1743
Published on আগস্ট 31, 2021মোরশেদুল আলমঃ
বঙ্গবন্ধু ছাড়া যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতা অসম্ভব ছিল, ঠিক তেমনি বঙ্গমাতা ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অসম্পূর্ণ। ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শেখ জহিরুল হক এবং মাতা হোসনে আরা বেগম। রেণু ছিল তাঁর ডাকনাম। মাত্র তিন বছর বয়সে পিতা এবং পাঁচ বছর বয়সে মাতাকে হারান তিনি। পিতামহ শেখ আবুল কাশেম তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে বিয়ে দেন।
বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতা ও জাতির পিতা হয়ে ওঠার পেছনে বঙ্গমাতার অবদান ছিল পুরোপুরি। তিনি হয়তো স্বামীর কারাসঙ্গী ছিলেন না, তবে বাঙালি জাতির মুক্তির আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর আমৃত্যু সুখ-দুঃখের সাথী ও অনুপ্রেরণাদানকারী ছিলেন। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ও মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন বঙ্গবন্ধু; এর পেছনে অনুঘটক হিসেবে ভূমিকা পালন করে গেছেন বঙ্গমাতা। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা বলেন, “বঙ্গবন্ধুর গোটা জীবনের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা অর্জন এবং তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি। এই লক্ষ্য অর্জনে আমার মায়ের অনুপ্রেরণা অনুঘটকের ভূমিকা রেখেছে।” বঙ্গবন্ধুর সর্বাধিক জটিল, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে বঙ্গমাতা নির্ভরযোগ্য পরামর্শদাতা হিসেবে আবির্ভূত হতেন। তিনি একদিকে সংসার সামলেছেন, অন্যদিকে রাজনৈতিক জীবনে অনেক জটিল পরিস্থিতিতে স্বামীর পাশে থেকে সৎ পরামর্শ ও সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। সাংবাদিক ও লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী স্মৃতিতে বঙ্গবন্ধু পত্নী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রবন্ধে লিখেছেন, “একদিন ৩২ নম্বরে এই লাইব্রেরি কক্ষে বঙ্গবন্ধু ভাবিকে দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘একজন নারী ইচ্ছে করলে আমার জীবনটা পাল্টে দিতে পারতেন’। আর জবাবে আমি বলেছিলাম, “তিনি যদি আপনার জীবন পাল্টে দিতেন, তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাসও সেদিন পাল্টে যেতো। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে একদিন যেমন শেখ মুজিবের প্রকৃত মূল্যায়ন হবে, তেমনি হবে মুজিবের পত্নী বেগম ফজিলাতুন্নেছারও। তাঁকে ছাড়া বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাস রবে অসম্পূর্ণ।” বাঙালি জাতির জীবনে তিনি এক অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। বঙ্গবন্ধুকে আত্মজীবনী লেখার জন্য তিনিই উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু যখন কলকাতা থেকে বিএ পরীক্ষা দিচ্ছিলেন, তখন তিনি সশরীরে উপস্থিত হয়ে স্বামীকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন।
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা ছিলেন মানবচেতনার কণ্ঠস্বর। গণমানুষের পক্ষের শক্তি। তিনি ছিলেন একজন শাশ্বত নারী, সাধারণের বেশে অসাধারণ, গৃহিণী হয়েও যিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। অলি আহাদ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা সম্বন্ধে বলেন, “তাঁর ত্যাগ-তিতিক্ষা-প্রজ্ঞা আর কষ্টসহিষ্ণুতা অতুলনীয়। রাজনৈতিক কারণে মুজিব ভাই বছরের পর বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। কারাগারের বাইরের জীবনেও তিনি ছিলেন আন্দোলন, সংগ্রাম আর সংগঠন নিয়ে ব্যাপৃত। অন্যদিকে ভাবী সংসার চালানো, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া থেকে শুরু করে দেশের রাজনীতির খোঁজখবর রাখতেন। প্রয়োজনে উপদেশ দিতেন, বুদ্ধি দিতেন। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে তিনি মুষড়ে পড়তেন না, সাহস হারাতেন না। বুদ্ধিমতী ও সাহসী এই মহীয়সী নারী নেপথ্যে থেকে এদেশের রাজনীতিতে অনেক অবদান রেখেছেন। অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। অনেক কষ্ট স্বীকার করেছেন।”
বঙ্গমাতার মধ্যে প্রচণ্ড দৃঢ়তা ও দূরদর্শিতা ছিল যা তিনি পারিবারিক জীবন ও বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি স্তরে প্রমাণ করে গেছেন। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সংগ্রাম, আন্দোলন ও কারাজীবনে অনুকরণীয় ত্যাগী নারী হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। ড. ওয়াজেদ মিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ গ্রন্থে ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চের দুপুরের কথা লিখেছেন : “...শাশুড়ি বঙ্গবন্ধুকে বললেন, এতদিন ধরে যে আলাপ-আলোচনা করলে, তার ফলাফল কী হলো কিছু তো বলছ না। তবে বলে রাখি, তুমি যদি ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সমঝোতা করো, তবে একদিকে ইয়াহিয়া খানের সামরিক বাহিনী সুবিধামতো সময়ে তোমাকে হত্যা করবে, অন্যদিকে এদেশের জনগণও তোমার ওপর ভীষণ ক্ষুদ্ধ হবে।”
বঙ্গমাতা পারিবারিক জীবনে বঙ্গবন্ধুর সুখ-দুঃখের ভাগীদার যেমন ছিলেন, তেমনি রাজনৈতিক জীবনে ছিলেন তাঁর আদর্শের ‘প্রেরণাদাত্রী বিজয়লক্ষèী নারী’। তাঁর ধীশক্তি ও রাজনৈতিক প্রতিভা লক্ষণীয়। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৬ আগস্ট প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের ডাক দেয়ার ফলে কলকাতা, বিহার ও নোয়াখালীতে মারাত্মক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এ সময় তাঁকে বিহারে যেতে বলেন। কিন্তু এর কিছুদিন পূর্বে বঙ্গবন্ধু দম্পতির একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে মারা যায়। এমতাবস্থায় স্ত্রীর পাশে থাকা বঙ্গবন্ধুর জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নিকট তাঁর দেশের মানুষও প্রিয় ছিল। তাই সোহরাওয়ার্দীকে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমি আমার ভলান্টিয়ার বাহিনী নিয়ে বিহারে যেতে প্রস্তুত।’ সোহরাওয়ার্দী তখন বিস্মিত হয়ে বলেছিলেন, ‘তুমি এ ব্যাপারে রেণুর সঙ্গে পরামর্শ করেছ?’ বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমি তার চিঠি পেয়েছি লিডার। সে লিখেছে, তুমি নিশ্চিন্ত মনে বিহারে যাও। আমার জন্য ভেবো না’। সোহরাওয়ার্দী তখন বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, ‘গঁলরন, ংযব রং ধ াবৎু ঢ়ৎবপরড়ঁং মরভঃ ভৎড়স এড়ফ. উড়হ’ঃ হবমষবপঃ যবৎ ঢ়ষবধংব.’
বঙ্গবন্ধু যখনই গ্রেপ্তার হতেন, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অবিচল মুখে কাপড় বিছানা বালিশ গুছিয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করতেন। বঙ্গমাতা অসংখ্যবার এ ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন। এই সময়গুলোতে তিনি অত্যন্ত ধৈর্য ও দৃঢ়তার সাথে সংসারের ভার কাঁধে নিয়ে ছেলেমেয়েদের বড় করে তোলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনে বেগম ফজিলাতুন্নেছার ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেন, “আমার জীবনেও আমি দেখেছি যে, গুলির সামনে আমি এগিয়ে গেলেও কোনোদিন আমার স্ত্রী বাধা দেয় নাই। এমনও দেখেছি যে, অনেকবার আমার জীবনের ১০/১১ বছর আমি জেল খেটেছি। জীবনে কোনোদিন মুুখ কালা কিংবা আমার উপর প্রতিবাদ করে নাই। তাহলে বোধহয় জীবনে অনেক বাধা আমার আসত। অনেক সময় আমি দেখেছি যে, অমি যখন জেলে চলে গেছি আমি এক আনা পয়সাও দিয়ে যেতে পারি নাই আমার ছেলেমেয়েদের কাছে। আমার সংগ্রামে তার দান যথেষ্ট রয়েছে।”
বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষের মুক্তির জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে পাকিস্তান সরকারের দ্বারা বারবার নিগৃহীত হয়েছেন। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনামলের অধিকাংশ সময়ই কারাগারে কাটিয়েছেন। বঙ্গমাতার চরিত্র ছিল খুবই কঠিন ও অনমনীয়। জীবনে অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেছেন। কিন্তু স্বামীকে প্রলোভনের কাছে মাথা নত করতে দেননি। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে বলেন, “বঙ্গবন্ধু জীবনের সব থেকে সুন্দর সময়গুলো কারান্তরালে কাটিয়েছেন বছরের পর বছর। তাঁর অবর্তমানে মামলা পরিচালনার ব্যবস্থা করা, দলকে সংগঠিত করা, আন্দোলন পরিচালনা করা, প্রতিটি কাজে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের বলিষ্ঠ সংগঠক ছিলেন নেপথ্যে থেকে। তাঁর স্মরণশক্তি প্রখর ছিল, আন্দোলন চলাকালে প্রতিটি ঘটনা জেলখানায় সাক্ষাৎকারের সময় বঙ্গবন্ধুকে জানাতেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশ নিয়ে আসতেন। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে সে নির্দেশ জানাতেন। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার চোখ বাঁচিয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেন।” ছয়দফা আন্দোলন সফল করার পেছনে বঙ্গমাতার অবদান ছিল অপরিসীম। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, “কেউ কি জানে, ছয়দফা আন্দোলনের সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলোতে আপনি স্বামীকে কতটা সাহস যুগিয়েছেন? বোরকায় শরীর ঢেকে তাঁর ভেতরে ছয় দফার লিফলেট লুকিয়ে ঢাকা শহরের ঘরে ঘরে বিতরণ করেছেন?”
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে ভীত হয়ে ইয়াহিয়া খান রাওয়ালপিন্ডিতে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে যোগ দেয়ার জন্য বলেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু প্যারোলে মুক্ত হয়ে গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান। তবে এ সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে বঙ্গমাতার ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর কড়া নির্দেশ, ‘জনগণ তোমার সাথে আছে। তুমি কিছুতেই প্যারোলে মুক্তি নেবে না। তোমাকে বীরের বেশে মাথা উঁচু করে বেরিয়ে আসতে হবে।’ ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দিতে যাওয়ার পূর্বে তিনি স্বামীকে শুধু বলেছিলেন, ‘তোমার সামনে জনগণ, পিছনে গুলি; তোমার হৃদয় যা চাইবে, তুমি তাই বলবে আজ।’
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত ১১টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু বাড়িতে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ-আলোচনা করেন। বঙ্গমাতা এসময় নিজে না খেয়ে পরিবারের সবাইকে রাতের খাবার পরিবেশন করেছিলেন। ২৫ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানে তিনি বঙ্গবন্ধুকে উৎসাহিত করেছিলেন। সেই রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেলে তিনি ছেলেমেয়েদের নিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় লুকিয়ে দিন কাটান। পাকিস্তানি সৈন্যরা ১২ মে তাঁকে মগবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে ধানমণ্ডির ১৮ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে বন্দি করে রাখে। ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর মুক্তিলাভ করা পর্যন্ত তিনি অনেক মানসিক যন্ত্রণা ও অত্যাচার ভোগ করেন। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা তো তবুও একটা মাথা গুজবার ঠাঁই। কিন্তু ২৫ মার্চের পর পুরো দেড় মাস তাও কোথাও পাই নি। আজ এখানে কাল সেখানে। এমনি করে সেই মাসে কম করে হলেও চৌদ্দ পনেরটা বাসাবদল করেছি।’ চরম বিপদের দিনেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। নিজের দুই ছেলেসহ অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের রণাঙ্গনে নির্দেশনা পাঠাতেন। স্বাধীনচেতা মানুষের সাথে বিশেষ করে বুদ্ধিজীবী এবং দেশপ্রেমিক নাগরিকদের সাথে পাকিস্তানি সৈন্যদের দৃষ্টি ফাঁকি দিয়ে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। বাংলার মানুষ তাই তো আজ পেয়েছে আত্মপরিচয়ের সুযোগ এবং স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মহিলাদের পুনর্বাসন করা, রিলিফ কমিটি করে ইউনিয়ন পর্যায়ে পণ্য সামগ্রী বিলি-বণ্টন করা হতো, কারো কাছ থেকে কোন অভিযোগ আসলে তিনি সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতেন। শহিদ পরিবার ও অনেক বীরাঙ্গনাকে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সাহায্য করেছেন, তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন, সামাজিকভাবে তাঁদের প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নেন এবং বিয়ে দিয়ে পুনর্বাসিত করেছেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রগঠন, বিনির্মাণ ও সামাজিক কার্যক্রমকে সুসংহত করার প্রয়াসে তিনি বঙ্গবন্ধুকে যে সাহস, অনুপ্রেরণা ও প্রত্যয়ের যোগান দিয়ে দেশ ও জাতির সেবা করেছেন ইতিহাসে তা অমরত্ব লাভ করেছে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় বলতে চাই ‘রাজা করিতেছে রাজ্য-শাসন, রাজারে শাসিছে রাণী, রাণীর দরদে ধুইয়া গিয়াছে, রাজ্যের যত গ্লানি।’ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাসায় অত্যন্ত নৃশংসভাবে সপরিবারে নিহত হন। ঘাতকের বুলেটের আঘাতে বঙ্গমাতাও সেদিন শহিদ হয়েছিলেন। স্বদেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর এই চরম মূল্যদানেও সাথে থাকলেন তাঁর সুখ-দুঃখের সঙ্গী, সবচেয়ে আস্থাভাজন ব্যক্তিত্ব, প্রিয় সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা। পরিশেষে, কবিতার কয়েকটি চরণ দিয়ে নিবন্ধটি শেষ করতে চাই। ‘রেখেছো আগলে ধরে সারাটি জীবন/ অথচ নিজে ছিলে নিশ্চুপ, নির্লোভ/ প্রজ্বলিত হয়েছিলে আপন মহিমায়/ অকাতরে করে গেলে জীবনদান/ বাঙালির মুক্তি কামনায়।/ তুমিই বঙ্গজননী, বাঙালির নয়নের মণি/ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।’
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়