2331
Published on মে 8, 2020নানা সংকট, প্রতিকূলতা সর্বোপরি করোনা পরিস্থিতে শেষ পর্যন্ত সিলেট বিভাগে হাওরের পাকা ধান কাটা প্রায় শেষ। বাকী জমির ধান উঠাতে আর মাত্র কয়েকদিন লাগবে। গত মঙ্গলবার (৫মে) পর্যন্ত হাওরে ৯৫ ভাগ ও বিভাগে ৭৮ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে বলে ইত্তেফাককে জানান সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক শ্রী নিবাস দেব নাথ।
হাওর পাড়ে ‘খালা’য় কড়া রোদে কিষাণ-কৃষাণী ধান শুকিয়ে মাড়াই দিয়ে গোলায় উঠাচ্ছেন। সেই দৃশ্য মনোহর। অনেকেই বলেছেন, ‘তা সম্ভব হয়েছে করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের সময়োচিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ফলে।’
কৃষকরা জানান, গত ১০ বছরেও প্রাকৃতিকে এমন সদয় হতে দেখা যায়নি। সিলেটের চার জেলার সাড়ে ১৩ লাখ কৃষি পরিবারের মুখে এখন হাসি ফুটেছে। এবারও যে দুর্যোগ-দুর্বিপাকের আশঙ্কা ছিলনা যে তাও নয়।
‘তবে শেষতক আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কোন ধান নষ্ট হয়নি’-এই মন্তব্য করে কৃষকরা বলেন, ‘এবার আমাদের বড় পাওনা দুটি: সমুদয় ধান ঘরে তোলা। আর ধান কাটার শ্রমিক সংকটের সমাধান।’
কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, সিলেটে এক লাখ ৬২ হাজার ধান কাটার শ্রমিক ও কৃষকের সাথে প্রশাসন, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীরাও ধান কাটায় যুক্ত ছিলেন।
এদিকে সিলেটের কৃষকরা অধিক পরিমাণে বোরো ধান ঘরে তুললেও পুরোপুরি খুশি হতে পারছেনা না সরকার নির্ধারিত ধানের মূল্যে। গত বছর সরকার ধান কিনে মণ প্রতি ১ হাজার ৪০ টাকা দরে। এবারও একই দাম।
কৃষি বিভাগ জানায়, সিলেট বিভাগে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ১৯৫ হেক্টর বোরো আবাদ হয়। এ থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২০ লক্ষ মে.টন ধান। কিন্তু এবার যে পরিমাণ ধান উৎপন্ন হয়েছে। সে তুলনায় সরকারের ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অনেক কম। এতে কৃষকরা অসন্তুষ্ট।
সিলেট আঞ্চলিক খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবার সিলেট বিভাগে ৫৪ হাজার ২৭৮ মে.টন ধান কেনা হবে সরকারিভাবে। এর মধ্যে সিলেটে ৫ হাজার ৯৯৩ মে.টন, মৌলভীবাজারে ৬ হাজার ৬১৮ মে.টন, হবিগঞ্জে ১৫ হাজার ৮০১ মে.টন এবং সুনামগঞ্জ জেলা থেকে ২৫ হাজার ৮৬৬ মে.টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সোমবার পর্যন্ত সরকারিভাবে মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে মোট ১১ টন ধান কেনা হয়।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সিলেটে বোরো ফসলটিই প্রধান। তবে তা ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রকৃতি নির্ভর। কৃষি বিভাগ জানায়, বোরো ঘরে উঠলে সিলেটের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে বছরে সাড়ে ১৪ লক্ষাধিক মে.টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে বছরে। সারা দেশে সিলেটের খ্যাতি শস্যভাণ্ডার হিসাবে। ফসলটি ঘরে তুলতে প্রতি বৈশাখের শুরুতেই পাহাড়ি ঢল, বৃষ্টি ও বন্যার সাথে যুদ্ধ করতে হয় সিলেটবাসীকে। প্রকৃতি সদয় হলে অনেক সময় ফসল ঘরে উঠে। নতুবা ধানের গোলা বেদনায় পূর্ণ হয়। খোরকির সংকট দেখা দেয়। এবার করোনায় সৃষ্ট নতুন সংকটে বৈশাখের শুরুতেই ধান কাটার শ্রমিকের অভাব দেখা দেয়। একদিকে বাম্পার ফলন। অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়ার শঙ্কা। কৃষক, স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারেরও উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় প্রশাসন, কৃষি বিভাগ পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকার সংসদ সদস্য, দলীয় নেতাকর্মী, স্বেচ্ছাসেবীগণ কৃষকের ধান কাটতে নামেন। বাহিরের জেলা থেকে ধান কাটর শ্রমিক এনে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সবাই ধান কাটতে নামেন। সিলেট বিভাগে হাওরের ধান কাটতে মোট ৩৬২টি কম্বাইন হারভেস্টার ও এক হাজার ৫৬টি রিপার দেয়া হয়। সুনামগঞ্জের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনায় ১১০ টি হারভেস্টার ও ১০০ রিপার যন্ত্র সুনামগঞ্জের হাওরে কাজ করে। এতে কৃষক কম খরচে দ্রুত ধান কেটে ফেলেন।
কৃষকরা জানান, যন্ত্র দিয়ে ধান কাটলে শীষ থেকে ধান জমিতে পড়েনা এবং পরিবহনেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়না।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, কৃষরা এখন হাওরে ধান শুকাচ্ছেন, মাড়াই দিচ্ছেন। তাদের মুখে এখন হাসি ফুটেছে।
উজান তাহিরপুর গ্রামের কৃষক আর্শাদ আলী জানান, শনির হাওরের ৫ কিয়ার জমির ধান কম্পাইন্ড হার্ভেস্টার দিয়ে কর্তন করেছেন দুই ঘণ্টায়। এতে তার মোট খরচ হয় ৬ হাজার টাকা। শ্রমিক দিয়ে কাজটি করলে খরচ পড়তো ১৬ হাজার টাকা।
তাহিরপুর উপজেলা উপ-সহাকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, প্রতিটি হার্ভেস্টার যন্ত্র ঘণ্টায় ৯০শতক জমির ধান কাটে। একই সাথে ধান মাড়াই,ঝাড়া ও বস্তা ভর্তি হয়ে যায়।