বঙ্গবন্ধুর নববর্ষ

2222

Published on এপ্রিল 14, 2021
  • Details Image

স্কোয়াড্রন লিডার(অব) সাদরুল আহমেদ খান:

শুভ নববর্ষ ১৪২৮, করোনা মহামারীর জন্য লকডাউনের মধ্যেই চলছে আমাদের নতুন বছর কে স্বাগতম জানানোর চেষ্টা। কভিড-১৯ বাস্তবতা কে মেনে নিয়েই আমরা চলছি নিরাপদ আগামীর জন্য। তবে অনেকেই এ অবস্থায় হাঁপিয়ে উঠেছেন, অনেকটা বিরক্ত। কিন্তু আপনারা সবাই জানেন জাতির জনকের জীবনের বিরাট অংশ কেটে গেছে কারাগারের লক ডাউনে, পরিবার পরিজন থেকে তিনি ছিলেন আইসোলেশনে। কারাগারের রোজনামচা থেকে জাতির পিতার এমনই একটি নববর্ষ অভিজ্ঞতা তুলে ধরলাম।

পহেলা বৈশাখ ১৩৭৪। ঢাকার ২৬ নাম্বার প্রিজন সেলে বন্দী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখলেন নুর আলম সিদ্দিকী, নুরুল ইসলাম সহ কয়েকজন রাজবন্দী ফুল নিয়ে হাজির নববর্ষ শুভেচ্ছা জানাতে। ২৬ নাম্বার সেল হাসপাতাল থেকে খন্দকার মোশতাকও ফুল পাঠালেন।

বঙ্গবন্ধুও ফুল পাঠালেন। ২০ নাম্বার সেলে থাকা হাজি দানেশ, আলতাফ হোসেন, হাতেম আলি খান, সিরাজুল হোসাইন খান, সায়েদুল রহমান। ১০ নাম্বার সেলে থাকা রফিক সাহেব,মিজানুর রহমান, জালাল উদ্দিন, আব্দুল মুমিন, ওবায়দুর রহমান, মহি উদ্দিন, সুলতান এবং হাসপাতালে থাকা খন্দকার মোশতাককে।

ইচ্ছা থাকলেও ফুল পাঠানো সম্ভব হলনা রনেশ দাস গুপ্ত, শেখ ফজলুল হক মনি, হালিম, আব্দুল মান্নান ও ছাত্র নেতাদের। তাদের মুখে মুখে শুভেচছা পাঠালেন বঙ্গবন্ধু।

জেলের ভিতর যেন অনেক গুলো জেল। রাজনৈতিক বন্দীরা একে অপরের সাথে দেখা করতে পারতেন না।

পহেলা বৈশাখ বিকেলে পুরাতন ২০ নাম্বার সেলের সামনে নুর আলম সিদ্দিকী, নুরুল ইসলাম ও হানিফ খান কম্বল বিছেয়ে জলসার ব্যাবস্থা করেছিলেন। বাবু চিত্ত রঞ্জন,বিমল দত্ত, শাহ মুয়াজ্জেম সহ কয়েক জন কয়েদি ও বন্দী বসলেন। আয়োজকরা বংগ বন্ধুকে সেখানে নিয়ে গেলেন। কয়েকজন সাধারণ কয়েদি গান পরিবেশন করলেন। সীমিত পরিসরে এই জলসা ছিল আনন্দঘন।

কারাগার থেকেই দেশবাসীকে নববর্ষ শুভেচ্ছা জানালেন বঙ্গবন্ধু।

১০ নাম্বার সেলের মিজানুর রহমান বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে কবিতা লিখে পাঠালেন,
" আজকে নতুন প্রভাতে, নতুন বছরের আগমনে- মুজিব ভাই কে।
বন্ধু হও, শত্রু হও, যেখানে যে কেউ রউ
ক্ষমা কর আজিকার মতো,
পুরাতন বরষের সাথে,
পুরাতন অপরাধ হতে।"

প্রিয় পাঠক, আসুন জাতির জনকের ত্যাগের কথা মনে করে গত এ বছর আমরা বাইরে কোন অনুষ্ঠান করা থেকে বিরত থাকি। কারণ, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নতুন করে আঘাত হেনেছে সারা দেশে। পয়লা বৈশাখের আনন্দ ঘরে বসেই উপভোগ করবো আমরা। নিজেরাও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘরোয়া পরিবেশে আনন্দ উপভোগ করবো।

অতীতের সকল জঞ্জাল-গ্লানি ধুয়ে-মুছে আমরা নিজেদের পরিশুদ্ধ করবো। দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যাবো সামনের দিকে। গড়বো আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যত- এই হোক এবারের নতুন বছরের শপথ।

লেখকঃ সাবেক ডেপুটি সার্জেন্ট-এট-আর্মস; সদস্য, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত