3353
Published on নভেম্বর 15, 2020পাসপোর্ট নিয়ে স্পেন প্রবাসীদের সকল অভিযোগের অবসান হয়েছে। বছরখানেক আটকে থাকা পাসপোর্ট হাতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশিরা। ১১ নভেম্বর দেশ থেকে স্পেনের মাদ্রিদে বাংলাদেশ দূতাবাসে পৌঁছেছে পাসপোর্টগুলো।
জানা গেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমিনের সরাসরি হস্তক্ষেপ, পাসপোর্ট অধিদফতরের নতুন ডিজি মেজর জেনারেল আইয়ূব চৌধুরীর সার্বিক তদারকি, বাংলাদেশ দূতাবাস মাদ্রিদ স্পেনের রাষ্ট্রদূত হাসান মাহমুদ খন্দকারের নিরলস প্রচেষ্টায় পাসপোর্টগুলো প্রবাসীদের কাছে পাঠানোর প্রস্তুতি নেয় বাংলাদেশ দূতাবাস।
এদিকে অপেক্ষারত বাংলাদেশিরা পাসপোর্ট অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে অর্থনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে তাদের পাসপোর্ট ছাড়িয়ে আনছে বলে অভিযোগ করেছে অনেকে।
প্রবাসীরা জানান, বাংলাদেশি পাসপোর্ট না পাওয়ায় অনেকের স্প্যানিশ রেসিডেন্ট কার্ড রিনিউ করতে পারছে না। এতে করে অনেকের অবৈধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অবৈধ হলে বাংলাদেশে বৈধভাবে রেমিট্যান্স পাঠানোর সুযোগ নেই।
ভুক্তভোগীরা গত বছর প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের কাছে সরাসরি বিষয়টি সমাধানের অনুরোধ করলে তারা সমাধানের আশ্বাস দেন।
কিন্তু বছর পেরিয়ে গেলেও সমাধান হয়নি বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক সুপারিশকৃত আটকেথাকা পাসপোর্টগুলোর। এতে ভুক্তভোগীরা ছিলেন চরম হতাশা এবং ভবিষ্যত অনিশ্চয়তায়।
‘পাসপোর্ট জটিলতায় ভুগছে স্পেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নজরে আসে এবং বর্ণিত বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ দূতাবাস স্পেনের রাষ্ট্রদূত বর্ণিত বিষয়ে পাসপোর্ট অধিদফতর বরাবর একাধিকপত্র প্রেরণ করলেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি অদ্যাবধি পরিলক্ষিত হয়নি মর্মে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে রাষ্ট্রদূত জানানো হয়।
এমতাবস্থায় বর্ণিত বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদটি পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে মহাপরিচালক বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরকে প্রেরণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব ড. দেওয়ান মো. শাহরিয়ার ফিরোজ। পত্রটি ১৪ অক্টোবর পাঠানো হয়।
এতে করে প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধান হচ্ছে খবর শুনে প্রবাসীরা আনন্দে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, তার পাসপোর্ট প্রায় দেড় বছর ধরে আটকে আছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, বন পরিবেশমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী বলার পর পাসপোর্ট অধিদফতরের ডিজি অ্যাপ্রুভাল চিঠি ইস্যুর অনুমোদন দেন তদন্ত শেষে।
অন্য এক ভুক্তভোগী বলেন, একই সমস্যা নিয়ে তারা দুই বন্ধু পাসপোর্টের আবেদন করেন। তার বন্ধু দালালের মাধ্যমে টাকা দিয়ে পাসপোর্ট পেলেও সে এখনও পাসপোর্ট পায়নি। ইতোমধ্যে পাসপোর্টের জন্য তার স্প্যানিশ নাগরিকত্ব হারানোর পথে।
স্পেনের কমিউনিটি নেতারা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান, তারাও পাসপোর্ট অধিদফতর একটি দুর্নীতিগ্রস্ত অধিদফতর বলে আখ্যা দেন। এখানে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না বলেও অভিযোগ করেন। দূতাবাসের শতভাগ চেষ্টার পরও দালাল চক্রের কারণে তারা প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপকার করতে পারছে না। পাসপোর্ট অধিদফতরে দালাল হটিয়ে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানান তারা।
স্পেন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জানান, শেখ হাসিনা একজন প্রবাসীবান্ধব প্রধানমন্ত্রী। প্রবাসীদের নিয়ে সবসময় ভাবেন তিনি। প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে তিনি সবসময় খোঁজ খবর রাখেন। আমরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর মাধ্যমে সৌদি আবর থেকে বিনা খরচে ৪টি লাশ বাংলাদেশে পাঠিয়েছি।
তিনি জানান, দীর্ঘদিনের পাসপোর্ট জটিলতা সমাধানের জন্য প্রায় ১ বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্ত্রীকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর স্পেন সফরকালে আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদেরকে এই সমস্যা সমাধানের অনুরোধ করি। সেই ফলসূতিতে আজকে প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানের পথে। ধন্যবাদ জানাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে।
সূত্রঃ jagonews24