1950
Published on আগস্ট 18, 2020রক্তে রাজনৈতিক সংগ্রামের স্রোতধারা মিশে থাকলেও তার জীবনটা ছিল সাধারণ। যার কাছে টুঙ্গিপাড়াকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম স্থান মনে হতো। তবে পরিস্থিতির কারণে তাকে বেরিয়ে আসতে সেই সাধারণ জীবনের খোলস থেকে। ঝুঁকি নিয়ে নির্বাসিত জীবনের ইতি টেনে ফিরতে হয়েছে দেশের মাটিতে। পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শিক অনুপ্রেরণায় হাল ধরতে হয় দলের। অসীম সাহসে যুক্ত হন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে। জনগণের ম্যান্ডেটে দেশ পরিচালনায় কাঁধে তুলে নেন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব। দেশকে এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার করেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজটিও তার সরকারের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। আর এই পঙ্কিল পথে অসংখ্যবার হত্যাকান্ডের পরিকল্পনার শিকার হলেও হার না মানা মানসিকতায় এগিয়ে চলেছেন। সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই জীবনাশ্রিত প্রমাণ্যচিত্র ‘হাসিনা : আ ডটার’স টেল’। শেখ হাসিনার পাশাপাশি বোন রেহানার জীবনকথনও উঠে এসেছে এই ডকুফিল্মে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শুক্রবার বিভিন্ন সময়ে বিটিভিসহ নয়টি চ্যানেলে প্রদর্শিত হয় তথ্যচিত্রটি।
সেন্টার ফর রিসার্চ এ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) ও এ্যাপেলবক্স ফিল্মসের যৌথ প্রযোজনায় প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন রেজাউর রহমান খান পিপলু। ৭০ মিনিট ব্যাপ্তির ছবির আবেগী উপস্থাপনায় উঠে এসেছে নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরোনো একজন শেখ হাসিনার গল্প; যেখান বর্ণিত হয়েছে তার জীবনের নানা অজানা বিষয়। এককথায় টুঙ্গিপাড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ঢাকায় আসা এবং প্রধানমন্ত্রী নন, একজন ‘সাধারণ’ নারীর ‘অসাধারণ’ হয়ে ওঠার বাস্তব গল্পই দেখানো হয়েছে ছবিতে। ছবির শুরুতেই দেখা যায় ব্যক্তি জীবনের শেখ হাসিনাকে, যেখানে তিনি পরিবারের সবার জন্য রান্না করছেন এবং একইসঙ্গে নাতি-নাতনিদের রান্না শেখাচ্ছেন। সেই রান্নাঘরের সূত্র ধরেই তিনি স্মৃতিচারণ করেন তাঁর মায়ের হাতের রান্না ও খাবারের প্রতি বাবার ভালবাসা নিয়ে। বলেন, মা অনেক সুন্দর রান্না করতে পারতেন। আর বাবা ভালবাসতেন মুরগির মাংস, গরুর মাংস ও রেজালা।
গল্পচ্ছলে ডকুফিল্মটিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন ছোটবোন শেখ রেহানাও। শৈশবের স্মৃতিচারণ করে মজাচ্ছলে শেখ রেহানা বলেন, ও তো (শেখ হাসিনা) ছোটবেলায় ভীষণ অলস ছিল। একটা ঘরের ভেতরই সব। এখন তো কত কাজ, অথচ ছোটবেলায় এতটা অলস ছিল যে ওর ঘরের নাম রাখা হয়েছিল ‘আলসেখানা’।
১৯৫২ সালে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকায় আসা থেকে শুরু করে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন ঘটনা উঠে এসেছে এই প্রামাণ্যচিত্রে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকা অবস্থায় পরিবারের সব সদস্যসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। এরপর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফেরা, দিক হারানো আওয়ামী লীগের হাল ধরে দলকে আবার কক্ষপথে ফেরানো, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রিত্বসহ নানা বিষয় বর্ণিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্রে। সহজাতভাবেই উঠে এসেছে বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে শেখ হাসিনার সম্পর্ক, তার সংস্পর্শে বেড়ে ওঠা, বাবার রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি তার অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের বিষয়টি।
টুঙ্গিপাড়া থেকে শেখ হাসিনার ঢাকায় আসার গল্পটি উঠে এসেছে চমৎকারভাবে। এ বিষয়ে শেখ বলেন, টুঙ্গিপাড়ায় গেলে মনে হয় আমি যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জায়গাটিতে এসেছি। এই শেকড় কখনও ভোলা যাবে না। প্রামাণ্যচিত্রে যেমন দেখা যায় শেখ হাসিনা তার ছোট্ট নাতিকে কোলে নিয়ে বসে আছেন, তেমনই দেখা যায় নির্মল আনন্দে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলছেন। আবার বাবার ছবির সামনে শাড়ির আঁচলে চোখ মোছার দৃশ্যে আনন্দের উল্টোপিঠে উঠে এসেছে বেদনার আখ্যান।
২০১৮ সালের ১৬ নবেম্বর ডকুফিল্মটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন উৎসবেও অংশ নেয় ছবিটি। সেই ধারাবাহিকতায় জাতীয় শোক দিবসকে কেন্দ্র করে এবার সেই পরিধি আরও বিস্তৃত হয়েছে। শুক্রবার বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ দেশের নয়টি টিভি চ্যানেলে দেখানো হয় ছবিটি।