আত্মজার হাতে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্ন

1137

Published on সেপ্টেম্বর 29, 2020
  • Details Image

রফিকুল ইসলামঃ

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্থপতি। শেখ হাসিনা তার শহীদ পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করে চলেছেন। বাংলাদেশকে একটি আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আমরা তার এই মহৎ কর্মের সফলতা কামনা করি।

বাংলাদেশ এখনও নানারকম কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য যা যা করা সম্ভবপর তা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা আশা করি, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বর্তমান পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাবে এবং তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে যথাসময়ে পৌঁছতে সক্ষম হবে।

শেখ হাসিনা বাঙালি জাতির কাণ্ডারি হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন তার মেধা, সাহস ও সততার কারণে। বর্তমান বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রতীক বলা হয় তাকে। বাঙালির জাতিসত্তা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিরা নস্যাৎ করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছিল। তাদের সঙ্গে মহা উৎসাহে যোগ দেয় ক্ষমতালোভী ও সুবিধাভোগী রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী সমাজ। বাংলাদেশ, বাঙালি জাতি তখন ছিল অসহায়, নির্যাতিত, অপমানিত, নিপীড়িত। ধর্মের দোহাই দিয়ে বাঙালির চিরশত্রু পাকিস্তানের স্বৈর সামরিক শাসকরা দেশকে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন গর্তের ভেতর নিক্ষেপ করে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে এক জঙ্গি ও সাম্প্রদায়িক শাসন কায়েমের ভিত রচনা করে। সেসব লোভী ও বিশ্বাসঘাতক বঙ্গবন্ধুর পবিত্র রক্ত মেখে নিজেরাই হয় ঘাতক ও খুনি। কিন্তু সেই ভিত শক্তিশালী হতে পারেনি। শেখ হাসিনা অন্ধকার সেই ভিতকে নস্যাত করে দিয়েছেন।

১৯৮১ সালে জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। দেশমাতৃকার হাল ধরার এক ঐতিহাসিক ডাকে সাড়া দিয়ে তৎকালীন সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন তিনি। এর পর দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে টানা সংগ্রাম চালিয়ে যান। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার নেতৃত্বে দীর্ঘ বিরতির পর আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে সূচিত হয় এক নতুন গতি। দেশের ভৌত কাঠামো ও আর্থ-সামজিক নানা ক্ষেত্রের বিবিধ উন্নয়নে প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যান তিনি। তারই হাত ধরে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে; একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য সম্পন্ন করা হয়েছে। তা ছাড়া সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি ও সমুদ্রবক্ষে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হন।
বাংলাদেশের সামনে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে এসে বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে তার সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে যাচ্ছে। সামনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আমরা আশা করি, বঙ্গবন্ধুর এই জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাফল্যের সঙ্গে উদযাপন ও অতিক্রম করবে। আমাদের দৃঢ় প্রত্যয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হবে। আমি এ কথা বলতে পারি, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে যেভাবে পরিচালনা করার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতেই কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। গত শতাব্দীর ষাটের দশকের অপরার্ধ এবং সত্তরের দশকের প্রথমার্ধে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। সেই সুবাদে আমি তার শিক্ষক ছিলাম। শিক্ষকদের জন্য সব সময়ই অত্যন্ত সৌজন্যমূলক আচরণ ছিল তার মধ্যে। এখনও সেটা অক্ষুণ্ণ রয়েছে।

মনে পড়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালে শেখ হাসিনা ভর্তি হবার জন্য একদিন বাংলা বিভাগের সামনে এসেছিলেন। তখন আমাদের বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, যিনি একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবী। তিনি আমাকে এবং অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে বললেন ওই যে শেখ সাহেবের মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে; সে আমাদের বিভাগে ভর্তি হবে কিনা, সেটা জানার জন্য। এর পর আমরা গিয়ে তার কাছে জানতে চাইলাম, তিনি বাংলা বিভাগে ভর্তি হতে সম্মত কিনা। তিনি সম্মতি জানালেন আমাদের বাংলা বিভাগে ভর্তি হতে। সেই থেকে আমার সঙ্গে তার শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের শুরু। এখনও সেই সম্পর্ক নিরবচ্ছিন্ন রয়েছে। শেখ হাসিনার সঙ্গে এখনও দেখা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় যে ব্যবহার করতেন, আজও সেই ব্যবহারই দেখি। তার মধ্যে কোনো অহমিকা নেই।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট তার পুরো পরিবারসহ তার পিতা বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ তার জীবনে যে দুঃসহ বেদনা এনে দিয়েছে, এই শোক তাকে শক্তিশালী ও দায়িত্বশীল করেছে দেশের জন্য মানুষের জন্য কাজ করে যেতে। সেই বেদনাকে সঙ্গী করে তিনি তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। আত্মজার হাতে পিতা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্ন সফল হবে- এই বিশ্বাস আমাদের অনুপ্রাণিত করে।

বারবার শেখ হাসিনাকেও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তার পরিবারের মতো তাকেও চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দিতে সদা প্রস্তুত। কিন্তু দেশের জন্য তিনি অকুতোভয় প্রাণে নিরন্তর নিয়োজিত আছেন। তার আর হারাবার কিছু নেই।

আমি বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনা যতদিন আছেন, ততদিন আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি নিরাপদ। আমি আজ তার জন্মদিনে তাকে অন্তরের অন্তস্তল থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তার এই যাত্রা যেন সফল হয়।

লেখক: জাতীয় অধ্যাপক

সৌজন্যঃ দৈনিক সমকাল

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত