২৩ মার্চ, ১৯৭১, ঘরে ঘরে উড়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা

1522

Published on মার্চ 23, 2021
  • Details Image

একাত্তরের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস বর্জন করে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ 'প্রতিরোধ দিবস' ও ন্যাপ (ভাসানী) 'স্বাধীন পূর্ববাংলা দিবস' হিসেবে পালন করে সারাদেশে। যদিও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিনটিকে 'ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব দিবস' হিসেবে পালন করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু সারা বাংলায় এদিন সরকারি ছুটিও ঘোষণা করেছিলেন।

এদিন রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি ভবন, বাড়ি, গাড়িতে কালো পতাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান 'জয় বাংলা' বাহিনীর অভিবাদন গ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদস্যদের সামরিক কায়দায় অভিবাদনের মধ্য দিয়ে সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে তার হাতে তুলে দেওয়া হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। এ সময় বঙ্গবন্ধু সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, বাংলার মানুষ কারও করুণার পাত্র নয়। আপন শক্তির দুর্জয় ক্ষমতাবলেই আপনারা স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনবেন। বাংলার জয় অনিবার্য।

পাকিস্তান দিবসে ঢাকায় রমনা প্রেসিডেন্ট হাউস, দিলকুশা গভর্নর হাউস, ঢাকা বিমানবন্দর, সামরিক আইন প্রশাসকের দপ্তর ও ক্যান্টনমেন্টগুলো ছাড়া বাংলাদেশে আর কোথাও পাকিস্তানের পতাকা ওড়েনি।

অন্যদিকে ঢাকায় সেক্রেটারিয়েট ভবন, হাইকোর্ট ভবন, পরিষদ ভবন, ইপিআর সদর দপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা বেতার ভবন, ঢাকা টেলিভিশন ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টেলিফোন ভবন, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, প্রধান বিচারপতি, মুখ্য সচিবের বাসভবনসহ সরকারি-বেসরকারি সব ভবন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলা হয়। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলার সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাধা দিলে ছাত্র-জনতা তা উপেক্ষা করে পতাকা উত্তোলন করে।

এদিন মুক্তিপাগল মানুষ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাঠি-বর্শা-বন্দুকের মাথায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাসভবনের সামনে জমায়েত হতে থাকে। 'জয় বাংলা', 'তোমার নেতা আমার নেতা/ শেখ মুজিব শেখ মুজিব', 'তোমার দেশ আমার দেশ/ বাংলাদেশ বাংলাদেশ', 'জাগো জাগো/ বাঙালি জাগো', 'তোমার আমার ঠিকানা/ পদ্মা-মেঘনা-যমুনা' স্লোগানে মুখরিত ছিল দিনটি।

জনতা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে মোহাম্মদ আলি জিন্নাহর ছবি এবং জুলফিকার আলি ভুট্টো ও জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকদের সমন্বয়ে গঠিত জয় বাংলা বাহিনীর আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ ও মহড়া আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। কুচকাওয়াজ ও মহড়ার শুরুতে 'জয় বাংলা' ধ্বনি এবং সামরিক কায়দায় অভিবাদনের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলিত হয়। এ সময় রেকর্ডে 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি' গানটি বাজানো হয়।

আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, খন্দকার মোশতাক আহমদ ও কামাল হোসেন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা বিচারপতি এআর কর্নেলিয়াস, লে. জেনারেল পীরজাদা, এমএ আহমেদ কর্নেল হাসানের সঙ্গে দুই দফায় দুই ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকে মিলিত হন। সকালে উপদেষ্টা বৈঠকে আওয়ামী লীগ ৬ দফার ভিত্তিতে একটি খসড়া শাসনতন্ত্র উপস্থাপন করে, যা নিয়ে উপদেষ্টাদের মধ্যে বিকেলেও আলোচনা হয়।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের জাতীয় দিবসের বেতার ভাষণ বাতিল করে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সেনানিবাসে গিয়ে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ধারণা করা হয়, এদিনই 'অপারেশন সার্চলাইট' এবং সামরিক কার্যক্রম পরিকল্পার চূড়ান্ত করা হয়।

বিকেলে জাতীয় পরিষদের সংখ্যালঘিষ্ঠ দলের নেতারা শেখ মুজিবের সঙ্গে তার বাসভবনে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে মুসলিম লীগ (কাউন্সিল) প্রধান, জমিয়তে ওলামায়ে প্রধান, বেলুচিস্তান ন্যাপের সভাপতি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে পশ্চিম পাকিস্তানি নেতারা অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা চাই দেশের মঙ্গলের জন্য সবকিছু খুব তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি হয়ে যাক। এ সময় শেখ মুজিব বলেন, আপনারা ভালো কামনা করুন, কিন্তু খারাপের জন্যও প্রস্তুত থাকুন।

সৌজন্যেঃ দৈনিক সমকাল

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত