উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ সুবর্ণ জয়ন্তীর বছরে সেরা খবর

2006

Published on মার্চ 2, 2021
  • Details Image

ড. আতিউর রহমানঃ

মুজিববর্ষ ও সুবর্ণ জয়ন্তীর এ বছরে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে। আনন্দঘন এই সময়ে এটিই বাঙালির কাছে সেরা সংবাদ। ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ খবর মেলে। এই উত্তরণের অংশ হিসেবে প্রথম ধাপের খবর এসেছিল ২০১৮ সালে এমন সময়েই। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতার তিনটি সূচক একযোগে উত্তরণ ঘটিয়ে সেবার আমরা এই সুসংবাদটি পেয়েছিলাম। তখনই জেনেছিলাম জাতিসংঘের ‘কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি’ (সিডিপি) তিন বছর পর আবার বসবে এই উত্তরণের দ্বিতীয় মূল্যায়নে। সেই মূল্যায়ন পর্বটি শেষ হয়েছে কয়েক দিন আগে। এই তিন বছর আমাদের বিচক্ষণ প্রধানমন্ত্রী গতিশীল নেতৃত্বে উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ ও গোষ্ঠীর সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রা সচল রেখেছেন। কভিড-১৯-এর হামলায় যখন বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ‘জীবন ও জীবিকা’ সংরক্ষণে হিমশিম খাচ্ছে, তখন তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে দারুণ মুনশিয়ানার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এই দুঃসময়েও গত অর্থবছরে ৫.২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধিই শুধু আমরা অর্জন করেছি তা-ই নয়, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনারও সূচনা করেছি। পরিকল্পনার প্রথম অর্থবছরে আমরা প্রবৃদ্ধির হার ৭.৭ শতাংশ অর্জন করার স্বপ্ন দেখছি। ফলে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে। মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের এই উত্তরণের পেছনে এক বড় চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দ্রুত প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছেন। অবকাঠামোর উন্নয়ন ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ, কভিডের এই সংকটকালে নানা মাত্রিক প্রণোদনা দিয়ে তিনি অর্থনীতির চাকাকে নিরন্তর সচল রেখেছেন। যার ফলে যেখানে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোট জিডিপির আকার ছিল ১০৩.৫ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা ৩৩০.২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। তার মানে, মোট অর্থনীতির আকার তিন গুণেরও বেশি হয়ে গেছে এই এক যুগে। আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যেহেতু স্থিতিশীল (১ শতাংশের আশপাশে) তাই সহজ হিসাবেই মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হার তিন গুণের অনেকটাই বেশি। সিডিপির মানদণ্ড অনুযায়ী মাথাপিছু আয় এক হাজার ২৩০ ডলার হলেই চলত। ২০২০ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল এক হাজার ৮২৭ ডলার। এখন তো তা দুই হাজার ৬৪ ডলার। আমাদের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কৃষির সাফল্যের পাশাপাশি রেমিট্যান্স ও রপ্তানির অগ্রগতির কথা না বললেই নয়। এই এক যুগে রপ্তানি ১৫.৫৭ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৪০.৫৪ বিলিয়ন হয়েছে। রিজার্ভ সাত বিলিয়ন থেকে বেড়ে ৪৪ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। দারিদ্র্যের হার ৪৮.৯ শতাংশ থেকে কমে ২০.৫ শতাংশ হয়েছে। কভিডের কারণে সাময়িকভাবে এ হার কিছুটা বেড়েছে।

মাথাপিছু আয়ের মতোই অন্য দুটি সূচকেও বাংলাদেশের অর্জন আশাব্যঞ্জক। জনসম্পদ সূচকের মানদণ্ড ৬৬। আমাদের অর্জন ৭৫.৪। অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতার মানদণ্ড ৩২। আমাদের সূচক ২৭। সংখ্যা যত কম হবে, এই সূচক ততই ভালো। সেই বিচারে আমরা জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, রোহিঙ্গা সংকটসহ কভিড মোকাবেলায় আশাতীত সাফল্য দেখিয়েছি। সিডিপির চূড়ান্ত সুপারিশ জুন মাসে জাতিসংঘের উচ্চ কমিটি ‘ইকোসক’-এ যাবে এবং সেপ্টেম্বরে সাধারণ অধিবেশনে যাবে। কভিড সংকটের কারণে আমরা আরো দুই বছর বেশি সময় পাব প্রস্তুতিমূলক স্বাভাবিক তিন বছরের সঙ্গে। তার মানে, ২০২৬ সালে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হব।

সবগুলো সূচক পর পর দুবার পূরণ করে এই চূড়ান্ত সুপারিশ অর্জনের কৃতিত্ব আমাদের বিচক্ষণ নেতৃত্বের এবং এ দেশের সব মানুষের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই সুসংবাদ পাওয়ার পরের দিন যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাতেও তিনি বলেছেন, এ অর্জন সম্ভব হয়েছে সব জনসাধারণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশ প্রত্যয়ী ও মর্যাদাশীল একটি দেশ হিসেবে জায়গা করে নেবে। আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্য বেশ কিছু বাড়তি সুবিধাও মিলবে এই উত্তরণের ফলে। এলডিসি থাকা মানেই ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় ছিলাম। তাই আমাদের ‘সভরেন রেটিং’ বাড়ানো যাচ্ছিল না। সে কারণে বাণিজ্যিক ঋণের জামানত ও সুদ দুটিই বেশি গুনতে হতো। এই উত্তরণের ফলে আমাদের ‘কান্ট্রি রেটিং’ আরো উন্নত হবে। বহুজাতিক বিনিয়োগকারীদের মনে বাংলাদেশ সম্পর্কে আস্থা বাড়বে। বিদেশি ঋণ প্রাপ্তি সহজতর হবে। সুদের হার কম হবে। আমাদের ব্যবসায়ীদের এলসি কনফারমেশনের জন্য যে খরচ বিদেশি ব্যাংকগুলো দাবি করে তা কমবে। বেশি বেশি বিদেশি বিনিয়োগ এলে দেশে কর্মসংস্থান বাড়বে। আমাদের ভ্যাট, কর তথা রাজস্ব আদায় বাড়বে। এই মুহূর্তে আমাদের কর-জিডিপির অনুপাত খুবই হতাশাজনক। প্রযুক্তির ব্যবহার ও জনবলের দক্ষতা বাড়িয়ে আমাদের রাজস্ব আহরণের গতি বিপুল হারে বাড়াতে হবে।

এই উত্তরণের সুফল হিসেবে উচ্চশিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে। সরকার এরই মধ্যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্কসহ অনেক মেগাপ্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। নয়া বাস্তবতায় অনেক বিদেশি উদ্যোক্তা এসব আধুনিক অবকাঠামোর সুযোগ নিশ্চয় নেবে। আমাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরেকটি অত্যাধুনিক টার্মিনাল নির্মাণের যে কাজ চলছে তাতেও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করা সহজ হবে। উত্তরণের পর আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য আরো প্রতিযোগিতামূলক হবে। বিদেশি প্রতিযোগীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে আমদানি-রপ্তানি-করনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। চাপে পড়ে হলেও এসব নীতি-সংস্কার আখেরে সবার জন্যই ভালো হবে। একই কারণে আমাদের কারখানাগুলোকে আরো পরিবেশ ও শ্রমিকবান্ধব হতে হবে। সবুজ জ্বালানির ব্যবহার, শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমাদের শিল্প-কারখানাকে আরো আধুনিক ও মানবিক করার তাগিদ বাড়বে। প্রতিযোগী মূল্যে পণ্য রপ্তানির জন্য এই পরিবর্তন অপরিহার্য হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক কূটনীতিকে আরো স্মার্ট করতে হবে।

তবে উত্তরণের পর আমাদের চলমান বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধাও হারাতে হবে। একমাত্র দক্ষতা অর্জন করেই সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। তবে ভারত, চীন এবং উন্নত দেশগুলোতে এখন যে শুল্ক সুবিধা আমাদের রপ্তানিপণ্য পেয়ে থাকে, তা হয়তো উঠে যাবে ২০২৬-এর পর। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তা ২০২৯-এর আগে উঠবে না। আমরা উপযুক্ত অর্থনৈতিক কূটনীতি পরিচালনা করতে পারলে প্রস্তুতি পর্বের এই সময়সীমা আরো বাড়াতে পারি। এমনকি ভিয়েতনামের মতো উন্নত দেশ ও জোটের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তিও করতে পারি।

তবে মনে রাখতে হবে যে এলডিসি হিসেবে এত দিন মেধাস্বত্ব, পেটেন্ট, আইসিটি ও সেবা খাতে বিশেষ বিশেষ যেসব সুবিধা পেতাম, উত্তরণের পর সেসব উঠে যেতে পারে। আমাদের ওষুধশিল্প ২০৩৩ পর্যন্ত উন্নত বিশ্বে শুল্কবিহীন সুবিধা পেতেই থাকবে। ওই সময় পর্যন্ত আইপিআরের শর্তগুলোও শিথিল থাকবে। প্রযুক্তি ও কাঁচামালও আমরা সহজ শর্তে আমদানি করতে পারব। এরপর আমাদের নিজস্ব গবেষণা, পেটেন্টসহ উন্নততর বাণিজ্যে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে। গার্মেন্ট খাতেও এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মানসিকতা আমাদের গড়ে তুলতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে কিন্তু শুল্ক দিয়েই আমরা আরএমজি রপ্তানিতে আমাদের শক্তিমত্তা দেখাচ্ছি। জলবায়ু তহবিলেও আমাদের জন্য বরাদ্দ কমে যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে আমরা খুব বেশি অর্থ কিন্তু পাইনি। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মানবসম্পদ উন্নয়নে যেসব বৃত্তি, অনুদান আন্তর্জাতিক ও উন্নত দেশ থেকে পেয়ে থাকি, সেসব হয়তো কমে যাবে। তবে দর-কষাকষি করে খানিকটা রক্ষা করাও সম্ভব। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, জাইকা—তাদের দীর্ঘমেয়াদি ঋণের সুদের হার খানিকটা বাড়াবে। এ প্রক্রিয়া এরই মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুরু হয়ে গেছে। তবে ভয় পেলে চলবে না। কৃষি ও রপ্তানিপণ্যের বহুমুখীকরণ ও প্রযুক্তির ব্যবহার আমরা নিশ্চয় তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সক্ষম। অবকাঠামোর উন্নয়ন, ব্যবসার পরিবেশ সক্ষমতা, বন্দর ও লজিস্টিক ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা বাড়িয়ে নিশ্চয় শুল্ক দিয়েও আমাদের পণ্যকে বিশ্বে প্রতিযোগী করে তুলতে পারি। তাই এখন আমাদের নতুন পণ্য, নতুন বাজার এবং উৎপাদন পদ্ধতিকে আধুনিক করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আমরা যদি আগামী দিনে জ্ঞানভিত্তিক ও সবুজ অর্থনীতির দিকে মনোযোগ দিই এবং সে জন্য কাঙ্ক্ষিত মানবসম্পদ উন্নয়ন করতে পারি, তাহলে উত্তরণের পরেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে জোর কদমে।

আমাদের জাতির মননে বঙ্গবন্ধু যে লড়াকু মানসিকতা গেঁথে দিয়ে গেছেন এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা যেভাবে বিচক্ষণতার সঙ্গে আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রার নেতৃত্ব দিচ্ছেন—সেসবই আমাদের এই প্রাপ্তির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। আর আমাদের পরিশ্রমী মানুষের লড়াই করে এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতার কথা আর নতুন করে না-ই বা বললাম। তবে এটিই গল্পের শেষ নয়। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে ধারার সূচনা করেছি তা শুধু অক্ষুণ্ন নয়, আরো গতিময় করতে হবে। দক্ষিণ কোরিয়া তেমনটি করেই আজ উন্নত দেশ। ভিয়েতনামও সেই পথে হাঁটছে। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং চীনও একই পথের যাত্রী। তাই কোনো দিকে না তাকিয়ে দেশি-বিদেশি সম্পদের সমাবেশ করে অন্তর্ভুক্তিমূলক উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথেই আরো অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণ করলে আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে স্বল্প সুদে ঋণ পাব না, জাতিসংঘ থেকে অনুদান এবং সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ফ্রি টিকিট পাব না—এসব অবান্তর ভাবনা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। আমরা এখন আর কতই বা অনুদান ও রেয়াতি সুদে বিদেশি ঋণ নিই? প্রায় সব ঋণই তো ‘নন-কনসেশনাল’ হয়ে গেছে। ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার সুযোগ নিয়ে শক্তিশালী প্রতিযোগী হিসেবেই বাংলাদেশকে বিশ্ব অর্থনীতির মাঠে দৌড়ে খেলতে হবে। চীন থেকে অনেক বিদেশি উদ্যোক্তাই ‘রুলস অব অরিজিন’-এর সুযোগ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশ থেকেই বিদেশিরা তাঁদের পণ্য রপ্তানি করবেন। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, এসব পণ্য রপ্তানি থেকে তাঁদের আয়ের একটি বড় অংশ যেন বাংলাদেশেই পুনঃ বিনিয়োগ হয়। আমাদের মধ্য ও উচ্চ আয়ের মানুষের সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। তাদের উচ্চমানের পণ্যের ভোগের চাহিদাও বাড়ছে। বাড়ন্ত এই অভ্যন্তরীণ বাজারের দিকে নিশ্চয় বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও মনোযোগ রয়েছে। তাই আমাদের দেশীয় বাজারেও প্রযুক্তিনির্ভর নয়া পণ্যের বিকিকিনি বাড়বে।

আমাদের তাই দ্রুতই ‘নিট আমদানিকারক’ দেশের পরিচয় ঘুচিয়ে আরো আমদানিবিকল্প এবং রপ্তানিমুখী শিল্প গড়ার প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামোগত সুযোগ বাড়িয়ে যেতে হবে। রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল আমাদের দেশেই দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা আমাদের ইপিজেড, বেজা, বেপজা, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদন করবেন—সেই সক্ষমতা অর্জনের দিকেই আমাদের নীতি-মনোযোগ বাড়াতে হবে। এরই মধ্যে আমরা সিমেন্ট, পেট্রো কেমিক্যাল, উন্নতমানের বড় সুতা উৎপাদনে প্রভূত উন্নতি করেছি। এসব সহায়ক শিল্পের উন্নয়নে একদিকে দেশি বাজারের জন্য শিল্পায়নের জন্য কাঁচামালের চাহিদা মিটছে, অন্যদিকে আমাদের প্রতি ইউনিট রপ্তানি আয় থেকে মূল্য সংযোজনও বাড়ছে।

আমাদের উন্নয়নের এই ধারাকে আরো বেগবান করতে তাই সরকারকে অবারিত বিদ্যুৎ সরবরাহ, নির্ঝঞ্ঝাট পরিবহন, দক্ষ বন্দর ব্যবস্থাপনা, দক্ষ জনশক্তি এবং ডিজিটাল গভর্ন্যান্সকে আরো উন্নত করার যেসব নীতি বর্তমান সরকার গ্রহণ করেছে, সেগুলো যেন চলতে থাকে। পাশাপাশি আমাদের সক্রিয় ব্যক্তি খাতকে আরো দক্ষ করার জন্য ব্যবসায় সহায়ক নীতি, তথ্য, আর্থিক খাতের আরো আধুনিকায়ন ও সুশাসন এবং সর্বোপরি মহামারি-উত্তর নয়া পৃথিবীতে নিজেদের শক্তিমত্তা বজায় রাখতে সবুজ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়নের কৌশলকে আরো জোরদার করার কোনো বিকল্প নেই। এসব নীতি রূপান্তরের প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুকন্যা পুরোপুরি অঙ্গীকারবদ্ধ। নেতৃত্বের এই গুণপনা আমরা এই অভাবনীয় মহামারি প্রতিরোধে, বিশেষ করে টিকা ব্যবস্থাপনায় খুব মনোযোগের সঙ্গে দেখেছি। বোঝাই যায়, তিনি অনেক দূরে দেখতে পান। এলডিসি থেকে উত্তরণ-উত্তর পর্বে এই নীতি-বিচক্ষণতা এবং আমাদের সরকারি-বেসরকারি-সামাজিক সক্ষমতা অর্জনের স্পৃহা অব্যাহত থাকুক। নিশ্চয় সামনের দিনগুলো হবে আমাদের।

লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত