2975
Published on জানুয়ারি 3, 2022তাজিন মাবুদ ইমনঃ
শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি পতাকাবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় বলতেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস’। বাংলা, বাঙালি, স্বাধীনতা ও স্বাধিকার অর্জনের লক্ষে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের অ্যাসেম্বলি হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার আগে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার পর সর্বপ্রথম মাতৃভাষা বাংলার জন্য সংগ্রাম করেছিল। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ভাষা আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জল ভূমিকা ছিল। বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছিল অনেককে। তারপর আমরা আমাদের ভাষা হিসেবে বাংলাকে পেয়েছি।১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী ছিলেন, যাতে ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর ভ্যানগার্ড ছিল। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দুর্বার ছাত্র আন্দোলন গড়ে, তোলে যা বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৬ দফা দাবি দিয়েছিলেন, যা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন বেগমান হয়। তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাহসী আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।
১৯৬৯ সালে ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯৬৯ সালে বাংলার ছাত্রসমাজ সারাদেশে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলে, যা গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বাংলার ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেন, যা ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের গতিকে ত্বরান্বিত করে।
১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে তৎকালীন ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভ্যানগার্ড হিসেবে ছাত্রলীগ কাজ করত। সারা বাংলাদেশে পাকিস্তানের অপশাসনের বিরুদ্ধে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্বাচিত করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ছাত্রলীগ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে, যার মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের গতি ত্বরান্বিত হয়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী শহীদ হয়।জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ ও যুক্ত করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি।বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে ছাত্রলীগ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভূমিকা প্রশংসনীয়। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যুদ্ধাপরাধ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজপথে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। ২০১৭সালে মায়ানমার যখন রোহিঙ্গা দের নির্মমভাবে নির্যাতন এবং হত্যা করছে সেই সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের জায়গা দে বাংলাদেশে।উখিয়া তে তাদের জন্য ক্যাম্প করে দিয়েছিল।সেখানে কক্সবাজার ছাত্রলীগ এর উদ্যোগে প্রায় ১৫০তম দিন এর উপর রাত দিন ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করে চিকিৎসা সেবা দিয়েছিল।ছাত্রলীগ এর কর্মীরা রান্না করে তাদের ফ্রি তে দিয়েছিল।২০১৭সালে রাঙামাটি তে পাহাড় ধসের ঘটনা আমরা জানি।যেখানে ৫জন সেনাবাহিনী মৃত্যুবরন করেছিল।অনেক ঘরবাড়ি বিলুপ্ত হয়ে যায়।৫জন সেনাবাহিনী এর মধ্যে একজন নতুন বিবাহ করে দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে সেদিন মৃত্যুবরন করেছিল।আমরা সবাই এই কথা জানি।আমরা কি এটা জানি সেখানে যাদের ঘরবাড়ি চলে গিয়েছে তারা কিভাবে খাবার খেয়েছে তাদের কারা রান্না করে খাবাইছে।একমাত্র রাউজান উপজেলা দক্ষিণ এর সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সালাউদ্দিন ভাই ও ইমাম গাজ্জালি কলেজ ছাত্রলীগ ও কাপ্তাই উপজেলা ছাত্রলীগ এর নেতা-কর্মীরা সেদিন রান্না করে খাবাইছিল।২০১৯সালে করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়ার আগে থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর প্রতিটা নেতা কর্মী মাস্ক,হ্যান্ড স্যানিটাইজার,এবং সচেতনমূলক লিফলেট বিতরন করেছে।নিজেদের তৈরী হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেশের মানুষের কাছে বিতরন করেছে।করোনা উপসর্গ হলে কি করা উচিত এবং অন্যান্য রোগ হলে ডাক্তার এর চেম্বারে মানুষ যেতে পারছে না।তখন সব মেডিকেল ছাত্রলীগ এর নেতৃত্বে টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া হয়।অসহায়,দরিদ্র,এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের মাঝে স্বেচ্ছাসেবক হয়ে ত্রান পৌছায় দেয়।।এই মহামারি তে যখন কৃষক রা ধান কাটার জন্য শ্রমিক পাচ্ছে না।নিজ স্বেচ্ছায় ধান কেটে দে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর নেতা কর্মীরা।আমাদের দেশে প্রতি বছর বর্ষাকালে বন্যা হয়।অনেক গ্রামের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।সেই সময় তাদের পাশে একমাত্র ত্রান নিয়ে পৌছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর কর্মীরা।কাধে করে ত্রান নিয়ে ঘরে ঘরে দিয়ে আসে ছাত্রলীগ এর নেতা-কর্মীরা।
সামাজিক দিক দিয়ে ও দেশের জন্য,জনগণের জন্য তৃনমূল ছাত্রলীগ কি ভূমিকা পালন করছে তার কিছু কথা আজ বলতে চাই:- ২০২০সালের ২৯শে অক্টোবর তখন মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বেশি।সেই সময় আত্নীয় স্বজন এমনকি নিজের পরিবারের মানুষরা পরিবারের কার ও একটু অসুস্থ লাগলে তাকে এড়িয়ে চলত।কিন্তু ছাত্রলীগ এই মহামারি তে ও নিজের জীবন এর চিন্তা না করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।হোক সেই গরিব,বেওয়ারিশ, অথবা ধনী।রাউজান পাহাড়তলী কাপ্তাই সড়কে এক মানসিক প্রতিবন্ধী(বেওয়ারিশ ) মহিলা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে।উনাকে উদ্ধার করে রাউজান উপজেলা ছাত্রলীগ দক্ষিণ এর সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সালাউদ্দিন ভাই নিজের হাতে নিয়ে এম্বুলেন্স করে প্রথমে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে ,পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাউজান উপজেলা ছাত্রলীগ দক্ষিণ এর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ভাই ও ইমাম গাজ্জালি কলেজ ছাত্রলীগ এর সহযোগিতায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষনা করে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর নির্দেশ ছাত্রলীগ এর প্রতিটা নেতা-কর্মীর বাস্তবায়ন করা ছাত্রলীগ এর দায়িত্ব।এবং ছাত্রলীগ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
৯ই অক্টোবর কাপ্তাই মহাসড়কে সি.এন.জি করে যাওয়ার পথে ২০০লিটার মাদক (চোলাই)মদ, ড্রাইভার সহ আটক করে রাউজান উপজেলা ছাত্রলীগ দক্ষিন এর সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সালাউদ্দিন ভাই ও ইমাম গাজ্জালী কলেজ ছাত্রলীগ এর যৌথ অভিযানে উদ্ধারকৃত (চোলাই মদ) পুলিশের হাতে হস্তান্তর করে ছাত্রলীগ।
এত সংগ্রামের পর ও আমাদের দেশের কিছু নামধারী সুশিল ব্যাক্তি ছাত্রলীগ নিয়ে খারাপ মন্তব্য করে থাকে।বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ ও উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরের লক্ষে ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মী রাজপথে সাহসী ভূমিকা রাখছে। ছাত্রলীগের ইতিহাসে যেমন হাজার হাজার যোগ্য নেতার জন্ম হয়েছে তেমনই কিছু সংখ্যক অযোগ্য নেতার জন্ম হয়েছে। যার কারণে মাঝে-মধ্যে বিতর্কিত হতে হয় বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠনটিকে।তাদের চিহ্নিত করতে হবে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও দিকনির্দেশনায় কাজ করে গেলে বাংলাদেশের সুনাম অক্ষুন্ন থাকবে।বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা এর ভ্যানগার্ড হিসেবে ছাত্রলীগ কাজ করে যাচ্ছে।
“বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দুর্নিবার,দেশরত্নের হাত ধরে মেধায় বিশ্ব জয়ের অঙ্গিকার” এই স্লোগানে গৌরব,ঐতিহ্য,সংগ্রাম ও সাফল্যের বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর ৭৩তম প্রতিষ্টা বার্ষিক সফল হোক।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
জয়তু শেখ হাসিনা।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়; কর্মী,বাংলাদেশ ছাত্রলীগ