা করেন। আমি সব সাংবাদিকদের জিজ্ঞেস করি যে আপনারা নিজেদের কাছে, বিবেকের কাছে জিজ্ঞাসা করেন। কারা, কেন, কী কারণে, কোন সুখের স্বপ্নে বা কোন আশার আলো দেখে বিএনপিকে বা অন্যদের ভোট দেবে? সেটা আমাকে একটু বলেন। শুনি একটু, জেনে রাখি।”

লেখক: সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, উত্তরণ

(মতামত লেখকের নিজস্ব। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত