3068
Published on জুলাই 22, 2020করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব, সুপার সাইক্লোন আম্পান ও সাম্প্রতিক বন্যা মোকাবেলা করেও বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্নতা ধরে রাখতে পেরেছে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিখাতের বিশেষজ্ঞরা।
আজ ২১ জুলাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ওয়েবিনার ‘বিয়ন্ড দ্যা প্যানডেমিক’ এর দ্বাদশ পর্বে উপস্থিত আলোচকরা তাদের বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।
রাত ৮.৩০ মিনিটে শুরু হওয়া এই ওয়েবিনার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সূচনা বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'করোনা মহামারিতে সারাদেশের মানুষ একটা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, নানা ভাবে মানুষ অর্থনৈতিক ভাবে, সামাজিক ভাবে বিপযস্ত। এরই মাঝে দেশে বন্যার ভয়বহতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যার ভয়বহতায় যাতে কৃষিখাত ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তই গতকাল আমরা বন্যাক্রান্ত প্রায় ৩৩টা জেলার কৃষি বিষয়ক কর্মকর্তা, মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সাথে আলোচনা, পর্যালোচনা করেছি, দিক নির্দেশনা দিয়েছি।
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার সংকটে জাতির উদ্দ্যেশে যতগুলো ভাষণ দিয়েছেন, ভিডিও কনফারেন্স করেছেন প্রতিটি জায়গায় তিনি কৃষিতে স্বাস্থ্যের পরে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। এবং তিনি বলেছেন 'এক ইঞ্চি জমি ও খালি রাখা যাবেনা। যে পরিস্থিতি, যে ভয়াবহতা এখন কোনো ভাবেই খাদ্য সংকট রাখা যাবে না।' আমরা এটা বিবেচনায় নিয়ে আমরা সর্বোচ্চ ভাবে চেষ্টা করেছি। তিনি আওয়ামী লীগ সহ সকল অঙ্গ সংগঠনকে কাজ করতে নির্দেশ দেন।'
প্রফেসর এমিরেটাস বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সাবেক উপাচার্য ডঃ এম এ সাত্তার মন্ডল বলেন, 'এতোকিছুর মধ্যেও ভালো খবর হলো আমাদের কৃষিতে উৎপাদন ব্যবস্থাতে একটা লক্ষণীয় পরিবর্তন এসেছে। আর এই পরিবর্তনটা হলো ০১ কোটি ৬৫ লক্ষ কৃষক পরিবার যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঙ্গিকে চাষাবাদ করতো সেটা এখনো আক্ষরিক অর্থে আছে। কিন্তু কার্যত একটি ঘটনা ঘটে গেছে। যে ব্যক্তি পর্যায় থেকে একটি সার্ভিস প্রোভাইডার বা মার্কেট-লেড একটি উৎপাদন ব্যবস্থা কিন্তু ধীরে ধীরে বাংলাদেশে এসেছে। যা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় এবং এটা বানিজ্যিক কৃষির সাথে খুব সংগতিপূর্ণ।
বাকৃবির বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ডঃ লুৎফুল হাসান বলেন, '১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয় তখন আপনারা দেখবেন বঙ্গবন্ধু কিন্তু কৃষির উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এবং যারই ফলশ্রুতিতে আমাদের আজকের যিনি কৃষিমন্ত্রী ডঃ আব্দুর রাজ্জাক উনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু পদার্পন করেন। এছাড়া ১৯৭৩ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারী জাতির পিতা এই সবুজ চত্বরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশে কৃষিকে আরো উন্নত করার জন্য এবং কৃষি শিক্ষা ও গবেষণা আরো এগিয়ে নেওয়ার জন্য কৃষি গ্যাজুয়েটদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা প্রদান করেন। সেই থেকে কৃষি গতি পেয়েছে এবং দূর্বার গতিতে এগিয়ে গিয়েছে।'
বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান বলেন মৎস্য খাতে কোভিড ২০১৯ এর নেতিবাচক এবং ইতিবাচক উভয় প্রভাব রয়েছে। নেতিবাচক এর মধ্যে প্রধানত হলো করোনার প্রভাবে মার্চ-এপ্রিল মাসে হ্যাচারিতে উৎপাদিত মাছের রেনু বিক্রি হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে ফ্লাইট সমূহ বন্ধ থাকায় মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। ইতিবাচক প্রভাব হলো, চলমান করণা দূর্যোগকালীন সময়ে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল ও পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় মাছ আহরণ কম হওয়ায় জলাশয়ে মাছের প্রজনন বৃদ্ধি পাবে। এতে মানুষের অধিক পরিমাণ পুষ্টি গ্রহণের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। অনুরূপভাবে পোল্ট্রি ও ডেইরি ক্ষেত্রেও প্রাথমিকভাবে অনেক ক্ষতি হয়েছে তবে সরকার এবার যে বাজেট ঘোষণা করেছেন সেখানে পোল্ট্রি এবং ডায়েরি সুরক্ষা নিশ্চিত হয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী বলেন, 'কৃষি উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনায় এসেছে এক ব্যাপক পরিবর্তন। ফলস্রুতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর জনসংখ্যা দ্বিগুন পরিমান বৃদ্ধি পেলেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে প্রায় চারগুন। এখন আমরা খাদ্য উৎপাদনে সয়ংসম্পূর্ন শুধু তাই নই বাংলাদেশে ধান উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় । আমি আরও বলি বাংলাদেশ ইলিশ উৎপাদনে প্রথম , মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয়, পাট উৎপাদনে তৃতীয়, ধান উৎপাদনে তৃতীয়, সবজী উৎপাদনে তৃতীয়, আলু উৎপাদনে সপ্তম আম উৎপাদনে সপ্তম। এখন আমরা খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ন। সরকারের ধারবাহিকতা আছে বলেই খাদ্য উৎপাদন খাদ্য নিরাপত্তা থেকে শুরু করে দেশের সার্বিক উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান।'
ওয়েবিনারটি আওয়ামী লীগের সামাজিক মাধ্যম ছাড়াও বিজয় টিভির পর্দায় ও ফেসবুক পেইজ, বিডিনিউজ২৪, সমকাল, ইত্তেফাক, ভোরের কাগজ, যুগান্তর, বাংলানিউজ২৪, জাগোনিউজ২৪, বার্তা২৪, সারা বাংলা, বাংলাদেশ জার্নাল এবং চ্যানেল আই'র ফেসবুক পেইজে প্রচারিত হয়।