দেশের আন্দোলন-সংগ্রামে সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে ছাত্রলীগেরঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

4300

Published on জানুয়ারি 4, 2021
  • Details Image
  • Details Image
  • Details Image
শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে সংগঠনের মূলমন্ত্রের আলোকে আদর্শবান নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার আহবান জানিয়েছেন।
 
সোমবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়ে এ কথা বলেন তিনি। জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে আগামীতে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ সময় কিছু গণমাধ্যম ছাত্রলীগের ভালো কাজ দেখে না বলেও সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
 
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কেন্দ্রীয় আয়োজন হলো অনলাইনেই। জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আলোচনার মূল কার্যক্রম শুরু করেন নেতা-কর্মীরা। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় গণভবন থেকে যোগ দেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। একযোগে দলীয় সঙ্গীত জন্মদিনের কেক কাটা হয়।
 
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সব আন্দোলন সংগ্রামে সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে ছাত্রলীগের। তিনি জানান, ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করাই ছিল জিয়াউর রহমানের লক্ষ্য। পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ আবার উন্নতি করতে পারে, এটা তারা কখনো মানতে চায়নি। বরং বাংলাদেশকে তারা ব্যর্থ করতে চেয়েছিল। সেই চক্রান্ত এখনও চলছে।
 
মহামারিতে মানুষের সাহায্যে অগ্রগামী হয়ে থাকা ছাত্রলীগের প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কিছু গণমাধ্যম সংগঠনটির ভালো কাজ দেখে না।
 
সরকার প্রধান বলেন, তোমরা যে কাজগুলো করে গেছো, তার জন্য সব সময় আমরা সাধুবাদ জানাই। হয়তো ক্ষেত্র বিশেষে কোথায়ও কোথায়ও দুই একটা ঘটনা ঘটে। আমাদের কিছু পত্রপত্রিকা আছে, যত ভালো করে তা লেখার যোগ্যতা তাদের নেই। যদি কোন খুঁত পায়, তাহলে সেটাকে বড় করে লিখতে পারে, এটা তাদের একটা দৈন্যতা। কাজেই সেগুলো আমি হিসেবে ধরি না। 
 
ছাত্রলীগের মূল মন্ত্র ‘শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির’ উদ্ধৃতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শান্তির পথ ধরে প্রগতির পথে আমরা এগিয়ে চলবো। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
 
‘আদর্শ নিয়ে না চললে কখনো বড় হতে পারবে না। দেশকে কিছু দিতে পারবেনা। মানুষকে কিছু দিতে পারবেনা’, বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ গ্রহণ করেন।
 
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে সংগঠন জাতির পিতা গড়ে তুলছিলেন মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের জন্য। যে সংগঠন এেেদশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখে গেছে, যে সংগঠন এদেশে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং এগিয়ে যাওয়ায় সংগ্রামী ভ’মিকা নিচ্ছে- সে সংগঠনের নামই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এই ছাত্রলীগ এগিয়ে যাবে সেটাই আমার কামনা।’
 
তিনি বলেন, ‘নিজের ঐতিহ্য মাথায় রেখে জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তোমরা নিজেদেরকে গড়ে তুলবে।’ যেকোন রাজনীতিবিদের জন্য আদর্শ নিয়ে চলাটাই সবথেকে বড় কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সততা এবং আদর্শের পাশাপাশি লক্ষ্য স্থির থাকলে পরে যেকোন অর্জনই সম্ভব। আর এটা জাতির পিতা দেখিয়ে গিয়েছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘বিশ^ দরবারে বাঙালি জাতি মাথা উঁচু করে চলবে। সেটাই আমাদের আজকের দিনে প্রতিজ্ঞা।’
 
ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে স্মৃতিচারণমূলক বক্তৃতা করেন জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং ডা.মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। এছাড়া ছাত্রীলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাটার্য বক্তৃতা করেন।
 
অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরে ভিডিও ডকুমেন্টারি পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংক এবং স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
 
বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার সহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আলোচনা সভাটি সরাসরি সম্প্রচার করে। এছাড়া, দেশের সকল জেলা, মহানগর ও উপজেলার দলীয় কার্যালয়ে প্রজেক্টর এবং সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সম্প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হয়।
 
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে জাতির পিতার লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী,’ ‘কারাগারের রোজনামচা’, ‘আমার দেখা নয়াচীন’ এবং ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইন্টালিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’এর বিভিন্ন খন্ডগুলো পড়ে দেখার আহবান জানান।
 
সে সময়ে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ডিক্লাসিফাইড রিপোর্ট শেখ রেহানার সহযোগিতায় খুঁজে বের করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘সময়মতো সেগুলোও প্রকাশ করা হবে।’
 
তিনি বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশে নয় পৃথিবীর ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের যে অবদান তা এসব রিপোর্ট থেকেই বের হয়ে আসে।’ জাতির পিতার ত্যাগ এবং দেশাত্মবোধ থেকে শিক্ষা গ্রহণের পাশপাশি দেশের প্রকৃত ইতিহাস অন্বেষণের জন্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি গুরুত্বারোপ করেন। দেশের বর্তমান স্বাক্ষরতার হার ৭৪ শতাংশ, উল্লেখ করে একে আরো বৃদ্ধিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
 
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে স্কুল-কলেজ বন্ধ রয়েছে এবং স্কুল চালুর উদ্যোগ নেয়ার সময় করোনার সেকেন্ড ওয়েভ চলে আসার প্রসংগ টেনে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের সংসদ টিভির মাধ্যমে টেরিস্টোরিয়াল ব্যবহার করে এবং অনলাইনে শ্রেনী কার্যক্রম অব্যাহত রাখার উল্লেখ করেন।
 
তাঁর সরকার করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিবারের মত এবারও প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রায় ৩৪ কোটি ১৬ লাখ ৬২ হাজার পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করেছে এবং প্রায় দুই কোটি বৃত্তি এবং উপবৃত্তির টাকা বিতরণ অব্যাহত রেখেছে বলেও সরকার প্রধান জানান। শেখ হাসিনা এ সময় পাঠ্যপুস্তকের বাইরের বিভিন্ন বই পড়ে জ্ঞান ভান্ডার সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এই সময়কে কাজে লাগানোর আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছাত্রদেরকে আমি বলবো বসে না থেকে যা পাও, নিজেরা কিছু পড়াশোনা কর। এখানে একটা সুযোগ তাই পাঠ্যপুস্তকতো পড়বেই। অন্যান্য বইও পড়তে হবে। কারণ জ্ঞান যত বেশি অর্জন করতে পার। ততই নিজেকে আরো সম্পদশালী মনে করবে।’
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধন, সম্পত্তি থাকেনা। কিন্তু শিক্ষা এমন একটা সম্পদ যা কেউ কেড়ে নিতে পারবেনা। আর এই সম্পদ থাকলে জীবনে কোনদিন হোঁচট খাবেনা, আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে সে শিক্ষাই আমরা দিয়েছি।’ ‘কাজেই তোমরা সেভাবেই শিক্ষা নেবে এবং ছাত্রলীগেরও সেটাই কাজ থাকবে,নিজেরা পড়বে এবং অন্যকেও পড়াও’ বলেন তিনি।
 
নিজ গ্রামের নিরক্ষরকে অক্ষর জ্ঞান প্রদানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি তাঁর আহবানের পুনরোল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
 
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে গ্রামের স্কুল, আত্বীয়-স্বজন এবং পাড়া প্রতিবেশিকে পারলে পড়াশোনায় সহযোগিতা কর।’ প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলার এবং করোনা নামক সংক্রামক ব্যাধি থেকে নিরাপদ থাকার জন্য সকলের ফেস মাস্ক ব্যবহারের প্রতি তাঁর আহবান ও পুণর্ব্যক্ত করেন।
 
ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রামে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দানকারী ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। বাংলা, বাঙালির স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্ম হয়।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত