8802
Published on সেপ্টেম্বর 20, 2020নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশি-আমেরিকান চিকিৎসক ডা. রুহুল আবিদ ও তার অলাভজনক সংস্থা হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল (হায়েফা)। ম্যাসাচুসেটস বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ডা. রুহুল আবিদ যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের আলপার্ট মেডিক্যাল স্কুলের একজন অধ্যাপক। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিন ফিলিপ বেলিউ এ খবরটি নিশ্চিত করেছেন। ২০২০ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মোট ২১১ জন মনোনীত হয়েছেন।
ডা. আবিদ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে স্নাতক ও জাপানের নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোলিকুলার বায়োলজি ও জৈব রসায়নে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০১ সালে তিনি হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল থেকে ফেলোশিপ শেষ করেন। তিনি ব্রাউন গ্লোবাল হেলথ ইনিশিয়েটিভের একজন নির্বাহী সদস্যও।
তার সংস্থা হায়েফা বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিতদের বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। গত তিন বছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩০ হাজার পোশাকশ্রমিককে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে। এছাড়াও সংস্থাটি প্রায় ৯ হাজার সুবিধাবঞ্চিত নারী ও পোশাকশ্রমিকের জরায়ু ক্যানসার স্ক্রিনিং ও চিকিত্সাসেবা এবং কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেড় লাখেরও বেশি মানুষকে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে। বর্তমানে সংস্থাটি দুটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় দক্ষতা তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর ডা. আবিদ সারা দেশে তৈরি পোশাকশ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার তাগিদ থেকে ‘হায়েফা’ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৬ সালে হায়েফা নিয়ে আসে ডিজিটাল উদ্ভাবন ‘নিরোগ’। এটি একটি সৌরবিদ্যুত্ পরিচালিত, অফলাইনে ব্যবহার করা যায় এমন মোবাইল ইলেকট্রনিক মেডিক্যাল রেকর্ড (ইএমআর) সিস্টেম। ‘নিরোগ’-এর মাধ্যমে ডা. আবিদ ও তার দল দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন এমন মানুষের চিকিৎসক রেকর্ড, রোগ বিশ্লেষণ ও সেই অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেন।
কক্সবাজারের কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জন্য দুটি বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিক পরিচালনা করছে হায়েফা। আবিদের ক্লিনিকগুলো দীর্ঘমেয়াদি ও দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা এবং সংক্রামক নয় এমন রোগ, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি, অপুষ্টিজনিত জটিলতা ও জরায়ুর ক্যানসারের চিকিৎসা দিয়ে থাকে।
২০২০ সালের এপ্রিলে ব্রাউন ইউনিভার্সিটি এবং আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা প্রজেক্ট হোপের সঙ্গে একটি সহযোগিতামূলক কার্যক্রম শুরু করে হায়েফা। ডা. আবিদ এবং তার সংস্থা জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য ২০১৮ সালে গ্র্যান্ড চ্যালেঞ্জস কানাডার ‘স্টারস ইন গ্লোবাল হেলথ’ পুরস্কার পায়। ডা. আবিদ তার প্রতিষ্ঠান থেকে কাজের জন্য কোনো বেতন বা পারিতোষিক নেন না। ২০২০ সালের নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের মধ্য থেকে আগামী অক্টোবরে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
উল্লেখ্য যে তিনি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী থাকাকালীন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ শাখার সহ সভাপতি ছিলেন তিনি। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র কল্যাণ সংসদ ঢামেকসুর ৮৪-৮৬ শিক্ষাবর্ষের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। সারা বাংলাদেশের ইন্টার্নি ডাক্তার সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সক্রিয় ছাত্র নেতা হিসেবে কারাবরন, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হন।