6567
Published on অক্টোবর 14, 2020আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সকালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ভিডিও কনফারেন্সে অপর প্রান্ত যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উক্ত অনুষ্ঠানে নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মাথায় লাল ফিতে বাঁধা বেদেনির সাধারণ পোশাকে দৃঢ় পায়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মঞ্চে এগিয়ে গেলেন জলে নৌকায় বাস করা সাভারের বেদেনি নুরুন্নাহার (৪০)। বিধবা নুরুন্নাহারের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পেশা শিঙায় ফুঁ দেওয়া, দাঁতের পোকা তোলা আর সাপের খেলা দেখানো। যেখানে তার জীবনটায় টেনেটুনে চলছে, সেখানে জমি কিনে বাড়ি করার স্বপ্ন দেখা নিতান্তই তুচ্ছ। কিন্তু সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নে স্বাভাবিকভাবেই আবেগে আপ্লুত নুরুন্নাহার। আজন্ম জলে নৌকায় বাস করা নুরুন্নাহারের হাতে ভার্চুয়ালি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সরকারের জায়গা দেয়া জায়গায় তুলে দেয়া দুর্যোগ সহনীয় ঘরের প্রতীকী চাবি তুলে দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
আলো ঝলমলে মিলনায়তনে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানুষ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করাটাও নুরুন্নাহারের জীবনে এনে দিয়েছে অন্য রকম একটি দিন। সবার দৃষ্টি তখন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে নুরুন্নাহারের দিকে। প্রধানমন্ত্রীর মনযোগও ছিল তার দিকে। নুরুন্নাহার তার বক্তৃতায় বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আসসালামু আলাইকুম। আমার নাম নুরুন্নাহার বাইদানি। আমি সাপ খেলা দেখাই। আমার থাকার কোনো জায়গা ছিলনা। আমি নৌকায় থাকতাম। আল্লাহর দুনিয়ায় আপনি আমারে জায়গা দিছেন, বাড়ি দিছেন। আমি প্রাণভরে দোয়া করি, আল্লাহর রহমতে আপনি যেন দীর্ঘজীবন বেঁচে থাকেন। আপনার পিতা আমাদের জাতির পিতা। আপনার বাবা আমাদের দেশ দিয়েছেন। আপনি আমাদের জায়গা ও ঘর দিছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে ধন্যবাদ।’ নুরুন্নাহারের এই অনুভূতি প্রকাশের পর মিলনায়তনজুড়ে শুরু হয় করতালি।
নুরুন্নাহারের থেকে জানা গেছে, সাত বছর আগে তার স্বামী আবদুল করিমের মৃত্যুর পর একমাত্র কন্যা সন্তান নিয়ে তিনি বিপাকে পড়েন। আবদুল করিম নিজেও সাপ ধরা ও সাপের খেলা দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ডাঙায় কোনো জায়গা না পেয়ে নিরুপায় হয়ে মেয়ে কবরী, দুই নাতি কবিরুল ইসলাম (৭) আর রোজারুল ইসলামকে (৫) নিয়েই নৌকায় বসবাস করতেন নুরুন্নাহার।
ডিআইজি হাবিবুর রহমানের মানবিক প্রচেষ্টায় সাড়া দিয়ে বেদে ও হিজরা জনগোষ্ঠীর জন্য ৫০টি দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণে এগিয়ে আসেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। ডা. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, কেবল নুরুন্নাহার একা নন। তার মতো গৃহহীন ১৭ হাজার ৭০৫ জনের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে নির্মিত দুর্যোগ সহনীয় ঘরের চাবি তুলে দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নুরুন্নাহারের মতো প্রান্তিক মানুষের মুখে হাসি তুলে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। আগামীতে বাংলাদেশে আর কেউ যাতে গৃহহীন না থাকে, সে লক্ষ্য পূরণে কাজ করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এরই মধ্যে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে এবং সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।
উক্ত অনুষ্ঠান শেষে আবেগে আপ্লুত নুরুন্নাহার ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এবং পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হাবিবুর রহমানের প্রতি।