আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখে কর্মীরা

1359

Published on জুন 22, 2021
  • Details Image

মো. আসাদ উল্লাহ তুষারঃ

উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ প্রাচীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ । যার জন্ম ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনে । উপেনিবেশিক শাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট বাঙ্গালি তাঁর স্বাধিকারের জন্য অতীতে যে লড়াই সংগ্রাম শুরু করেছিল তা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপশক্তি বা বেঈমানদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। তৎকালীন এই পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অধিকার আদায়ের নেতৃত্ব দেয়ার মত কোন প্রতিষ্ঠান ছিল না। হয়তোবা সেই আকাঙ্ক্ষায় এই অঞ্চলের মানুষের কল্যানের জন্যই ভারতবর্ষ ভাগের পর পাকিস্তান নামক এক অদ্ভুত রাষ্ট্রের জন্মের বছর তিনেকের মধ্যেই আওয়ামী মুসলিম লীগ নামের একটি রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়। পরে যেটা আওয়ামী লীগ নাম নিয়ে চলে যা এখনো বিদ্যমান। এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শামচুল হক। জেল খানায় বন্দি থাকা অবস্থায় এই নবীন দলের গুরুত্বপুর্ন জনপ্রিয় সংগঠক শেখ মুজিবুর রহমান হন অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

সেই যে পথ চলা শুরু তা এখনো চলছেই । আওয়ামী লীগের যাত্রার শুরুর কয় বছরের মধ্যেই সেই সময়ের সবচেয়ে নিবেদিত প্রাণ সংগঠক যাকে বলে কর্মী বান্ধব সংগঠক শেখ মুজিবের হাতে চলে আসে দলের মুল নেতৃত্ব । আওয়ামীলীগ তাঁকে পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন । তাঁরপর থেকে আর আওয়ামীলীগকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি । যদিও অনেক চড়াই উৎরাই পার করে নিপীড়ন নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে এই দলের নেতাদের বিশেষ করে শেখ মুজিবকে । শেখ মুজিব আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েই দলকে সারা দেশের ( পূর্ব পাকিস্তানে) মানুষের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য দল হিসেবে জনগণের কাছে নিয়ে যান। সাধারণ মানুষই ছিল এই দলের প্রধান শক্তি তাদের মধ্য থেকে পরে অনেকেই এই দলের কর্মী হিসেবে কাজ করেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগ ছিল কর্মী নির্ভর একটি দল। কর্মীরাই ছিল এই দলের প্রাণশক্তি, অনেক বড় বড় নেতাই দল থেকে চলে গেছেন কিন্তু কর্মীরাই এই দলকে টিকিয়ে রেখেছে, যা এখনো চলমান।

