আওয়ামী লীগের হাত ধরেই সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ

1006

Published on জুন 28, 2021
  • Details Image

মোঃ শাহ জালাল মিশুকঃ

১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে আপামর বাঙালি জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শত্রুমুক্ত করে জন্মভূমি, অর্জন করে বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা, স্বতন্ত্র জাতিসত্তা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা এসেছে, সেই দলটির নেতৃত্বেই অর্থনৈতিক মুক্তি তথা সমৃদ্ধ দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে প্রিয় জন্মভূমি। বর্তমানে যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। পুরান ঢাকার বিখ্যাত রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এ দলটির জন্মলাভের মধ্য দিয়েই রোপিত হয়েছিল বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন স্বাধীনতাসংগ্রামের বীজ।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা চড়াই-উতরাই, ষড়যন্ত্র-বাধা পেরিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে আওয়ামী লীগ। নানা সংগ্রাম ও সাফল্য পেরিয়ে আজ ২৩ জুন (বুধবার) আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৯ সালে যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এর নাম ছিল ‘পূর্বপাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ এবং জেলে থাকা অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান এ দলের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনে চার হাজার ৬৮২ দিন কারা ভোগ করেছেন। স্কুলের ছাত্র অবস্থায় তিনি ব্রিটিশ আমলে সাত দিন কারাভোগ করেন। বাকি চার হাজার ৬৭৫ দিন তিনি কারাভোগ করেন পাকিস্তান সরকারের আমলে। কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বসেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলার পরিকল্পনা করেছিলেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা জেলে থাকলে বঙ্গবন্ধুকেই দলের সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে নিতে হয়েছে।

টানা তিন মেয়াদের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদেই দৃশ্যমান হয় ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজ গ্রামে গ্রামে পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট, কম্পিউটার, স্মার্টফোন। ইন্টারনেট জগতে বাংলাদেশ চতুর্থ জেনারেশনে (৪-জি) প্রবেশ করেছে। আগামী বছর ৫-জি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

বর্তমান সময়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ সরকার তথা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের আরেক চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প দেশের সর্ববৃহৎ এবং প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ। রাশিয়ার প্রযুক্তি ও সার্বিক সহযোগিতায় এক লাখ ১৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই ইউনিট বিশিষ্ট এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৩ ও ২৪ সালে। এটা সরকারের গত ১২ বছরের সফলতার বড় একটি দিক।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ২১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে, যা চাহিদার চেয়ে ৯ হাজার মেগাওয়াট বেশি। সরকারের মেগাপ্রকল্পের মধ্যে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। মাতারবাড়ী ও ঢালঘাটা ইউনিয়নের এক হাজার ৪১৪ একর জমিতে এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে। নির্মাণাধীন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২০২১ সালের শেষ দিকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ আসতে শুরু করবে। রামপালে প্রায় ১৮৩৪ একর জমির ওপর এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ করছে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কম্পানি লিমিটেড। পাশাপাশি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এই বন্দরের ওপর চাপ কমাতে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় রাবনাবাদ চ্যানেলে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হচ্ছে। আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে ১৬ মিটার গভীরতায় চ্যানেল ড্রেজিং সম্পন্ন করে বন্দর গড়ে তোলা হবে।

স্বাস্থ্য খাতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১১ ও ২০১৩ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড (আন্তর্জাতিক সম্মাননা) দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ইউএন উইমেন ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার ও ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ প্রদান করে। টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৯ সালে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দিয়েছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল সামিট অব উইমেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে নারীশিক্ষা ও উদ্যোক্তা তৈরিতে অসামান্য নেতৃত্বদানের জন্য শেখ হাসিনাকে গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড সম্মাননা দেওয়া হয়। মিয়ানমার থেকে নির্জাতিত হয়ে আসা ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের হাত ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সমৃদ্ধির পথে। উন্নয়নের পথে হাঁটা আওয়ামী লীগের লক্ষ্য- উন্নত বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান লক্ষ্য। সেটির জন্য দেশের মানুষের উচিত সরকারের সফলতার পথে সহযোগিতা করা। যেন আওয়ামী লীগ সরকার দেশ ও জাতির উন্নয়নে আরো বেশি কাজ করতে পারে। সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হোক জাতির পিতার কন্যার নেতৃত্বের মাধ্যমে, এটিই আমাদের কাম্য।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, চুয়েট।

সৌজন্যেঃ কালের কণ্ঠ

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত