2916
Published on নভেম্বর 5, 2020ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশের পোশাকের যেমন খ্যাতি রয়েছে, ঠিক তেমনি চাহিদা রয়েছে শাক-সবজিরও। শুধু ইউরোপ নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যে রফতানি হয় বাংলাদেশের সবজি। একই সঙ্গে রফতানি আয়ে বেশ ভাল অবদান আছে শুকনো খাবার বা ড্রাই ফুড খাতের। গত অর্থবছরে কৃষি খাতে মোট রফতানি আয়ের ২৫ শতাংশই এসেছে শুকনো খাবার থেকে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে চা, তামাক, ফুল, ফল, মসলাসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য রফতানি হয়। বর্তমানে বাংলাদেশী এসব পণ্য যাচ্ছে পৃথিবীর ১৪০ দেশে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার মূল্যের কৃষিপণ্য রফতানি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বড় বড় কোম্পানির তৈরি আটা, সুজি, বিভিন্ন ধরনের শুকনা খাবার, হোম ট্রয়লেট্রিজ, গুঁড়া মসলার চাহিদা বাড়ছে পশ্চিমা বিশ্বে। এমনকি পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও এখন খাদ্য আমদানির জন্য বাংলাদেশী কৃষিপণ্যের দিকে ঝুঁকছে। কৃষিজাত পণ্যের রফতানি বাড়াতে সরকার নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সেই লক্ষ্যে বিদ্যমান রফতানি নীতিতে কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।
জানা গেছে, করোনার মধ্যে বেশ কয়েক মাস শাক-সবজি রফতানি বন্ধ ছিল। এর পরও বছর শেষে ৬৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে এই খাতে। এই প্রবৃদ্ধি দেশের সব খাতের রফতানির মধ্যে একক পণ্য হিসেবে চতুর্থ সর্বোচ্চ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ১৩ কোটি ডলারের শাক-সবজি রফতানির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। বিপরীতে শাক-সবজি রফতানি হয়েছে ১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৬ শতাংশ বেশি রফতানি হয়েছে এই খাতে। রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে আগের বছরের হিসাবেও। আগের বছর সবজি রফতানি হয়েছিল প্রায় ১০ কোটি ডলারের। সে হিসাবে রফতানি প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৬৪.৫৩ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধি ২০১৯-২০ অর্থবছরে শুধু কৃষি খাতের মধ্যেই সর্বোচ্চ তা নয়, বরং পুরো রফতানি খাতের মধ্যে চতুর্থ সর্বোচ্চ। এখন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পটোল, বেগুন, বরবটি, চিচিঙ্গা, পান ইত্যাদি পণ্যই বেশি রফতানি হচ্ছে। ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সবজি রফতানি হয়েছিল ৬৫ লাখ ডলার, আগস্টে তা বেড়ে হয়েছে ৭২ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এতে কোভিডের কারণে তৈরি হওয়া ঘাটতিও কমে এসেছে। জুলাই মাসে রফতানি ঘাটতি ছিল ২২ শতাংশ, আগস্টে কমে হয়েছে ৯ শতাংশ। চলতি বছর সবজি রফতানির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২৩ কোটি ডলার। জানতে চাইলে সবজি ফলমূল রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মারজান ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ উর রহমান বলেন, সেন্ট্রাল প্যাকিং সেন্টার হওয়ার পর থেকে শাক-সবজির মান-সংক্রান্ত সমস্যা অনেক কমে এসেছে। যেখানে কনট্যাক্ট ফার্মিং হচ্ছে, সেখানকার সবজি নিয়ে সমস্যা নেই। তবে প্রচলিত পদ্ধতির চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত সবজি ও ফলমূলে কখনও কখনও সমস্যা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এমন উদ্যোগ নিলে তা সবার জন্য ইতিবাচক হবে।
ইপিবির তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১১২ কোটি ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে দেশ থেকে ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার মূল্যের কৃষিপণ্য রফতানি হয়েছে। এর মধ্যে সবজি ছাড়াও ফলমূল রফতানি হয়েছে চার লাখ ৯০ হাজার ডলারের, যা আগের বছরের চেয়ে ৪৮ শতাংশ বেশি। শুকনো খাবার রফতানি হয়েছে ১৯ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের, যা আগের বছরের চেয়ে ১৪ শতাংশ কম। তিন কোটি ৩২ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের মসলা রফতানি হয়েছে, এই খাতেও কমেছে ১৯ শতাংশ। এছাড়া চা রফতানি হয়েছে ৩১ লাখ ২০ হাজার ডলার মূল্যের, এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশ। অন্যদিকে জীবিত ও হিমায়িত মাছ রফতানি হয়েছে ৪৫ কোটি ৬১ লাখ ডলারের। বাংলাদেশ এ্যাগ্রো প্রসেসর এ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ৯৮ দেশে ৪৮ ধরনের প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রফতানি হয়। সংগঠনটি মনে করে, মান সনদসহ অন্যান্য রফতানি বাধা দূর করা গেলে এ খাত থেকে বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল এ্যান্ড এ্যালায়েড প্রোডাক্ট এক্সপোর্টার এ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, শাক-সবজি রফতানির সম্ভাবনা থাকলেও বিভিন্ন কারণে এর পুরোটা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। মান-সংক্রান্ত সমস্যা আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তবে রফতানি কাজের ব্যবস্থাপনা বিশেষ করে বিমানবন্দরে বিশেষ স্ক্যানার না থাকায় এ সমস্যা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মান সনদ-সংক্রান্ত সমস্যা দূর করা গেলে শাক-সবজি, ফলমূল, শুকনো বা প্রক্রিয়াজাত খাবারের রফতানি আরও বাড়বে। বর্তমানে কোন কোন প্রক্রিয়াজাত খাবার রফতানির জন্য বিদেশ থেকে সনদ সংগ্রহ করতে হয়। এতে সময় ও অর্থ দুটোই বেশি লাগে। আবার অনেকে তাও সংগ্রহ করতে পারেন না। ফলে সরকার এ রকম একটি সংস্থা বা ল্যাব স্থাপন করলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি রফতানি আয় বাড়বে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রুট ভেজিটেবল এ্যান্ড এলাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক ও রাজধানী এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার গোবিন্দ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘সব কিছু স্বাভাবিক থাকলে রফতানি অনেক বেশি হতো। আমাদের মূলত গ্রীষ্মকালীন সবজিই বেশি রফতানি হয়। বেশি হয় জুলাই থেকে আগস্টে। এবার এই সময়টাতেই করোনা ও বন্যায় রফতানি একেবারেই কমে গেছে। তবে ধীরে ধীরে বাড়ছে। এই খাতে রফতানির বাজার আরও বাড়াতে চাইলে আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষাগার দরকার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যে কোয়ারেন্টিন সার্টিফিকেট দেয়, সেটার ওপর অনেক দেশেরই আস্থা নেই।’
জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন বলেন, করোনা সঙ্কটে দেশের রফতানি আয় নিয়ে যে ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, গত তিন মাসের রফতানি আয় আমাদের সে শঙ্কা অনেকটা দূর করে দিয়েছে। করোনা-পরবর্তী বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশের ওষুধ, হাল্কা প্রকৌশল ও কৃষিজাত পণ্যের মতো অপ্রচলিত পণ্য খুব ভাল করছে। রফতানি খাতে বৈচিত্র্য বাড়াতে এসব পণ্যের বিপরীতে নীতি-নির্ধারণী সহায়তা দেয়ার বিষয়েও আমাদের সুপারিশ রয়েছে। অর্থাৎ অপ্রচলিত পণ্য রফতানি বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা করোনা-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। বাণিজ্য সচিব আরও বলেন, করোনা সঙ্কট শুরু হওয়ার পর সিঙ্গাপুর ছাড়াও সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো খাদ্যজাত কৃষিপণ্য আমদানির আগ্রহ দেখিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। দেশের কৃষিপণ্য রফতানি সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে এটি অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
কৃষিপণ্য রফতানি হচ্ছে ১৪০ দেশে:
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, মরিশাস, ভারত, সুইডেন, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্স, কুয়েত, ভুটান, সিয়েরালিওন, সেনেগালসহ ১৪০টি দেশে বাংলাদেশের কৃষিপণ্য রফতানি হয়। এসব পণ্য রফতানিতে এখন মূল্যসংযোজনের হার বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য বিভিন্ন কৃষিপণ্যের সমন্বয়ে নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন করে সেগুলো রফতানির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে তাজা সবজির পরিবর্তে হিমায়িত সবজি, রান্না করা হিমায়িত সবজি, চালের পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের পিঠা, ফলের পরিবর্তে বিভিন্ন ফলের তৈরি জুস রফতানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর দিকেও নজর দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষিজাত পণ্যের রফতানি বাড়াতে সরকার নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সেই লক্ষ্যে বিদ্যমান রফতানি নীতিতে কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া কৃষিপণ্য উন্নয়নে বিভিন্ন গবেষণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে এবং বালাইমুক্ত কৃষিপণ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আওতাধীন উদ্ভিদ সংঘনিরোধ উইংকে শক্তিশালী করা হচ্ছে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ বাশিরউদ্দিন বলেন, কৃষিপণ্য আহরণে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের স্বল্পতা, কোল্ডস্টোরেজের অপ্রতুলতা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে প্রতি বছর মোট উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ১২ শতাংশ এবং শাক-সবজি ও ফলমূলের ২০ শতাংশ নষ্ট হচ্ছে। তাই এ দিকগুলো বিবেচনায় এনে এই খাতের সব সমস্যা দূর করতে হবে। এতে এত কৃষিপণ্য নষ্ট না হয়ে রফতানি করা গেলে আয় আরও বাড়বে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বাইরে দিন দিন বাড়ছে কৃষিপণ্যের চাহিদা। আর এ চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ। কৃষিপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের পর তা রফতানির পরিমাণও বাড়ছে। এছাড়া প্রতিবেশী দেশগুলো বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য আমদানি করছে। তাই এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ। শুধু প্রতিবেশী দেশগুলোতেই ১৫০ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য রফতানির সুযোগ আছে।
একক ল্যাবে হবে রফতানি পণ্যের মান যাচাই:
কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রফতানিতে সহযোগিতা করতে একটি বিশেষ ল্যাবরেটরি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ পরীক্ষাগারে পণ্যের মান পরীক্ষা করে রফতানি সনদ দেয়া হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশী কৃষি ও খাদ্যপণ্যের গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়াতে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কৃষিপণ্য বিশেষ করে শাক-সবজি, ফলমূল, মাছ, মাংস ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের চাহিদা রয়েছে। প্রবাসে অবস্থিত লাখো বাংলাদেশী নিয়মিত দেশী এসব পণ্য চায়। আবার বিদেশীরাও এখানকার নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় উৎপাদিত কৃষিপণ্যের প্রতি আগ্রহী। তবে রফতানির ক্ষেত্রে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা থাকায় সহজে এসব পণ্য পাঠানো যায় না। বিশেষ করে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য মান সনদ না থাকায় রফতানিতে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। কোন কোন দেশ বাংলাদেশ থেকে কিছু পণ্য নেয়া বন্ধও রেখেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি ল্যাব স্থাপনের পরিকল্পনা করছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শিল্প কারখানায় উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের জন্য মান সনদ দেয় দেশের একমাত্র মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। অনেক দেশ এ সংস্থার সনদ গ্রহণ করলেও কিছু দেশ তা করে না। এমনকি পার্শ্ববর্তী ভারতও সব ক্ষেত্রে এ সংস্থার সনদ গ্রহণ করে না। মাত্র ২১ পণ্যের ক্ষেত্রে ভারত বর্তমানে সনদ গ্রহণ করছে এবং আরও ছয় পণ্যের ক্ষেত্রে তা প্রক্রিয়াধীন। ইউরোপের অনেক দেশ বিএসটিআইর সনদ থাকার পরও পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ রেখেছে। অতিরিক্ত সিসার উপস্থিতির অভিযোগে হলুদের গুঁড়া আমদানি বন্ধ রেখেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। এছাড়া কৃষিপণ্য ও ফলমূল রফতানির ক্ষেত্রে মান সনদ দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংঘনিরোধ শাখা। এ শাখার সনদও সবক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এ সংস্থার সনদে রফতানি করার পরও পান ও আলুর চালান ফেরত এসেছে। অন্যদিকে খাদ্যপণ্যের সনদ দেয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। সংস্থার নিজস্ব পরীক্ষাগার নেই। অন্য সংস্থার ল্যাব থেকে মান পরীক্ষা করে সনদ দিতে হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটি সনদ দেয়ার কাজ করতে পারবে না বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। অন্যদিকে সনদ পেতে হয়রানি হয় বলে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের মান সনদের জন্য স্বতন্ত্র ল্যাবরেটরি স্থাপনের কথা ভাবছে।
কৃষিপণ্য রফতানি বাড়াতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার:
কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে রফতানি বাড়ানোর জন্য সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সভায় বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দিন একটি কৌশলপত্র উপস্থাপন করেন। যেখানে ৮টি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সামনে রফতানি বাড়ানোর কৌশলগুলো উপস্থাপনের ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিয়েছে সেগুলোর মধ্যে ছিল, সম্ভাবনাময় পণ্য রফতানিতে অনুদান ও নগদ সহায়তা প্রদান, বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অনুসারে পণ্য রফতানির উদ্যোগ গ্রহণ, দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিদেশী উদ্যোক্তাদের যোগাযোগ তৈরি এবং সম্ভাবনাময় পণ্যের গুণগত মান বাড়ানোর লক্ষ্যে বেসরকারী খাতকে প্রযুক্তি ও নীতি সহায়তা দেয়া। এছাড়া বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক ও হালাল খাদ্যপণ্য রফতানির জন্য ওই দেশের উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাংলাদেশের উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের কার্যকর বাণিজ্য যোগাযোগ স্থাপনে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস ও বাণিজ্যিক উইংকে পরামর্শ প্রদান এবং নিয়মিত মনিটরিং করা এবং প্রচলিত বাজারের পাশাপাশি নতুন নতুন বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে এরই মধ্যে যেসব দেশের মন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ে সফর অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেই দেশগুলোতে রফতানি বাড়াতে ফলোআপ কার্যক্রম পরিচালনা করা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দিন বলেন, কৃষিপণ্য রফতানি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বাণিজ্য সচিব বলেন, আমাদের প্রচলিত পণ্যের পাশাপাশি নতুন পণ্যকে উৎসাহিত করতে হবে। পণ্যের মান ও ডিজাইন আন্তর্জাতিক মানে উন্নত করতে নতুন টেকনোলজি সেন্টার নির্মাণ, কারখানার উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য অনুদান, নগদ সহায়তা ছাড়াও প্রণোদনামূলক বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। সচিব জানান, আমাদের কিছু কৌশল রয়েছে যেমন অঞ্চলভিত্তিক পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে হালাল খাবারের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এই সুযোগটি গ্রহণ করতে পারেন। বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক ও হালাল খাদ্য রফতানি বাড়াতে দেশের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমদানিকারক দেশগুলোর উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ ঘটানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানান বাণিজ্য সচিব। তিনি বলেন, এ কাজটি সমন্বয় করার জন্য বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে কমর্রত কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সূত্রঃ দৈনিক জনকণ্ঠ