কিন্তু সেই কর্মীদের মূল্যায়ন হয়েছে বা হচ্ছে কি আদৌ? দলের লাখ-লাখ কোটি-কোটি নিবেদিতপ্রাণ কর্মী কি অবস্থায় আছে, কে তাদের খোঁজ রাখেন ।সাধারণত আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কর্মীদেরও আওয়ামীলীগের কর্মী হিসেবে গণ্য করা হয় বা তারা নিজেরাও আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন । হয়তোবা কেউ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামিলীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ,যুবমহিলা লীগ, তাঁতী লীগ বা মৎস্যজীবী লীগ নানান সংগঠনের সাথে জড়িত কিন্তু তারা দিন শেষে মনে করেন তারা আওয়ামী লীগের কর্মী, বঙ্গবন্ধুর সৈনিক,শেখ হাসিনার সৈনিক। কোন স্বার্থ ছাড়া লোভ লালসায় না পড়ে নিঃস্বার্থভাবে বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসে, মুক্তিযুদ্ধকে ভালোবেসে, শেখ হাসিনাকে ভালোবেসে যারা এই সমস্ত সংগঠনের সাথে জড়িত হয়েছিল কোন সরকারি সুযোগ-সুবিধার কথা চিন্তা না করে বা পদ-পদবির কথা চিন্তা না করে, যারা আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে নিজেদের নাম লিখেছিল সত্যিকার অর্থেই সেইসব কর্মীরা এখন নানা অসুবিধার মধ্যে দিনযাপন করছে। বিশেষ করে সুবিধাভোগী যে সকল কর্মী বা নেতা যারা শুধুমাত্র ক্ষমতার হালুয়া-রুটি ভোগ করার জন্য দলে যোগ দিয়েছে,দুর্দিনে যাদের কোন ভূমিকা ছিল না বা অন্যদল করেছে তারা এখন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের যোগ দিয়ে যেকোন উপায়ে অর্থকরীর বাহাদুরি দেখিয়ে পদ-পদবী বাগিয়ে রাজনীতির মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এদের কারণে তৃণমূল থেকে একদম উপর লেভেল পর্যন্ত নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা খুবই অসহায় ভাবে দিনযাপন করছে। তাঁরা না পারছে বলতে না পারছে সইতে। ক্ষেত্রবিশেষে শুধু ছাত্রলীগ করার কারণে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি হয় নাই। যে নিবেদিতপ্রাণ সহজ-সরল আওমীলীগ কর্মীটি দীর্ঘদিন ধরে দলের সাথে জড়িত আছে অথচ তার একটি সন্তান প্রাইমারি স্কুলের পিয়ন বা দপ্তরি পদে চাকরি পায় নাই। সেখানে হয়তো হাইব্রিড কোন আওয়ামী লীগের কর্মী "বিশেষ সুবিধার" মাধ্যমে চাকরি-বাকরি বাগিয়ে নিয়েছেন। ছাত্রলীগ বা যুবলীগের নিরীহ নিবেদিত প্রাণ কর্মীটি অসুখ হলে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে পক্ষান্তরে নীতিহীন কোন নেশাগ্রস্ত তরুণ নিজেকে ছাত্রলীগ বা যুবলীগ নেতা পরিচয় দিযে নানা ধরনের অবৈধ সুবিধা নিচ্ছে। যা প্রকারান্তরে দলের সুনাম নষ্ট করছে, বঞ্চিত হচ্ছে দলের নিবেদিত প্রাণ কর্মীরা যারা দলের দুর্দিনে বুক পেতে দিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু কর্মী মূল্যায়ন করেছেন, তৃণমূল পর্যন্ত কর্মীদের তিনি চিনতেন খোজ রাখতেন । তাঁর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাও কর্মীদের যতটুকু সম্ভব মূল্যায়ন করেন, তাঁর নলেজে আসলে কোনো কর্মীর কোন অসুবিধায় তিনি মুখ ফিরিয়ে নেননি বরং পরম মমতায় মায়ের স্নেহে বোনের ভালোবাসারয় দলের কর্মীদের সবসময় পাশে থেকেছেন সহযোগিতা করেছেন। তৃণমূলের কর্মীরাও শেখ হাসিনার সাথে কোনদিন বেঈমানী করে নাই, যেমনটি করে নাই বঙ্গবন্ধুর সাথে। কিন্তু সেই তৃণমূলের নিবেদিত প্রাণ কর্মীরা তৃণমূলেরই নেতা বা এমপি মন্ত্রীদের কাছ থেকে কি কোন সময় প্রত্যাশিত সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা এমপিরা এই তৃণমূলের নিঃস্বার্থ সহজ-সরল কর্মীদের কোন খোঁজ খবর রাখেন? তারা কিভাবে দিনযাপন করছে, অতীতে দল করতে গিয়ে তারা যে সারা জীবনের জন্য যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার জন্য কোন সান্ত্বনা পায় তোদের কাছ থেকে? না এই নেতারা শুধুমাত্র তাদের বংশবদ কিছু হাইব্রিড কর্মী ও আত্মীয়-স্বজন দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যাস্ত থাকেন। কমিটি করতে ত্যাগীরা বাদ, চাকরী বাকরিতে ত্যাগীরা বাদ,কোন সুযোগ সুবিধায় কোথাও ত্যাগীদের জায়গা নেই। সব জায়গায় সুবিধাবাদী, নব্য হাইব্রীড, দলছুটদের জয় জয়াকার। যারা কোনদিন ছাত্রলীগ করে নাই, দলের দুর্দিনে দলের পাশে থাকে নাই,সুদিনের মধু খেতে যারা এখন দলে অতিমাত্রায় সক্রিয় তাদেরই পৃষ্ঠপোষকতা করছে একশ্রেণীর হাইব্রীড নেতা এমপি।

মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগ বাহাত্তর বছরের প্রাচীন একটি রাজনৈতিক সংগঠন। জন্মের পর থেকেই আওয়ামীলীগ সব সময় গতিশীল, সক্রিয় ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এই দীর্ঘ পথ চলায় অনেক চড়াই উৎরাইয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে দলটিকে। এই দলটির সবচেয়ে বড় ও গৌরবময় অর্জন একাত্তরের সুমহান মুক্তিযুদ্ধ। আবার এই সময়ের মধ্যেই পঁচাত্তর সালের পনেরই আগস্টের মত হৃদয়বিদারক, মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পরিবারসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। একুশে আগস্টের মত বর্বর গ্রেনেড হামলা করে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা সহ শীর্ষ নেতৃত্বকে শেষ করে দেয়ার ঘৃন্য চক্রান্তও করা হয়েছিল এই সময়ে, সেদিন চব্বিশজন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছিলেন। এই সময়ের মধ্যে সামরিক শাসক আইয়ুব-ইয়াহিয়া-জিয়া- এরশাদের মত সামরিক শাসকরা বারবার আওয়ামীলীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার চক্রান্ত করেছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে, কিন্তু আওয়ামীলীগের অগ্রযাত্রাকে কোনভাবেই ব্যাহত করতে পারেনি। সব বাধা অতিক্রম করে বুকটান করে মাথা উঁচু করে আওয়ামীলীগ এগিয়ে গেছে। আর এই এগিয়ে যাওয়ার মুল শক্তিই ছিল এই দলের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। এই দলের জন্য নেতারাও অপরিসীম কষ্ট স্বীকার করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সহ চার জাতীয় নেতা, কৃষক নেতা আব্দুর রব সেরিনিয়াবত, যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি সহ বিভিন্ন সময় অনেক অনেক নেতাকে জীবন দিতে হয়েছে। আজকের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকেও অন্তত উনিশবার হত্যা প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে, জেল জুলুম নির্যাতন নিপীড়ন তো ছিল নিত্যসঙ্গী।

আর বাংলাদেশের সব অর্জন আওয়ামীলীগের হাত ধরেই এসেছে। শুধু স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ডই উপহার দেয়নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অর্জিত সেই স্বাধীনতার পর স্বল্প সময়ে একটি সুন্দর সংবিধান প্রণয়ন, বিদেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও স্বীকৃতি আদায়সহ দেশের মূল ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় অতি স্বল্প সময়ে তিনি একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের জন্য যে কাজ করে গেছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তাঁর আজীবনের স্বপ্ন দেশ স্বাধীন করে দিলেও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ শুরু করতেই তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বে দেশ আজ সবদিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বড় বড় উন্নয়ন মূলক কাজ আজ কল্পনা নয় বাস্তব। অর্থনৈতিক ভীত উপমহাদেশের অনেক দেশের তুলনায় মজবুত। তথ্য প্রযুক্তিতে দেশ আজ অনেক অনেক দূর এগিয়েছে,যার সুফল ভোগ করছে সাধারণ মানুষ। জীবন যাত্রার মান বেড়েছে বহুগুণ। স্বাধীনতার পর বাজেট ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার আর চলতি বছরের বাজেট ছয় লক্ষ কোটি টাকার উপরে। আর এসবের নেতৃত্বে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং এর সফল নেত্রী হিসেবে আছেন জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগ একই সূত্রে গাঁথা। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে দিয়ে যেমন বাংলাদেশের কথা চিন্তা করা যায় না তেমনি যারা আওয়ামী লীগকে নিয়ে নানা সময় নানা ধরণের চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করে তাদেরও জেনে রাখা উচিত সাধারণ মানুষের মধ্যে থেকে উঠে আসা এই জনপদের মানুষের ভালোবাসার আশীর্বাদ পুষ্ট সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে কোনদিন কোন ষড়যন্ত্র করেই শেষ করে দেয়া যাবে না। আওয়ামী লীগ বেঁচে থাকবে সাধারণ মানুষের মাঝে, আপন হয়ে, গায়ে গা লাগিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পতাকা বহন করে শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের নেতৃত্বের সফলতাকে শক্তি হিসেবে নিয়ে। জন্মদিনে আওয়ামী লীগের কোটি কোটি নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা আর যারা এই দলের জন্য শহীদ হয়েছেন আত্মাহুতি দিয়েছেন তাঁদের জন্য দোয়া ও ভালোবাসা।

লেখকঃ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত