হাওর-বাঁওড় বাঁচিয়ে রাখতে হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

1967

Published on অক্টোবর 28, 2020
  • Details Image

দেশের হাওর-বাঁওড়সহ সব প্রাকৃতিক জলাধার বাঁচিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, হাওর-বাঁওড় জীবন ও পরিবেশের প্রাণ। সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে কোনোভাবেই এগুলোর ক্ষতি করা যাবে না। খেয়াল রাখতে হবে যাতে প্রাকৃতিক পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত না হয়। প্রয়োজনে আরও ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করা যেতে পারে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে একনেক চেয়ারপারসন হিসেবে এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বৈঠকে সংযুক্ত হন তিনি। কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে ব্রিফিং করেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য সরকারের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম। তিনি প্রকল্পের বিভিন্ন দিকের বিস্তারিত তুলে ধরেন। সাধারণত পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান একনেক বৈঠক শেষে ব্রিফিং করে থাকেন। তার অসুস্থতাজনিত অনুপস্থিতিতে কমিশন সদস্য গতকাল ব্রিফ করেছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি আছেন।

রাজধানীর শেরেবাংলানগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে সংশ্নিষ্ট সচিবরা ও প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন আসাদুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, সংশোধিত সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প প্রসঙ্গে হাওর-বাঁওড় রক্ষার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ করার বিষয়েও বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, কোনো প্রকল্পের পরিচালক কিংবা অন্যান্য কর্মকর্তার বদলি বা অবসর গ্রহণের ক্ষেত্রে উন্নয়ন কাজ যাতে ব্যাহত না হয়। এ ছাড়া মামলাজনিত কারণেও যাতে প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় ব্যয় না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া বৈঠকে সিটি করপোরেশনগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যাতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষই প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে পারে। এ জন্য পরিকল্পনা করে তাদের এগোনোর নির্দেশ দেন তিনি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ট্রাফিক অবকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রকল্প প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন তিনি। এ প্রকল্পে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রস্তাবিত ৬৪ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অর্থ মওকুফ করে দিয়েছেন। বলেছেন, পুরো অর্থই সরকার দেবে। এর আগে গত সপ্তাহে একইভাবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অর্থও প্রধানমন্ত্রী ফিরিয়ে দিয়েছেন।

পাঁচ হাজার ১৯০ কোটি টাকার ৩ প্রকল্প অনুমোদন :একনেকে গতকাল মোট তিনটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে দুটিই সংশোধনী। নতুন প্রকল্প মাত্র একটি। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সাসেক প্রকল্পে দুই হাজার ২৭০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাকি অর্থের জোগান দিচ্ছে সরকার। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২। এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল. রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ। প্রথমবারের মতো প্রকল্পটির সংশোধনী অনুমোদন করা হলো। এ সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৪০ শতাংশ। অতিরিক্ত চার হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা ব্যয় অনুমোদন করেছে একনেক। এতে মোট ব্যয় দাঁড়াল ১৬ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। সময় বাড়ানো হয়েছে ৩ বছর। আগামী ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। সংশোধিত অন্য প্রকল্পটি হচ্ছে নোয়াখালীর সোনাপুর-সোনাগাজী-জোরারগঞ্জ (চট্টগ্রাম) সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ। এ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ২৯৩ কোটি টাকা। সময় বাড়ানো হয়েছে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এটি প্রকল্পের দ্বিতীয় দফা সংশোধনী। গতকাল অনুমোদিত একমাত্র নতুন প্রকল্পটি হচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ট্রাফিক অবকাঠামো উন্নয়নসহ সড়ক নিরাপত্তা। এ মাসেই প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে। শেষ হবে ২০২৩ সালের জুনে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১৯ কোটি টাকা।

ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সদস্য সরকারের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ, শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত