3534
Published on মে 5, 2021তাজিন মাবুদ ইমনঃ
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠিত হয়। জামায়েত ইসলাম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হওয়ার পর জামায়েত ইসলাম এর নেতারা ভিন্ন নামে হেফাজত ইসলাম গঠন করে।
২০১১ সালে এই সংগঠনটি সর্বক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে গঠিত নারী উন্নয়ন নীতির তীব্র বিরোধিতা করে। নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিয়ে বিরোধিতা করে এরা পরিচিত পাই। তখন এরা বিভিন্ন ফতোয়া ও বের করে। আসলে তারা কি সত্যিকারের মুসলিম প্রশ্ন থেকে যাই। কারন নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিয়ে সমাজের নারীদেরকে পুরুষের মতো মূল্যায়ন করার জন্য কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘তারা হচ্ছে তোমাদের জন্যে পোশাক এবং তোমরা হচ্ছ তাদের জন্যে পোশাক।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৭)।
বাংলা নববর্ষ এবং পহেলা বৈশাখকে বিজাতীয় সংস্কৃতি হিসেবে প্রচার করে এর বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলাম। রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সামনে রেখে পর্যায়ক্রমে চালানো হয় সহিংসতা।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এর জন্য বাংলাদেশের জনগণ গণজাগরণ মঞ্জ গড়ে তুলে শাহবাগে। তখন হেফাজত ইসলাম আবার তাদের বিরোধীতা করে। কারন হেফাজত ইসলাম, জামায়েত ইসলাম এর নেতারা কখন ও চাই নাই দেশ স্বাধীন হউক।
২০১৩ সালের ৫ই মে শাপলাচত্বর তাণ্ডব চালায় হেফাজত ইসলাম। এই তাণ্ডব এর নেতৃত্ব দিয়েছিল বিএনপি। ৫ই মে এর আগে বিএনপি এর চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এর সাথে বৈঠক করে ৫ই মে তাণ্ডব চালায় হেফাজত ইসলাম। উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর থেকে ক্ষমতায় যেতে প্রায় চূড়ান্ত প্রস্তুতি ছিলো হেফাজতের। হেফাজত এর প্রয়াত আমীর আহমদ শফী কে রাষ্ট্রপতি এবং হেফাজত এর বর্তমান আহবায়ক জুনায়েদ বাবুনগরী কে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার জন্য দলের নেতাদের নাম চূড়ান্ত করে ফেলে হেফাজত ইসলাম। ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে জমায়েতের সময় ঢাকার অন্যতম প্রবেশপথ গাবতলী এলাকার দায়িত্বে ছিলেন মামুনুল হক। নেতাকর্মীদের ঢাকায় প্রবেশ করিয়ে দুপুরের দিকে তিনি শাপলা চত্বরে যান। সেখানেই শীর্ষ নেতাদেরর মধ্যে একটা মিটিং হয়। মিটিংয়ে বিএনপি এবং জামায়াতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে একযোগে মাঠে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৩সালের ৫ই মে হেফাজত ইসলাম এর কর্মীরা মতিঝিল, পল্টন, জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলার মোড় ও আশেপাশের এলাকায় বহু প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। বায়তুল মোকাররম মার্কেট ও তার আশেপাশে প্রায় ৩০০টি দোকান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং তাতে প্রায় ১৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি)-এর ১৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা ও একই ইমারতে অবস্থিত জনতা ব্যাংকের ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।ক্ষতিগ্রস্ত হয় সোনালী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সিটি সেন্টার, কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম বুথসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিভিন্ন স্থানে দুই শতাধিক যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া অসংখ্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকাররা ক্ষতিগ্রস্ত হন সেদিনকার ধ্বংসযজ্ঞে। হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা এদিন অবরোধ সৃষ্টির জন্য পল্টন মোড় থেকে বিজয়নগর মোড় পর্যন্ত প্রায় ৭০টি গাছ এবং পল্টন মোড় থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি গাছ কেটে ফেলে।
হেফাজত ইসলাম নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে পরিচয় দিলে তাদের সব কর্মকান্ড রাজনৈতিক ফায়দা এর জন্য হয়ে থাকে। গত ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর ঘিরে আন্দোলনে করে সারা দেশে নাশকতা-তাণ্ডব চালায় হেফাজত ইসলাম। ইসলাম শান্তির ধর্ম।ইসলাম কখন ও এই ধরনের নাশকতা সমর্থন করে না। ইসলাম বিশ্বজনীন শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবজাতির জন্য কল্যাণকামী পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। 'ইসলাম' মানে আত্মসমর্পণ করা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, 'তারা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায়, আল্লাহ ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের ভালোবাসেন না।' (সূরা মায়েদা :৬৪)। ইসলামপ্রিয় মুসলমানের পরিচয় দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে' (বুখারি ও মুসলিম)। তাই পৃথিবীতে সত্যিকারার্থে সত্য ও ন্যায়নীতির বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমাজ জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বজায় রাখা ইসলামের দৃষ্টিতে অপরিহার্য কর্তব্য এবং ইমানি দায়িত্ব। সুতরাং মানবসমাজে কোনো রকম নাশকতা, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, সংঘাত, উগ্রতা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ইসলামে নিষিদ্ধ।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম