1094
Published on মার্চ 8, 2021ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা ঘোষণার তাৎপর্য খুঁজে না পাওয়া বিএনপির নেতাদের নির্বোধ সম্মোধন করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা নাকি ৭ই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার কোনো ঘোষণাই পায়নি। আমার মনে হচ্ছে, এরা যেন সেই পাকিস্তানি সামরিক জান্তাদেরই পদলেহনকারী, খোষামোদী-তোষামোদীর দল।
সোমবার (৮ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রান্তে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতাসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
৭ই মার্চের ভাষণের তাৎপর্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভাষণের এক একটা লাইন যদি আমরা আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করি, মনে হবে এক একটা নির্দেশনা। কী কী করণীয়, কী করতে হবে, কী পদক্ষেপ নিতে হবে।’
১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডটা ঘটালো এই দেশের মানুষ। কিন্তু কেন? কারণ বাঙালির বিজয় তারা মানতে পারেনি। আর বিজয়ের পরে একটা বিধস্ত দেশ অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে, একটা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে দাঁড়াবে- এটা তারা চায়নি। যে কারণে তারা এই আঘাতটা করেছিল। কিন্তু এই হত্যার পর আমরা দেখেছি ইতিহাস থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম মুছে ফেলা, ইতিহাস বিকৃত করা, ৭ই মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ, এটা বাজানো যাবে না, এটা কেউ শুনতে পারবে না, জানতে পারবে না। যে দেশ তিনি স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, সেই দেশের টেলিভিশন-রেডিও; এই ভাষণ কখনোই বাজাতে পারত না।’
আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা প্রতিবছর ৭ই মার্চের ভাষণ বাজাতো। পৃথিবীরর ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাবে, এ পর্যন্ত যত ভাষণ হয়েছে সেই ভাষণের আবেদন সেদিনই শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আজ আমরা ৭ই মার্চের ভাষণের ৫০ বছর পূর্তি করছি। যখন আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি, তখন ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের ৫০ বছর উৎসবও করছি। এই ভাষণের আবেদন এখনো মুছে যায়নি। এখনো এই ভাষণ শুনলে সমস্ত শরীর শিহরিত হয়ে ওঠে। এখনো মনে পড়ে, সেই দিনগুলোর কথা। যুদ্ধের দিনগুলোর কথা। কীভাবে একটি ভাষণ একটি জাতিকে অনুপ্রেরণা দেয়, ঐক্যবদ্ধ করে এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিজয় অর্জন করে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবে, হ্যাঁ-আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছে, তারা কিছুই বোঝে না, কিছুই জানে না। কিছু খুঁজেও পায় না। তারা খুঁজে নাও পেতে পারে। কিন্তু হঠাৎ দেখলাম যে, সেই শ্রেণিটা হঠাৎ ৭ই মার্চের ভাষণের দিনটি উদযাপন করতে গেছে। তারা নাকি এতদিনে এই ভাষণের মধ্যে কিছুই খুঁজে পায়নি। অথচ তারা ভাষণটা নিষিদ্ধ করেছিল। তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ভাষণ নিষিদ্ধ করে। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে নিষিদ্ধ করতে পারেনি। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের নির্বোধরা এই ভাষণের তাৎপর্যই বোঝেনি। সেজন্য ভাষণটিকে ছোট করতে চেয়েছিল। অথচ একজন ব্রিটিশ সাংবাদিক জ্যাকব র্যাডফিল্ডসহ কয়েকজন গবেষক এই ভাষণ নিয়ে গবেষণা করেছেন। তারা প্রায় আড়াই হাজার বছরের ভাষণ নিয়ে গবেষণা করছেন। এই গবেষণার মধ্য দিয়ে মাত্র ৪১টি ভাষণ তারা বেছে নিয়েছিল। সেই ভাষণে স্থান পায় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ। এই ভাষণটা আমাদের দেশের কিছু নির্বোধরা বোঝেনি। বুঝেছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল।’
পরবর্তী সময়ে ইউনেস্কো ৭ই মার্চের ভাষণকে ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে ঐতিহাসিক ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই অর্জনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এই ভাষণটাকে ছোট করতে চায় তারা নাকি বিএনপির কয়েকজন নেতা। এর মধ্যে কয়েকজন আছে যারা একসময় হয়তো ছাত্রলীগ করেছিল। পরে দল ছেড়ে চলে গেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু রাজনীতির কবি ছিলেন। তিনি জানতেন যে, মানুষের কাছে কথাটা কী ভাষায় বললে তারা কথাটা বুঝে নেবে; কিন্তু শত্রুদের বুঝতে একটু সময় লাগবে। যে কারণে যুদ্ধের রণকৌশলটা হচ্ছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রণকৌশলের মাধ্যমে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে আনা যায়। আর সেটাই করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘তার কথাটা বাংলাদেশের মানুষ বুঝে নিয়েছিল এবং তারা প্রতিটি অক্ষর মেনে চলেছিল। শুধু একজন বোঝেনি। তিনি ওই সময় ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ছিলেন। এই ভাষণটা যখন ৭ই মার্চে জাতির পিতা দেন, আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আমি রেহানা আর জিলিয়া সেই মিটিংয়ে ছিলাম। আমরা ঠিক মঞ্চের পাশেই ছিলাম। ভাষণটা দিয়ে যখন বঙ্গবন্ধু চলে আসছিলেন আমরাও গাড়ি নিয়ে রওনা হলাম। রাস্তায় রাস্তায় মানুষ। বাঁশ, লাঠি-বৈঠা, সবকিছু নিয়েই তারা সেদিন এসেছিল। তারা খুশিতে লাফাতে লাফাতে যাচ্ছে। স্লোগান দিতে দিতে যাচ্ছে। আমাদের গাড়ি দেখে তারা থামাল। এটা ফুলার রোডে। আমরা নামতে বাধ্য হলাম। তাদের সঙ্গে স্লোগান ধরলাম। তারপর ঘরে ফিরলাম। আর ঘরে ফিরে দেখি, কয়েকজন ছাত্রনেতা সেখানে উপস্থিত।’
তিনি বলেন, ‘গতকালকেও নাম বলেছি, আজকেও বলতে হয়। তিনি সিরাজুল আলম খান। তিনি বঙ্গবন্ধুকে বলছেন, লিডার আপনি কি বললেন, সব মানুষ হতাশ হয়ে চলে যাচ্ছে? কিন্তু আমরা মানুষের উত্তেজনা ও তাদের খুশি দেখে এসেছি। তারা যা চাচ্ছিল সেটা পেয়ে গেছে। ওই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি বললাম, আপনারা এই রকম মিথ্যা কথা বলছেন কেন? আমি তাকে নিজেই ধরলাম, আপনি এত মিথ্যা কথা বলেন কেন? আপনারা তো মাঠ থেকে অনেক আগেই চলে এসেছেন। মানুষ তো খুশিতে লাফাতে লাফাতে যাচ্ছে যে, তারা যুদ্ধ করবে, তারা প্রস্তুতি নেবে, তারা তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আমি সোজা আব্বাকে বললাম, এনাদের কথা বিশ্বাস করবেন না। মানুষ খৈয়ের মতো ফুটছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ বিএনপির কয়েকজন নেতার বক্তব্য আর ওইদিনের ওই কথা শুনে আমার শুধু মনে হচ্ছে, এরা আসলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দালালিই নিয়েছিল। এরা এখনও সেই দালালি ভুলতে পারেনি। সেজন্য তারা এখনও খোঁজে যে, এই ভাষণে স্বাধীনতার কোনো ম্যাসেজই পায়নি তারা।’ অথচ যারা সেদিন প্রস্তুতি নিয়েছে, তৈরি হয়েছে তারা কিন্তু ঠিকই বুঝেছিল বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।