4200
Published on এপ্রিল 3, 2021হেফাজতে ইসলামের হরতাল চলাকালে সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি স্থাপনাসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে হেফাজতকর্মীরা। হেফাজতকর্মীরা এসময় কয়েকজন সাংবাদিকের ওপরও হামলা চালায়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের মতো ধর্ম ব্যবসায়ী দলের ওপর ভর করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা করেছে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে হেফাজতে ইসলামীর নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন।
মাহবুব-উল-আলম হানিফের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল হেফাজতে ইসলামীর নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলা শহরের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন ‘সরকারকে আমরা বলব, যারা এই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট তাদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে, স্বাধীন রাষ্ট্রে এই ধরণের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করা যাবেনা।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল, একইভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধ্বংসাত্মক কার্যাকলাপ করা হয়েছে। এগুলো কোনোভাবেই বরদাশত করা হবেনা। এবার আশ্বস্ত করছি, এবার আমরা একটা কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেব।’
হানিফ আরও বলেন, হেফাজতের যারা এখানে আছেন, তাদের কাছে তো গানপাউডার থাকার কথা না। এই গান পাউডারের ব্যবহার আমরা ১৯৭১ সালে দেখেছি। আর দেখেছি জামায়াতের বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকান্ডে। তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে এখন আবার নাশকতামূলক কর্মকা-ে গান পাউডারের ব্যবহার দেখে পরিস্কার হয়ে গেছে, হেফাজতের কাঁধে ভর করেছে জামায়াত এবং বিএনপি। তারাই এ সন্ত্রাসী কর্মকা- করেছে। দেশে তো বিএনপির সাংগঠনিকভাবে এমন কোনো তৎপরতা নেই, যেটা সরকারকে অস্থিতিশীল করতে পারে। তাদের নিজেদের সক্ষমতা নেই, তারা এখন ধর্মব্যবসায়ী দল হেফাজত ও জামায়াতের ওপর ভর করেছে।
এ সময় র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মঈন উদ্দিন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ইসলাম অবমাননার মিথ্যে অভিযোগে হেফাজত সমর্থকদের হামলার স্থান পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল।
এদিকে সুনামগঞ্জে হেফাজতের হামলার স্থান পরিদর্শন করলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। ইসলাম অবমাননার মিথ্যে অভিযোগে হেফাজত সমর্থকদের হামলার স্থান পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলে ছিলেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও শফিউল আলম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এনামুল কবির, শাল্লা উপজেলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন চৌধুরীসহ সুনামগঞ্জ জেলা, উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
উগ্রপন্থীরা প্রকাশ্য দিবালোকে কাশিপুর, দিরাই উপজেলার নাসনি, সন্তোষপুর ও চণ্ডীপুর গ্রামের মানুষ লাটিসোঁটা নিয়ে শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের মানুষের বাড়িঘর, মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর চালায়।
হামলার আগের দিন ওই এলাকায় হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা মুমিনুল হক ওয়াজ করেন। এ সময় তিনি ‘উস্কানিমূলক সাম্প্রদায়িক’ বক্তব্য দেন। এর পরদিন ১৭ মার্চ নোয়াগাঁও গ্রামে হামলার ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) দুপুরে ওই গ্রামে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ঘুরে দেখেন এবং মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। পরে গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সমবেত লোকজনের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন নেতারা।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে নগদ অর্থ, চাল, ডাল, তেলসহ বিভিন্ন সামগ্রী উপহার দেয়া হয়। আহমদ হোসেন তার বক্তব্যে এসব ঘটনা প্রতিরোধ করতে লাঠি হাতে প্রস্তুত থাকতে যুবসমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধের সৈনিকেরা পরাজয় মানে না। মৌলবাদ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। আমরা তৈরি আছি। আপনাদেরও তৈরি থাকতে হবে।
নোয়াগাঁও গ্রামবাসীর উদ্দেশে শফিউল আলম চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা এখানে এসেছি। স্থানীয় প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা শুরু থেকেই আপনাদের পাশে আছেন। ওয়াজ মাহফিলের নামে, ধর্মের নামে বিদ্বেষ ছড়ানো যাদের কাজ; তারা মানবিকতা বোঝেন না। ইসলাম বোঝেন না। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মধ্যযুগীয় বর্বরতা চালিয়েছে। তারা দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে চান। তারা একাত্তরের পরাজিত শক্তি, তাদের প্রতিহত করতে হবে। সারা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে।
তিনি বলেন, মনে রাখবেন, এরা চায় এই দেশ আফগানিস্তান আর পাকিস্তানের মতো ব্যার্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে। এরা একাত্তরের পরাজিত শক্তির দ্বিতীয় প্রজন্ম; এরা চায় ৭১এ পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকা কালে তাদের এ স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে, তা কোনো দিন সত্যি হবে না।