শুভ দিনে সোনার বাংলার স্বপ্নকথা

2276

Published on সেপ্টেম্বর 30, 2020
  • Details Image

আনিসুল হকঃ 

আজ আপনার জন্মদিন। আজ বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন দেখবার দিন, সোনার বাংলার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে উদ্বোধিত হওয়ার দিন। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, শিউলিফুলে শিশিরবিন্দুতে আলোর মুক্তা, আজ শুভ দিন, আজ শেখ হাসিনার জন্মদিন। বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা আপনা-আপনিই ধায় আপনার দিকে। আপনি যে জাতির পিতার মেয়ে! হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির সেই অনিন্দ্যসুন্দর মুখখানার আভাস যে আপনার চেহারায় প্রতিবিম্বিত। আজ আপনার ৭৩ বছর পূর্ণ হলো। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ছবির মতো গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় মহিয়ষী নারী ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ওরফে রেনুর কোল আলো করে এসেছিলেন আপনি। জন্মের পর বুঝ হওয়ার আগে থেকেই দেখে এসেছেন, আপনার আব্বা কারাগারে। আপনার দু বছর বয়সে একবার তিনি টুঙ্গিপাড়া এলেন, আপনি আব্বার কোল ছাড়তে চান না; বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, 'মেয়ে তো কোল থেকে নামতেই চায় না, আর ঘুমাতেও চায় না।' বাড়ি-ছাড়ার জন্য আপনার আব্বা বেছে নিলেন রাতের সময়টাকে, তিনি লিখেছেন, 'রাতে রওনা করে এলাম, দিনের বেলায় আসলে হাচিনা কাঁদবে। কামাল তো কিছুই বোঝে না।'

আপনার মুখের প্রথম বুলি কী ছিল? আমরা বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' বইয়ে পাই, 'হাচু আমার গলা ধরে প্রথমেই বলল,"আব্বা, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, রাজবন্দিদের মুক্তি চাই।" সাড়ে চার বছরও তখন আপনার বয়স নয়, থাকেন কোন সুদূর টুঙ্গিপাড়ায়। আপনার আব্বা সোয়া দুই বছর জেল খেটে ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারির পর মার্চে যখন টুঙ্গিপাড়া গেলেন, আব্বাকে পেয়ে প্রথম আপনি যা বললেন, তা হলো, 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, রাজবন্দিদের মুক্তি চাই।'এই তো আপনার প্রথম বুলি, 'আব্বা', 'রাষ্ট্র', 'ভাষা', 'বাংলা', 'মুক্তি'! আপনার আব্বা আরো লিখেছেন, 'হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর 'আব্বা' 'আব্বা' বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, "হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।'

শৈশব- কৈশোর আপনার কেটেছে গ্রামে। আপনি লিখেছেন,'আমার শৈশবের স্বপ্ন-রঙিন দিনগুলাে কেটেছে গ্রাম-বাংলার নরম পলিমাটিতে, বর্ষার কাদা-পানিতে, শীতের মিষ্টি রোদ্দুরে, ঘাসফুল আর পাতায় পাতায় শিশিরের ঘ্রাণ নিয়ে, জোনাক-জ্বলা অন্ধকারে ঝিঁঝির ডাক শুনে।' আপনার উন্নয়নচিন্তায় গ্রাম আর সাধারণ মানুষের কথা তাই আসে সবার আগে। থাকে পরিবেশের কথা। ঐতিহ্যের কথা। আপনার পরিবারের ত্যাগ, তিতিক্ষা, আত্মদান, ধৈর্য, দেশপ্রেমের কোনো তুলনা নেই! আগের রাতে বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী, তারপর মন্ত্রিসভা বাতিল, সরকারি বাসা থেকে উৎখাত হয়ে বাসা খুঁজছেন বেগম মুজিব, একদিন তো একেবারে বাক্সপেটরা ছোট ছোট চার ছেলেমেয়ে আর আপনার দাদিকে নিয়ে দিন কাটল রাস্তায়; শেখ মুজিবের পরিবারকে বাসাভাড়া দিতেও লোকে ভয় পাচ্ছে। আপনাকে স্কুলে ভর্তি করে নিতেও প্রতিষ্ঠানগুলো ভীত। সুফিয়া কামালকে নিয়ে বেগম মুজিব, আপনার আম্মা, এখানে ওখানে ধর্না দিয়ে কষ্ট করে স্কুলে ভর্তি করালেন আপনাকে।

আপনার আব্বা প্রায়ই জেলে থাকতেন। ছোট্ট রাসেল জেলখানাকে বলত আব্বার বাড়ি। স্কুল কলেজ থেকে আপনারা চলে যেতেন জেলখানায়, আপনার আব্বার সঙ্গে দেখা করতে। স্কুলে থাকতেই যোগ দিতে শুরু করলেন মিছিলে-মিটিংয়ে। কলেজে গিয়ে হলেন ছাত্রলীগ নেতা, নির্বাচন করে ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হলেন। অংশ নিলেন ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মিছিলে মিটিংয়ে। যেদিন রেডিওতে ঘোষণা হলো, শেখ মুজিবকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গোলটেবিলে, আপনি আপনার মায়ের চিঠি নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন ক্যান্টনমেন্টে; আপনার মা আপনার আব্বার সঙ্গে দেখা করে অবহিত করেছিলেন দেশের পরিস্থিতি। আপনার আব্বা ঘোষণা করলেন, আমি প্যারোলে মুক্তি নেব না। পাকিস্তানি জান্তা নতি স্বীকার করল। মুক্ত মানুষ হয়ে বেরিয়ে এলেন আপনার আব্বা, দেশের মানুষ ভালোবেসে তাঁকে উপাধি দিল 'বঙ্গবন্ধু'।

আপনার আব্বা 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'তে লিখেছেন, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের প্রচারণার সময় গোপালগঞ্জ কোটালীপাড়া এলাকায় এক বৃদ্ধা তাঁকে হাতে ধরে তার কুঁড়েঘরে নিয়ে পাটিতে বসিয়েছিলেন। এক বাটি দুধ, একটা পান, চার আনা পয়সা দিয়েছিলেন, বলেছিলেন, আর তো কিছু নাই, গরিবের দোয়া তোমার জন্য আছে বাবা। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, 'মানুষেরে ধোঁকা আমি দিতে পারব না।' দেশের মানুষকে ভালোবাসার, গরিব মানুষকে ভালোবাসার এই গুণটি আপনার মধ্যেও সব সময় সজাগ দেখতে পাই। আপনি প্রতিটা বক্তৃতায় বলেন এদেশের গরিব দুখি সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর কথা। আমার এক স্থপতি বন্ধুর মুখ থেকে শুনেছি, ঢাকায় একটা বড় প্রকল্পের পরিকল্পনা নিয়ে আপনার সঙ্গে যখন তাঁরা দেখা করতে গিয়েছিলেন, আপনি সবার আগে জানতে চেয়েছিলেন, গরিব মানুষের কষ্ট হবে না তো? সাধারণ মানুষ উচ্ছেদ হবে না তো?

বঙ্গবন্ধুর একটা প্রিয় লাইন ছিল, 'যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে।' আপনি বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে প্রেরণা নেন, রবীন্দ্রনাথের কাছে থেকে নেন, কাজী নজরুলের কাছ থেকে নেন। পদ্মাসেতু অর্থায়ন থেকে মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক যখন সরে এলো, আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, শেখ সাহেবের মেয়ে; মাথা উঁচু করে বললেন, নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু হবে! দুর্নীতি হয়নি, কানাডা কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে, বিশ্বব্যাংক নতি স্বীকার করেছে, কিন্তু নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর কাজ দ্রুত সম্পন্ন হওয়ার পথে। বাংলাদেশের মাথা উঁচু হয়েছে।

কোমলে-কঠোরে গড়া আপনার অন্তর। স্টেডিয়ামে ক্রিকেট ম্যাচ হচ্ছে। আপনি উপস্থিত। বাংলাদেশ হোয়াইট ওয়াশ করল পাকিস্তানকে। স্টেডিয়ামের পর্দায় আপনার মুখ ভেসে উঠল। আপনার দুচোখে অশ্রু চিকচিক করছে। মানুষকে ভালোবেসে বুকে টেনে নিতে পারেন আপনি সহজেই। যিনিই আপনার কাছে গেছেন, আপনার সহজ স্বচ্ছন্দ আন্তরিক ব্যবহারে তিনি ফিরেছেন মুগ্ধ হয়ে। নিমতলীর অগ্নিদুর্ঘটনায় স্বজনহারানো নারীদের আপনি নিজের সন্তান হিসেবে বুকে টেনে নেন। সেই আপনিই আবার নীতির প্রশ্নে হতে পারেন কঠোর। আপনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার নিশ্চিত করেছেন। আর তা হয়েছে আইনকানুনের সবগুলো শর্তপালন করে, বিচারিক আদালতে। একইভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে আদালতে, অপরাধ প্রমাণিত হলে আইনানুগ শাস্তি কার্যকর হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের। মাত্র সেদিন ২৮ এপ্রিল ২০১৯ আপনি বলেছেন, মেয়েরা যেন সম্পত্তির সমান ভাগ পায়, যাদের কন্যা সন্তানই ওয়ারিশ, তাদের কন্যারা যেন বাবা-দাদার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত না হয়। আজ বিশ্বের সব পরাশক্তি বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেয়, শ্রদ্ধা সম্মানের চোখে দেখে, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কেউ আর কথা বলার বা নাক গলানোর চেষ্টা করে না।

আপনি স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ডিজিটাল বাংলাদেশের। বাংলাদেশের প্রায় প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ, সবার হাতে মোবাইল ফোন। আপনি স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, ২০২১ সাল নাগাদ দেশ হবে মধ্য-আয়ের, সে লক্ষ্য আমাদের পূরণ হয়ে গেছে। আমরা জানি, আপনি সবার আগে ঘুম থেকে ওঠেন। সূর্য ওঠার আগেই শুরু হয় আপনার প্রতিদিনের কাজ। কী করে এতটা পরিশ্রম করতে পারেন আপনি! একদিন কতগুলো যে কর্মসূচি থাকে আপনার! আবার এরই ফাঁকে আপনি সাহিত্য পাঠ করেন, বঙ্গবন্ধুর বইগুলোর প্রত্যেকটা লাইন পড়ে দেন, সম্পাদনা করেন, নিজের লেখাও লেখেন। আপনার লেখার হাত আপনার আব্বার মতোই, খুব ভালো। এবং আপনার বইয়ের সংখ্যাও সুপ্রচুর!

প্রবাসী প্রকৌশলীদের সম্মেলনে ঢাকায় আপনার একটা বক্তৃতা শোনার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। আপনি বলছিলেন আপনার স্বপ্নের কথা। ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হিসেবে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন, পরিকল্পনা আর পদক্ষেপের কথা। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা ম্যাস-র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল, মহেশখালীর মাতারবাড়ীর সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম, পায়রা সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন স্থাপন এবং কর্ণফুলী নদী তলদেশে টানেল নির্মাণ থেকে শুরু করে ৫০ বছর পর কী হবে, ১০০ বছর পর কী হবে, সব আপনি বলে যাচ্ছিলেন স্বপাবিষ্টের মতো।  বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, আপনি সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের ব্রত নিয়েছেন।

আরেকটা বক্তৃতার কথা আমার চিরদিন মনে থাকবে। বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত বার্ষিকীর ভাষণ। আপনি লিখিত বক্তৃতার পাশাপাশি নিজের মন থেকে কথা বলছিলেন, শোনাচ্ছিলেন রবীন্দ্রনাথের লেখা থেকে, কীভাবে রবীন্দ্রনাথ বঙ্গবন্ধুকে প্রেরণা দিয়েছেন, আপনাদের আলো দেখিয়েছেন। শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে শুনছিলেন।
আপনার লেখার ক্ষমতাও আমাদের মুগ্ধ করে। একদিন মাহবুবুল হক শাকিল আমাকে ফোন করলেন। একটা লেখা পড়ুন। পড়লাম। আপনি লিখেছেন আপনার মাকে নিয়ে। পড়ে জলছলচল চোখে আমি স্তব্ধ হয়ে রইলাম। মাহবুবুল হক শাকিলকে বললাম, এত ভালো লেখা! তিনি বললেন, এটা নেত্রী নিজ হাতে লিখেছেন। ফজরের নামাজ পড়ে এই লেখা লিখে শেষ করেছেন। একটা শব্দও সম্পাদনা করা হয়নি। কত কত বই বেরিয়েছে আপনার লেখা! সেসব আমাদের প্রকাশনা জগতের জন্য একটা মূল্যবান সম্পদ হয়ে রইবে।

করোনাকাল যখন এলো, ২০২০ সালের ৮ মার্চ আপনি ডাকলেন বঙ্গবন্ধু শতবর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্যদের। আমারও যাওয়ার সুযোগ হলো গণভবনে। আপনার কাছ থেকেই এলো সঠিকতম সিদ্ধান্তটি, পাশে জাতির পিতার ছোটমেয়ে শেখ রেহানা, আপনার বোন, জাতির পিতার নাতনি, আপনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, আপনারা বললেন, না, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি দেশে সনাক্ত হয়েছে, ১৭ মার্চের মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান জনসমাগম করে করা হবে না। করোনা ভাইরাস যদি ছড়ায় দেশের কী হবে, এই ভেবে আমি তিন রাতে আতঙ্কে ঘুম থেকে জেগে উঠেছিলাম। তখন মনে হলো, এই দেশ সবচেয়ে সাহসী, সবচেয়ে দূরদর্শী, সবচেয়ে বিচক্ষণ মানুষটির হাতেই আছে। পথ হারাবে না বাংলাদেশ।  আপনি বলেন, আপনার তো আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আপনি বাবা-মা হারিয়েছেন, ভাই-ভাবি হারিয়েছেন, ছোট্ট ভাই রাসেলকেও হারিয়েছেন ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট। একমাত্র ছোটবোন শেখ রেহানা আপনার সঙ্গে বিদেশে ছিলেন বলে বেঁচে যান। সব হারিয়ে বাংলার মানুষকেই আপনি আপনার প্রিয়জন পরিজন করে তুলেছেন।
১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসেও তো ৩২ নম্বরের বাড়িটিতে যাওয়ার অধিকার আপনার ছিল না। বাড়ির দরজা খোলা হয়নি, আপনাকে মিলাদ পড়ানোর অনুমতিও দেয়া হয়নি। ১৯৮১ সালের ১২ জুন প্রথম সেই বাড়িটিতে আপনি গেলেন।

আপনার তখন কী মনে হচ্ছিল? কাজী নজরুল ইসলামের একটা বই, 'শ্রদ্ধাঞ্জলি', তার ওপরে কবির ছবি, বইটা গুলিবিদ্ধ। ভেতরে রাখা ছিল একটা আলগা ফটো, সেই ফটো একজন মুক্তিযোদ্ধার। সবার আগে আপনার মনে হলো, এই গুলিবিদ্ধ বই, কাজী নজরুল, মুক্তিযোদ্ধার ফটো-- ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকেরা ১৯৭১ সালের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে এসেছিল! তারপর? এই বাড়িতে কত স্মৃতি আপনার, আপনাদের। এই বাড়িতে আপনার ছোটভাই কামাল সেতার বাজাতেন, এই বাড়ির উঠানে জামাল ক্রিকেট খেলতেন, ওই তো এখানে আপনার মা রান্না সামলাচ্ছেন আর বাটা থেকে সুপুরি তুলে নিয়ে খিলিপান সাজাচ্ছেন। এখনি রাসেল ছুটে আসবে, আর বলবে, আপা, চলো পায়রাগুলোকে আধার দিই। শেখ রেহানা কাছে আসতেই রাসেল 'দেনা আপা' 'দেনা আপা' করতে করতে তার সঙ্গে চলে গেল ছাদে। আপনি কলেজ থেকে এসেছেন, ভিজে চুলে ঘুমিয়ে পড়েছেন, আপনার আব্বা বেশি রাতে ফিরে আপনাকে ডেকে তুলে ফ্যানের বাতাসে চুল শুকিয়ে দিচ্ছেন আর রেহানার মুখে ভাত তুলে দিচ্ছেন। কিংবা একাত্তরের ৭ মার্চ বিকেলে আপনার আম্মা বলছেন, শোনো, তুমি তোমার হৃদয়ের দিকে তাকাও, তোমার অন্তর যা বলবে, তাই বলবে, একটু শুয়ে রেস্ট নাও। তারপর যাও। তিনি তাই করলেন। রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ লক্ষ মানুষের সামনে ঘোষণা করলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।
কিন্তু সেই বাড়ি আজ গুলিবিদ্ধ। কেউ নেই।

আপনিও আপনার পিতার মতোই অকুতোভয়। কতবার আপনার প্রাণনাশের অপচেষ্টা হলো। বোমা পেতে রাখা হলো। তারপর এলো ২১ আগস্ট। আইভি রহমানের প্রাণহীন শরীরের শেষ চাওনিটা যেন কত কথা বলে। আর সেদিনের সেই মঞ্চে আপনার মুখখানা! পাথরের মতো শোক, দুঃখ, ব্যথা, অপ্রত্যাশিত আঘাতের বিহ্বলতার মধ্যেও আপনি নীরব, নির্বাক, অবিচলিত। আপনার হারানোর আর কিছুই নেই। কিন্তু করবার আছে অনেক কিছু। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার নেতৃত্ব যে আপনাকেই দিতে হবে।

বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে একটা উন্নত দেশ, আলোকিত দেশ, গণতান্ত্রিক দেশ, সম্প্রীতিসুন্দর দেশ হিসেবে গড়ে তোলার আপনার সংগ্রাম জয়যুক্ত হোক, আপনার জন্মদিনে আমাদের এই হলো শুভেচ্ছা, এই হলো কামনা। বঙ্গবন্ধু, একাত্তরের শহীদেরা, ৫২-এর শহীদেরা, ৭৫-এর শহীদেরা দূর আকাশের জানালা দিয়ে দেখবেন, বীরের এ রক্তস্রোত মায়ের এ অশ্রুধারা, তার যত মূল্য তা ধরার ধুলায় হারিয়ে যায়নি। তাঁরা দেখবেন, বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সোনার বাংলাদেশ হয়েছে।  আমরা বহুদূর এগিয়েছি, কিন্তু আপনাকে আরো অনেক দূর যেতে হবে। সে কাজ কঠিন, কঠিনতর; কিন্তু আপনি তো কঠিনেরেই ভালোবেসেছেন। শুভ জন্মদিন, সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাণ্ডারী শেখ হাসিনা।


Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত