হাজার মাইলের যাত্রা শুরু হয় যেমনি একটি পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে তেমনি সকল সাফল্যের ভিত্তি একটি সুনিপুণ পরিকল্পিত কর্মপন্থা। যেকোন কাজে সফলতা পাওয়ার পূর্বে অসম্ভব বলেই ধরে নেয় অনেকে। তবে সুপরিকল্পিত কর্মপন্থা অসম্ভবকেই জয় করে সহসাই।বাংলা ও বাঙালির স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে পরিকল্পনা মাফিক পরিচালিত হওয়ার জন্যই। এদেশের লড়াই-সংগ্রাম-সাফল্যের পরিকল্পনা বিন্দুর বাতিঘর "বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ"। সহস্র প্রতিকূলতা জয় করে বাঙালির সকল অর্জনের আতুরঘর আওয়ামী লীগ।
সাফল্য অর্জনের এ পন্থা কখনও বন্দুর, কখনও কিছুটা মসৃন।যুগ যুগ ধরে বাঙালির এ সাফল্যের পিছনে সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের ভূমিকা বরাবরই গণমানুষের কাছে প্রশংসনীয়। আওয়ামী লীগ সংগঠনের মূলনীতি এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঠিক রেখে দেশকে পরিচালিত করে যাচ্ছে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।ঐতিহ্যের এ ধারাবাহিকতায় এ সংগঠনের নেতৃত্বে এসেছেন অনেকেই।তবে বাঙালির ভাজ্ঞাকাশে বিজয় সূর্য উদিত হতে বাঙালির হৃদয়ের মনিকোঠায় দাগ কেটে চিরস্মরণীয় তারকা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালিন নেতৃত্ব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গনতন্ত্র,সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা তথা সকল ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরন ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মূলনীতি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংহত করে, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা সমুন্নত রেখে প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগনের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণ করা এবং নাগরিকের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক মুক্তি ও কল্যান নিশ্চিত করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর "অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ" নামে একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে।১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসনের অবসান হলে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয় পৃথিবীর মানচিত্রে।অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ পাকিস্তান রাষ্ট্রে "পাকিস্তান মুসলিম লীগ" নামে পরিচিতি লাভ করে। পাকিস্তানের সরকার পরিচালনায় এই সংগঠনের ভূমিকা মূখ্য হয়ে ওঠে। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ক্রমাগত পাকিস্তান মুসলিম লীগের কাছে উপেক্ষিত হতে শুরু করে। এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শামসুল হক সহ অনেকেই।
মনে রাখতে হবে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন "পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ"। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতার পরিচয় ছাত্রলীগের সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা। আর এভাবেই পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু। তাইতো ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্ম নেয়া খোকা মুজিব "পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ" প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলিতে কে এম দাস লেন রোডের 'রোজ গার্ডেন প্যালেস' এ নতুন দল গঠনের লক্ষ্যে আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে এক সম্মেলন আহবান করা হয়। সেদিন "পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ" নামে যে সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে তার সভাপতি হয়েছিলেন টাঙ্গাইলের মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারন সম্পাদক হয়েছিলেন টাঙ্গাইলের শামসুল হক, যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক হয়েছিলেন গোপালগঞ্জের শেখ মুজিবুর রহমান সহ অনেক পদেই নাম ঘোষনা হয়েছিল।
সম্মেলন স্থলে স্বল্প সময়ের জন্য এ. কে. ফজলুল হক উপস্থিত হয়েছিলেন। এ কে ফজলুল হক তখন পাকিস্তানের এ্যাডভোকেট জেনারেল(বর্তমান এ্যাটর্নি জেনারেল) তাই সম্মেলন স্থানে বেশিক্ষন উপস্থিত না থেকে সরকারি লোক হিসেবে দ্রুতই স্থান ত্যাগ করেন। "পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ" নবগঠিত কমিটি ২৪ জুন মাওলানা আবদুল হামিদ খাণ ভাসানীর সভাপতিত্বে ঢাকার আরমানিটোলা ময়দানে প্রায় চার হাজার লোকের উপস্থিতিতে জনসভা করে। ১৯৪৯ সালের ১৫ আগষ্ট সংগঠনের মুখপত্র হিসেবে ইত্তেফাক প্রকাশ করা হয়।
পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে "নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ" নামে যে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল সেটির সভাপতি হয়েছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে থেকেও সমর্থন জানিয়ে অনশন শুরু করেছিলেন।বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৫২ সালের পূর্বে ভাষা আন্দোলনের জন্য "সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ" গঠিত হয়েছিল। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন ও ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া সংগঠন ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল ব্যাপক।
১৯৫২ সালে শামসুল হক অসুস্থ হলে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৩ সালের ৯ জুলাই মুকুল পেক্ষাগৃহে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের দ্বিতীয় সম্মেলনে সভাপতি হয়েছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারন সম্পাদক হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল, পাকিস্তান খেলাফত পার্টি একত্রিত হয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। উদ্দেশ্য ছিল ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী মুসলিম লীগকে প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে ২৩৭ টি মুসলিম আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট পায় ২২৩ টি।যুক্তফ্রন্টের প্রাপ্ত ২২৩ টি আসনের মধ্যে আওয়ামী মুসলিম লীগ পায় ১৪৩ টি। যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করে এবং ২ এপ্রিল যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভা গঠন করা হয়। ১৯৫৪ সালের ১৯ এপ্রিল পাকিস্তান গণপরিষদে উর্দু ও বাংলা রাষ্ট্রভাষা ঘোষনা করা হয়।
১৯৫৫ সালে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলনের জন্য সংগঠন থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়ার চিন্তা করা হয়। ১৯৫৫ সালের ২১-২৩ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের তৃতীয় সম্মেলনে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে সংগঠনের নামকরণ করা হয় "পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ"। ১৯৫৫ সালের ঐ সম্মেলনে পুনরায় সভাপতি মাওলানা ভাসানী ও সাধারন সম্পাদক বঙ্গবন্ধু মুজিব।
১৯৫৭ সালে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ভিতরে মত পার্থক্য দেখা দেয়। পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তির বিষয়টি মাওলানা ভাসানী মেনে নিতে পারেননি। ১৯৫৭ সালের ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলের বিভক্তির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মাওলানা ভাসানীর পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিলের প্রস্তাব ভোটে হেরে যায়। ১৯৫৭ সালের ১৮ মার্চ মাওলানা ভাসানী পদত্যাগ করে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি(ন্যাপ) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। সেই বছর ২৫ জুলাই ঢাকার রুপমহল সিনেমা হলে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয় মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ কে।
১৯৫৭ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়।পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালে প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা এক ঘোষনাবলে দেশে সামরিক শাসন জারি করেন এবং সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল আইয়ুব খানকে সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত করেন ও রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেন। বঙ্গবন্ধু সহ অসংখ্য নেতা-কর্মী গ্রেফতার হন এবং মামলা সহ ৭৮ জন জনপ্রিয় রাজনীতিবিদকে নির্বাচনে অংশগ্রহনের অনুপযোগী ঘোষনা করে পাকিস্তানের সামরিক শাসকরা। ১৯৬২ সালের ৩০ জানুয়ারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রেফতারের প্রতিবাদে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের সূচনা ঘটে। সামরিক শাসনের অবসান ঘটে এবং ১৯৬২ সালের ১০ মে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মুক্তিলাভ করেন। পরের বছর ১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর বৈরুতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মৃত্যুবরন করেন।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু ও মাওলানা ভাসানীর নতুন দল গঠনের কারনে অনেক ত্যাগী নেতা সেসময় ন্যাপে যোগদান করেছিল। তখনকার আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে বঙ্গবন্ধু মুজিব ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে 'পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও' ইশতেহার প্রচার করে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয়। আওয়ামী লীগকে পুনোরুজীবিত করেন বঙ্গবন্ধু মুজিব। ১৯৬৪ সালের পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে পুরোপুরি সভাপতি মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও সাধারন সম্পাদকের দ্বায়িত্ব বরাবরের মতই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের অবসানের লক্ষে ১৯৬৬ সালের ১০ জানুয়ারি তাসখন্দ চুক্তি সম্পাদিত হয়। তাসখন্দ চুক্তি পরবর্তী রাজনৈতিক গতিধারা নিয়ে আলোচনা করার জন্য পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো লাহোরে ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি সম্মেলন আহবান করে। বঙ্গবন্ধু ৫ ফেব্রুয়ারি সাবজেক্ট কমিটির মিটিংএ বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন পরের দিন আলোচনার বিষয়বস্তুতে অন্তর্ভূক্তির জন্য। সম্মেলনের প্রধান আয়োজকরা ৬-দফার বিরোধিতা করলে বঙ্গবন্ধু ৬ ফেব্রুয়ারীর সম্মেলন বর্জন করেন।
পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ৬-দফা প্রস্তাব পাশ করা হয় ও দাবি আদায়ের লক্ষে কর্মসূচি গৃহিত হয়। ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সভাপতি হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারন সম্পাদক হয়েছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ৬-দফা দাবি আদায়ের লক্ষে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বহুবার গ্রেফতার হয়েছিলেন।
১৯৬৬ সালের ৭জুন শ্রমিক-জনতা-নেতৃবৃন্দ ৬-দফা দাবি আদায়ের লক্ষে ও বঙ্গবন্ধু সহ কারাবন্দীদের মুক্তির দাবিতে হরতাল কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে মনু মিয়া, শফিক সহ ১১ জন শহীদ হয়েছিলেন। ৬-দফা দাবি ক্রমেই স্বাধীনতা অর্জনের দিকে ধাবিত হতে থাকে। ৬-দফা পাকিস্তানি শাসকদের মনে ভয় তৈরি করেছিল যে, এ দাবি আদায় করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু হয়ত এ জাতির স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হবেন। তাইতো ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মাধ্যমে মেরে ফেলার চক্রান্ত করা হয়। সে বছর জেলে থেকে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ সম্মেলনে জেলে থেকে সভাপতি হয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারন সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমেদ।
১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে দেয়া আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে ২২ ফেব্রুয়ারী মুক্তি দেয়া হয়। পরের দিন ২৩ ফেব্রুয়ারী তৎকালিন রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে আয়োজিত জনসভায় তাকে "বঙ্গবন্ধু" উপাধিতে সম্মানিত করা হয়।
১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজিত আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষনা করেন পূর্ব পাকিস্তানের নাম হবে "বাংলাদেশ"। ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সম্মেলনে পূর্বের মতই সভাপতি বঙ্গবন্ধু মুজিব ও সাধারন সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমেদ। ১৯৭০ সালের নির্বাচন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। আওয়ামী লীগের প্রচার-প্রচারনা চলমান তখন এক বয়াবহ বন্যায় প্রায় ১০ লক্ষ লোক মৃত্যুবরন করে। বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনা বাদ দিয়ে নেতা-কর্মীদের নিয়ে বন্যা দূর্গত মানুষের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। বন্যাকবলিত অঞ্চল ব্যাতীত অন্য অঞ্চলগুলিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাস ছিল আওয়ামী লীগ ব্যাপকভাবে বিজয়ী হবে কেননা ৬-দফায় গনমানুষের সমর্থন ও গনঅভ্যুত্থানে গনমানুষের অংশগ্রহনই বঙ্গবন্ধুকে আত্মবিশ্বাসী করেছিল। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনায় ৬-দফা ও গণঅভ্যুত্থানের ১১-দফা আলোচনায় থাকায় বিজয় অর্জন সহজ হয়েছিল। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসন লাভ করেছিল। ঐ বছর ১৭ ডিসেম্বর পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ২৮৮ টি আসন। ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া খান কর্তৃক জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষনা করলে সাধারন মানুষ চরমভাবে বিক্ষুব্ধ হয়। ক্রমান্বয়ে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের এক দফা এক দাবি হয়ে ওঠে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের বিশাল জনসভায় জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষে দিকনির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন বিকেল ২:৪৫ মিনিট থেকে ৩:০৩ মিনিট পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু যে ভাষন দিয়েছিলেন তার মধ্যে ছিল স্বাধীনতা অর্জনের রোডম্যাপ। ঐ ভাষন হৃদয়ে ধারন করে এবং ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনা পেয়ে বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পরে। ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষনার পর থেকে এবং ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল যে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহন করে তার সকল কাগজপত্র সহ পরবর্তীতে প্রবাসী সরকারের সকল কাগজপত্রে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ব্যবহার না করে "বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ" ব্যবহার শুরু হয়।
দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে এ জাতির ৩০ লক্ষ প্রান শহীদ হয়েছে ও দুই লক্ষের বেশি মা-বোন সম্মান হারিয়েছে। আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা-কর্মী ও সাধারন মানুষ জীবন দিয়েছেন এবং ছাত্রলীগের প্রায় সতের হাজার নেতা-কর্মী জীবন দিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন 'বাংলাদেশ' নামক একটি ভূখন্ডের জন্ম দিয়েছে। শ্রদ্ধায় স্মরন করি বাংলাদেশ সৃষ্টিতে যাদের অবদান তাদের সবাইকে। ১৯৭১ সালে এদেশের মানুষের উপর যেসকল বর্বর কালো অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে পাকিস্তানি শাসকরা ও এদেশীয় দোসররা তা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না তাই তাদের চরমভাবে ঘৃনা করব আমৃত্যু।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পরিপূর্ণ বিজয় অর্জন করে পৃথিবীর মানচিত্রে সম্মানের সহিত মাথা উঁচু করে দাড়াতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু পুরো দুনিয়াকে তাক লাগায়ে দিয়েছিলেন এ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনে। ১৯৭২ সালে বিশ্বশান্তি পরিষদের "জুলিও কুরি" পুরুষ্কার পান বঙ্গবন্ধু মুজিব। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে বিনির্মানের কাজে নিরলস পরিশ্রম করতে থাকেন বঙ্গবন্ধু।
১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর যুদ্ধাহত যুবক মুক্তিযোদ্ধা ও যুবকদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানোর জন্য তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে "বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ" নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।যার নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত বিশ্বস্ত যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারন সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে বাংলায় ভাষন দিয়ে বাঙালি জাতিকে পুরো পৃথিবীর কাছে সম্মানিত করেন। ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগের দশম কাউন্সিলে সভাপতি হন এইচ এম কামরুজ্জামান ও সাধারন সম্পাদক হন জিল্লুর রহমান। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ৭১ এর পরাজিত শক্তি ও এদেশীয় পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা একত্রিত হয়ে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান সহ তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে। ভাগ্যক্রমে বিদেশে থাকায় বেঁচে যান আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরন রেখে ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করেন।
বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে ১৫ আগষ্ট সৃষ্টির ঘৃন্য পশুরা। পরবর্তীতে ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ কালো অধ্যায়ের নায়কেরাই পরবর্তীতে দেশ পরিচালনায় অংশ নেয় এবং সময়ের ব্যবধানে বিএনপি নামের সংগঠনের জন্ম হয়। জাতির কাছে স্পষ্টতর হয়ে ওঠে এরাই ১৫ আগষ্ট সৃষ্টির পিছনের নায়ক।
১৯৭৭ সালে আওয়ামী লীগের দুর্দিনে সংগঠনের নির্বাচিত আহবায়কের দ্বায়িত্ব পান সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন। ১৯৭৮ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি হন আবদুল মালেক উকিল ও সাধারন সম্পাদক হন আব্দুর রাজ্জাক। তৎকালিন সরকারের নির্যাতনে অতিষ্ঠ দিশেহারা বাঙালি জাতিকে আশার আলো দেখাতে বাংলাদেশে আশার ইচ্ছা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারী আওয়ামী লীগের সম্মেলনে অনুপস্থিত থেকেও সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি নির্বাচিত হন জননেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারন সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক।
নিজ জন্মভূমি বাংলাদেশে ফিরে আশার পথ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার জন্য মসৃন ছিল না। তৎকালিন জিয়াউর রহমান সরকার বিভিন্নরকম বাধা দিয়ে শেখ হাসিনার আশার পথ বন্দ করে দিতে সচেষ্ট ছিল। সাহসের সহিত সকল রক্তচক্ষু উপেক্ষা তরে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আশায় এ জাতি প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। সেদিন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ফিরে এসেছিলেন বলেই আজ আমরা এগিয়ে চলেছি উন্নত বিশ্বের সাথে সমান তালে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক দেশের নিকট অনুকরণীয় হয়ে দাড়িয়েছে।
জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালে সামরিক আইন জারি করে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করে। ১৯৮৭ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি হন শেখ হাসিনা ও সাধারন সম্পাদক হন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। স্বৈরশাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে এতে অংশ নেয় যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। যুবলীগের কর্মী নুর হোসেন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হন। ১৯৯১ সালের ৬ ডিসেম্বর আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার এরশাদের পতন হয়। এ আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সাধারন মানুষ সহ কয়েকটি সংগঠনের নামমাত্র অংশগ্রহন।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে অদৃশ্য শক্তির গোপন আতাতের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় আসে।যে দলটির স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহন তো দূরের কথা, সেসময় জন্মই হয়নি এ দলটির।বরং তারা ক্ষমতায় আসতে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সাথে জোট করে এ জাতিকে লজ্জিত করেছে বারবার। এই বিএনপি ই স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে বারবার তুলে দিয়েছে পতাকা। ১৯৯২ সালের কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের সভাপতি হন দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও সাধারন সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী বিএনপি একটি প্রহসনের নির্বাচন করলেও সাধারন মানুষের তোপের তা বাতিল করে। ঐ সময়কার ভুতুরে সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ করে যে নির্বাচন হয়েছিল তাতে সাধারন মানুষের আশা আকাক্ষারর প্রতিফলন ঘটেছিল এবং বিজয়ী হয়েছিল ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখা দল, ৬-দফায় ভূমিকা রাখা দল, ৭০ নির্বাচনে ভূমিকা রাখা দল, মহান মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখা দল আওয়ামী লীগের। বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকান্ডের পর দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। শান্তির বার্তা পৌছে দিয়ে পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন সহ বহু উন্নয়ন করে জাতির ভাগ্য উন্নয়নে সামর্থ্য হয় আওয়ামী লীগ সরকার।
২০০১ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসে বিএনপির নেতৃত্বে স্বাধীনতা বিরোধী নিয়ে গঠিত জোট। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী সহ সাধারন মানুষের উপর শুরু হয় মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর জেল-জুলুম-নির্যাতন। ২০০২ সালের এ নির্যাতনকালিন সময়ে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারন সম্পাদক আবদুল জলিল।
নির্যাতন করে যখন আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করা যাচ্ছে না তখন তারেক রহমান নিয়ে আসেন নতুন ফর্মুলা। ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট ঘটে পৃথিবীর ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক ঘটনা। মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমানের নির্দেশে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ন জনসভায় চালানো হয় গ্রেনেড হামলা। উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করা। অনেকেই শহীদ হয় ও পঙ্গুত্ব বরন করে কিন্ত আল্লাহর অশেষ রহমতে বেচে যান দেশরত্ন শেখ হাসিনা।দেশের মানুষ সরকারের এ ঘৃন্য হামলায় বিচলিত হয়েছে।
২০০৭ সালের ১৮তম সম্মেলনে সভাপতি হন জননেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারন সম্পাদক হন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ২০১২ সালের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক যথাক্রমে শেখ হাসিনা ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ২০১৬ সালের ২০তম সম্মেলনে সভাপতি হন শেখ হাসিনা ও সাধারন সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের। ২০১৯ সালের সম্মেলনে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আজকে এই নেতৃত্বগুণ দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট।উন্নয়ন অগ্রগতির ধারাবাহিকতার স্বার্থে বাংলাদেশের সাধারন ভোটারদের রায়ে পরপর তিনবার ক্ষমতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
১৯৪৯ থেকে ২০২০ দীর্ঘ এ পথ পাড়ি দিতে আওয়ামী লীগ বহুবার বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। কখনও পাকিস্তানি সরকার, কখনও পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী, কখনও বাংলাদেশে বসবাসকারী পাকিস্তানি প্রেতাত্মা, কখনও পাকিস্তানি ভাবধারায় গঠিত বিএনপি, কখনও অজানা শত্রু দ্বারা। শত প্রতিকূলতা পিছনে ফেলে আওয়ামী লীগ এ জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালঘ্ন থেকে আজ অবধি বাঙলা ও বাঙালির সকল সংগ্রাম-সাফল্যে পাশে থেকেছে।এ সংগঠনটি গনমানুষের দুঃখে ব্যাথিত হয়েছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সর্বদাই।
আজকে করোনা ভাইরাসের মত পরিস্থিতিতে সরকারের পাশাপাশি মানুষের পাশে আছে একমাত্র সংগঠন আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি, নেতা-কর্মীরা মানুষের পাশে দাড়াতে গিয়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই জীবন দিয়েছে ইতোমধ্যে তবুও কর্মসূচী অব্যাহত রেখে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ,যুবলীগ,ছাত্রলীগ সহ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
"বাতিঘর" শব্দটির ইংরেজি শব্দ 'লাইটহাউজ'। এটি এক ধরনের সুউচ্চ মিনার আকৃতির দালান যা থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় আলো ফেলা হয়। এই আলোর মাধ্যমে সাধারনত গভীর সমুদ্রে নাবিকদের সমুদ্র পথের দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। যেখানে নাবিকরা নির্দশনা না পেলে মৃত্যুর পথে ধাবিত হবে অথবা অঅনুমোদিত কোন জলসীমায় প্রবেশ করবে। যার পরিনতি বয়াবহ। বাঙালি জাতি জীবন যুদ্ধে সংগ্রাম করে সর্বদাই। তবে সাফল্যের মুখ দেখেছেও বহুবার। ৫২ ভাষা আন্দোলন, ৫৪ নির্বাচন, ৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ ছয় দফা, ৬৯ গনঅভ্যুত্থান, ৭০ নির্বাচন, ৭১ মুক্তিযুদ্ধ, ৯০ স্বৈরাচার পতন আন্দোলন সহ সকল ক্ষেত্রেই বাঙালি জাতি নেতৃত্বে ও পাশে পেয়েছে আওয়ামী লীগকে। তাইতো সফলতাও পেয়েছে এসব দুঃসময়ে। এসব আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আওয়ামী লীগ। বর্তমান সময়েও রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে আমরা ঐক্যবদ্ধ। বাতিঘর যেমনি নাবিকদের পথের নির্দেশনা দেয় তেমনি আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষকে চলার পথে সাহস শক্তি জোগায়। তাইতো বলা চলে বাঙালির সকল আন্দোলন সংগ্রামের সাফল্যের বাতিঘর "বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ"।