আমাদের বিজয়ের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আমাদের যে আদর্শ সেগুলো চলচ্চিত্রে প্রতিফলিত হতে হবেঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

3186

Published on জানুয়ারি 17, 2021
  • Details Image

প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন বাঙালির বিজয়ের ইতিহাস সঠিকভাবে জানতে পারে, সেদিকে লক্ষ রেখে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৯ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি যেন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। আমাদের শিল্প-সংস্কৃতির প্রয়াসগুলো যেন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়। আমাদের যে মহান অর্জন; লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে বিজয় অর্জন করেছি আমাদের সেই বিজয়ের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আমাদের চেতনা, আমাদের যে আদর্শ সেগুলো চলচ্চিত্রে প্রতিফলিত হওয়া একান্ত দরকার।’

চলচ্চিত্র শিল্প সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাদের এইটুকু অনুরোধ করব যে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করার পর বিকৃত করা হয়েছে। কাজেই সেই ইতিহাসটা যেন সবাই জানে, আর আমরা তো বীরের জাতি, মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। কাজেই আমাদের সেই বিজয়ের ইতিহাসটা প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন মনে রাখে, সে ধরনের চলচ্চিত্র আরও নির্মাণ হওয়া দরকার।’

‘কারণ আমি জানি, আমি একজন রাজনীতিবিদ যত বক্তৃতা দিয়ে কথা বলি না কেন, একটি নাটক বা একটি সিনেমা বা একটা গানের মধ্যদিয়ে বা কবিতার মধ্যদিয়ে অনেক কথা বলা যায়। এগুলো নিয়ে মানুষের অন্তরে প্রবেশ করা যায়, মনের গহিনে প্রবেশ করা যায়। কাজেই সে জন্য একটা আবেদন কিন্তু রয়েছে’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সিনেমা শিল্প সংশ্লিষ্টরা করোনাকালে জনসচেতনতা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে তাই তাদের প্রতিও ধন্যবাদ জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এ শিল্প নষ্ট হয়ে যাক, তা আমরা কখনও চাই না। আমি জানি, টেলিভিশনের যুগ আসার পরে সিনেমা শিল্পটা একটু থমকে গেছে। এখন কিন্তু আবার সিনেমার যুগটা ফিরে এসেছে। আপনারা জানেন যে, শুধু আামদের দেশে না, পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও মানুষ কিন্তু এখন সিনেমা দেখে। হয়ত হলে যায় না, ঘরে বসে দেখে। কিন্তু হলেও আমাদের দর্শক টানতে হবে। মানুষ যেন সিনেমা হলে আসে তার ব্যবস্থা করতে হবে। সিনেমাগুলো সেভাবেই তৈরি করতে হবে যেন পরিবার-পরিজন নিয়ে দেখতে পায়।’

‘এ ছাড়া আমাদের ছোট শিশুদের জন্য সিনেমা তৈরি করা একান্তভাবে প্রয়োজন’ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর মধ্যে দিয়ে একটা শিশু তার জীবনটাকে দেখতে পারবে, জীবনটাকে তৈরি করতে পারবে, বড় হতে পারবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে শিশুদের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা, তার মধ্যে দিয়ে একটা শিক্ষণীয় বিষয়গুলো প্রতিফলিত করা, এটাও কিন্তু আমাদের করতে হবে।’ কাজেই অনেক দায়িত্ব আপনাদের। সেই দায়িত্বটাও পালন করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

পাশাপাশি চলচ্চিত্র শিল্পকে আধুনিক করার জন্য যা যা দরকার সেটা সরকারের পক্ষ থেকে আমরা করছি এবং করে যাব বলেও আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।

পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো আছি সবসময় আপনাদের পাশে। কারণ আমার বাবার হাতে গড়া এফডিসি। সিনেমা তৈরি করার যে উৎসাহটা তিনিই দিয়েছিলেন। কাজেই সেদিকে মাথায় রেখে আমি সবসময় কাজ করি। আর আমাদের যারা শিল্পী তাদের সবসময় আলাদা একটা সম্মান আমাদের সমাজে আছে। তারপরও আমি আলোচনা করে দেখব। আপনাদের যারা আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন, তাদের সম্মাননাটা যেন সবসময় তারা পান, সে ব্যবস্থা করার জন্য যা করণীয় আমরা তা করব।’

যারা পুরস্কারপ্রাপ্ত তারা তো সবসময় সম্মান পান সেটিও আপনারা পাবেন বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী সবার সুস্থতা ও শুভ কামনা জানিয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হয়ে জীবনযাপনের আহ্বান জানান।

চলচ্চিত্র শিল্প সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষকে শিল্পটাকে আরও সহযোগিতা করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণ শুধু শিল্পী কলাকৌশলী না, আমাদের দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সিনেমা শিল্প অনেক অবদান রাখতে পারে। সেইভাবেই আপনাদের আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মানুষকে আরও উদ্বুদ্ধ করা, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন আমাদের ইতিহাস জানতে পারে, বিজয়ের ইতিহাস জানতে পারে এবং মানুষ যেন ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আপনারা করবেন।’

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবটা যদি কম থাকে তাহলে আগামীতে দেখা হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তরুণ সমাজ খুব এগিয়ে এসেছে, সেটি আমাদের জন্য সত্যি খুব আনন্দের বিষয়। শিল্পজগত সামনের দিকে আরও এগিয়ে যাবে। আমরা তো বৃদ্ধ হয়ে গেছি। কাজেই আজ আছি, কাল নেই। কিন্তু আমাদের তরুণ সমাজ যে সিনেমা শিল্পের দিকে তাদের আগ্রহ বেড়েছে, তারা যে এগিয়ে আসছে, এটি আমাদের জন্য একটি ভালো লক্ষণ।’

চলচ্চিত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে সিনেমা হল নির্মাণে সরকার এক হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

একই অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সভাপতির ভাষণে বলেন, এ তহবিল থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে বন্ধ সিনেমা হলগুলো চালু করা যাবে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ পুরস্কার ও সম্মাননা জয়ীদের হাতে পুরস্কার হাতে তুলে দেন। ২৬ ক্যাটাগরিতে ৩৩ জন বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এবং তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। অনুষ্ঠানের শুরুতে তথ্যসচিব খাজা মিয়া স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

উল্লেখ্য যে, ১৯৭৬ সালের ৪ এপ্রিল প্রথম চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে প্রথম চালু করা হয় আজীবন সম্মাননা পুরস্কার। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৯ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

 

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত