1164
Published on এপ্রিল 21, 2020কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, এমপি বলেছেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত ও সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার বিষয়ে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) ইতোমধ্যেই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে। করোনার কারণে খাদ্য সংকটে পড়তে পারে পুরো বিশ্ব। দেখা দিতে পারে দুর্ভিক্ষও। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই করোনার মহামারির কারণে মন্দার হাত থেকে অর্থনীতিকে রক্ষা করতে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও মজুদ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। কৃষিমন্ত্রী আজ মঙ্গলবার নেত্রকোনার মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়ন এবং খালিয়াজুরী উপজেলার মেন্দিপুর ইউনিয়নের হাওড়ে বোরো ধান কাটা পরিদর্শনের সময় এসব কথা বলেন।
এসময় সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো: আশরাফ আলী খান খসরু, স্থানীয় সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল, স্থানীয় সংসদ সদস্য মানু মজুমদার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নাসিরুজ্জামান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো.আব্দুল মুঈদ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট এর মহাপরিচালক ড. মোঃ শাহজাহান কবীর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ময়মনসিংহ অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক নিখিল চন্দ্র সেন, নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শনকালে সংশ্লিষ্ট চাষি ও শ্রমিক ব্যতিত কোন রাজনৈতিক কর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা জনগণ কেউ উপস্থিত ছিলেন না। করোনা থেকে নিরাপদে থাকতে সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়। কৃষিমন্ত্রী কৃষকদের মাঝে সাবান, গামছা ও লুঙ্গি বিতরণ করেন। এসময় কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমাদের অনুরোধে শ্রমিকগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ধান কাটতে এসেছেন। আমরা তাদেরকে উৎসাহিত করতে এবং তাদের প্রতি সহানুভূতি জানাতে এসেছি। সরকার সব সময় তাদের পাশে রয়েছে। কেউ অসুস্থ বা করোনাক্রান্ত হলে সরকারের পক্ষ থেকে চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে এবছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হলো ০২ কোটি ০৪ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। এ লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২০ ভাগের যোগান দেয় হাওরাঞ্চলের বোরো ধান। হাওরে বছরে শুধু একটি ফসল হয়, সেটি হলো বোরো ধান। এই ফসল ফলাতে হাওরের কৃষকেরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে এবং সার, সেচ, বালাইনাশকসহ প্রভৃতিতে তার সর্বস্ব বিনিয়োগ করে। এ ফসল যদি নষ্ট হয়, সময়মতো ঘরে না তোলা যায় তাহলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি, সারাদেশে খাদ্যের সংকট সৃষ্টি হতে পারে। এ অবস্থায়, হাওরের ফসল সুষ্ঠুভাবে ঘরে তোলা জরুরি। আর এটি করতে পারলে বাংলাদেশের ধান উৎপাদনে তা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। একই সাথে, নিশ্চিত করবে খাদ্য নিরাপত্তা । কৃষি মন্ত্রণালয় এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
ধান কাটার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা, কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ এবং শ্রমিকদের ধান কাটায় উৎসাহ প্রদানসহ নানা উদ্যগোর কথা তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন, জেলা পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং জেলা/উপজেলা/ইউনিয়ন কৃষি বিভাগকে সম্পৃক্ত করে আমরা হাওরে আসার জন্য শ্রমিকদের সবধরণের সহায়তা দিচ্ছি। গমনেচ্ছুক শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রত্যয়ন পত্র প্রদান, নিরাপদ যাতায়াতের জন্য গাড়ি, নির্বিঘ্ন গমনাগমন এবং ধান কাটা স্থলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে থাকার ব্যবস্থা প্রভৃতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নেয়া হচ্ছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকের পাশাপাশি হাওড় এলাকায় ধান কাটার জন্য ২৯৪ টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও ৪০৬ টি রিপার ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে অতি সম্প্রতি ৭০% ভর্তুকিতে জরুরিভিত্তিতে প্রেরিত নতুন ১২৮টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার এবং ২৩টি রিপার । প্রতিকূল পরিবেশে হাওরের কৃষক যাতে সহজে যন্ত্রপাতি কিনতে পারে সেজন্য যন্ত্রের দামের ৩০% দেয় কৃষক এবং ৭০% দেয় সরকার । একই সাথে, দেশের অন্য এলাকা থেকে হাওরের আগাম বোরো ধান কাটার জন্য কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার প্রেরণ করা হয়েছে। এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এছাড়াও, জেলার কর্মহীন বিভিন্ন পেশার মানুষকে খাদ্য সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ধান কাটায় উৎসাহিত করা হচ্ছে। অদ্যবধি হাওড় এলাকায় ২৬১,০০০ শ্র্রমিক ধান কর্তনের কাজে নিয়োজিত আছে। ফলে আশা করা যায়, আগাম বন্যা বা অন্য কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে হাওরের কৃষকেরা সময়মতো সুষ্ঠুভাবে ধান ঘরে তুলতে পারবে।
উল্লেখ্য, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে হাওরাঞ্চলের কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া- এই সাতটি জেলায় এবছর শুধু হাওরে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে (২০, এপ্রিল) পর্যন্ত হাওরের ৯৪,৭৩৭ হেক্টর (২১.২৭%) জমির ধান কাটা হয়েছে। নেত্রকোনা জেলার হাওরে ৪০ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। ধান কাটার জন্য ৬২ টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও ২৫টি রিপার ব্যবহৃত হচ্ছে। ১১ হাজার ৪৫০ জন শ্র্রমিক ধান কর্তনের কাজে নিয়োজিত আছে। এর মধ্যে (২০, এপ্রিল) পর্যন্ত ১২ হাজার ৬২০ হেক্টর (প্রায় ৩১.%) জমির ধান কাটা হয়েছে।