595
Published on জুন 1, 2021চাঁপাইনবাবগঞ্জের করোনা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর ও ভীতিকর হয়ে উঠেছে। ঘরে ঘরে করোনা রোগী। এত অসহায় পরিস্থিতি আগে দেখা যায়নি। তবে জেলাবাসীর কঠিন এ সময়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল।
রোববার শিবগঞ্জের মনাকষা এলাকার গ্রামে গ্রামে ঘুরে সবার খবর নিতে দেখা গেছে এমপি শিমুলকে। জানা যায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে আক্রান্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। আর সর্বাধিক শিবগঞ্জের গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে করোনা রোগী। সংক্রমণের তীব্রতা ও মৃত্যু হারও বেশি। দেশের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জেই চলছে কঠোর লকডাউন। এ সময়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লকডাউন কার্যকরে সার্বক্ষণিক মাঠে তৎপর। তবে জেলাবাসীর কঠিন এই সময়ে একজন মাত্র জনপ্রতিনিধিকেই গ্রামে গ্রামে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের মতে, শিবগঞ্জের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে তার অবিরাম ছুটে চলা করোনায় বিপর্যস্ত মানুষকে সাহস জোগাচ্ছে। রাজশাহীর বাসাবাড়ি ছেড়ে শিবগঞ্জে অবস্থান করছেন সর্বক্ষণ। কার বাড়িতে খাবার নেই— ফোন পেয়েই খাবারের ব্যবস্থা করছেন। চালু করেছেন হটলাইন। কার টেস্ট দরকার, কাকে হাসপাতালে পাঠাতে হবে-ফোনে যোগাযোগ করে সে ব্যবস্থাও করছেন তিনি।
নিজে একজন প্রথিতযশা চিকিৎসক হওয়ায় শিবগঞ্জের গ্রামে গ্রামে ঘুরে সাধারণ রোগের চিকিৎসাও করছেন। দিচ্ছেন পরামর্শ ও বিনামূল্যে ওষুধও। যে এলাকায় যাচ্ছেন সেখানকার দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন, কাজে সহযোগিতা করছেন। যদিও উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বড় বড় পদধারী নেতা এখন মাঠে নেই।
এ সময় এমপি শিমুল বলেন, করোনার সব উপসর্গ নিয়ে হাজার হাজার মানুষ ঘরে থাকছে। ঝামেলা এড়াতে হাসপাতালে যাচ্ছে না টেস্ট করতে। উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে ঠাঁই নেই। একমাত্র ভরসা রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতাল। কিন্তু সেখানেও বেড খালি নেই। শিবগঞ্জের করোনাক্রান্তদের ভর্তির জন্য দিনে ২০ থেকে ৩০ বার ফোন করতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। তারা বিরক্ত হচ্ছেন। কিন্তু উপায় তো নেই। কোথায় যাবে এত রোগী।
তিনি বলেন, করোনায় বিধ্বস্ত উত্তর-পশ্চিমের ছোট জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। বিপর্যস্ত জনজীবন। ভয়ার্ত মানুষ-জেলা ছেড়ে যাচ্ছে করোনা থেকে বাঁচতে। এই সময়ে অনেকেরই আগে চিকিৎসা দরকার। তার পর খাদ্যপানীয় দরকার। অনেক দিনমজুর, দরিদ্র শ্রমিক কঠোর লকডাউনে কাজে বের হতে পারেন না। কাজ না করলে তাদের সংসার চলে না। এখন প্রয়োজন সহায়তা।
জানা গেছে, গত ২৯ মে থেকে ভ্রাম্যমাণ নমুনা ক্যাম্প শুরু করেছেন। গ্রামে গ্রামে সন্দেহভাজনদের নমুনা সংগ্রহে ভ্রাম্যমাণ অ্যাম্বুলেন্স ঘুরছে। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও নার্সদের নিয়ে গঠন করেছেন ভ্রাম্যমাণ নমুনা সংগ্রহ টিম।
ফলে উপসর্গ নিয়েও যারা বাড়িতেই থাকছিলেন এতদিন তাদের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। এতে আরও বেশি নমুনা আসছে। সন্দেহভাজনরা পরীক্ষায় আওতায় আসছে। ফলে তাদের চিকিৎসা নিশ্চিতের সুযোগ হচ্ছে।
এমপি শিমুল আরও বলেন, কঠোর লকডাউনে অনেক শ্রমজীবী মানুষ ঘরে আছেন। কাজ নেই। ঘরে খাবার নেই। ফোন এলেই স্থানীয়ভাবে খাবার পৌঁছানোর ব্যবস্থা করছি। সরকারি সহায়তা তহবিলের বাইরে আমার ব্যক্তিগত ফান্ড নেই। কিন্তু মানুষকে তো আর অভুক্ত রাখতে পারি না। কেউ অন্তর্ভুক্ত থাকলে এ দায় আমার। দলের সচ্ছল ও বিত্তশালী নেতাকর্মীদের বলেছি এই সময়ে কিছু করা দরকার। চাল-ডাল-ওষুধপত্র যার যা সামর্থ্য আছে, তাই পৌঁছে দিচ্ছেন গরিরের ঘরে।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাকিব আল রাব্বী বলেন, সংসদ সদস্য ডা. শিমুল করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর থেকে গ্রামে গ্রামে ছুটছেন। অসম্ভব প্রাণশক্তি তার। কোনো ক্লান্তি নেই। কখনও সড়ক মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে নিজেই পথচারী যাত্রীদের মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছেন, কখনও খাবার বিতরণ করছেন, কখনো হ্যান্ড মাইক হাতে নিয়ে গ্রামে গ্রামে করোনা সচেতনতায় এলাকাবাসীকে সতর্ক করছেন।
তারই মধ্যে প্রশাসনিক সভা করছেন। সময় পেলেই ছুটছেন হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ ও রোগীদের পরিস্থিতি দেখার জন্য। নতুন নতুন পরিকল্পনা করছেন, কর্মসূচি নিচ্ছেন, কীভাবে মানুষকে করোনার এ ছোবল থেকে রক্ষা করা যায়। আবার কোথায় লোকজন অবাধে ঘুরছেন কোথায় হাটবাজার বসানো হচ্ছে- ফোনে খবর পেয়েই প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও পুলিশ নিয়ে ছুটছেন সেখানে। লোজকজনকে বোঝাচ্ছেন।