5643
Published on সেপ্টেম্বর 30, 2019সম্প্রতি দেশে শুরু হওয়া দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সামগ্রিক স্বার্থেই সমাজে বৈষম্যের জায়গাটিতে এ ধরনের আঘাতের প্রয়োজন ছিল।
রোববার রাতে নিউ ইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এই অভিযান চালু রাখার কথাও বলেন।
“দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালানো হচ্ছে ওয়ান-ইলেভেনের মতো পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়। আর সেই কাজটি আমি নিজের ঘর থেকেই শুরু করেছি। এটি অব্যাহত থাকবে। আমি বলতে চাচ্ছি ওয়ান-ইলেভেন লাগবে না। কোনো অন্যায় হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আমরাই নেব,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিতের পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন ক্রীড়া ক্লাবে র্যাবের অভিযানে জুয়া এবং ক্যাসিনো পরিচালনায় সরকার সমর্থক যুবলীগের নেতাদের সম্পৃক্তার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
র্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, কৃষক লীগের নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঠিকাদার জি এম শামীমকে, যিনি যুবলীগ নেতা পরিচয়ে সরকারি ঠিকাদারীর কাজ নিয়ন্ত্রণ করতে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগের মুখে থাকা যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ সরকারদলীয় অনেক নেতাই আত্মগোপনে চলে গেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
অভিযান শুরুর পর ঘুরেফিরে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নাম গণমাধ্যমে আসছে- এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা দীর্ঘকাল যাবত রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছি। তাই একটু কিছু হলেই তা ফলাও করে প্রচারের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।”
সমাজে সমতা আনতে এ ধরনের অভিযানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া লোকজনের কারণে সামাজিক বৈষম্য বাড়ে এবং সৎভাবে যারা আয়-উপার্জন করেন তাদের সন্তানেরা হতাশায় ভোগেন। শিশুরা তো বুঝতে পারে না, তাই তারা মা-বাবার কাছে জানতে চায়- ‘ওরা যদি দামী গাড়িতে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে পারে, দামী পোশাক পরতে পারে, আমরা কেন পারি না?’ এমন পরিস্থিতিতে একটি সমাজ এগোতে পারে না। এমন পরিস্থিতির অবসানের জন্যই একটি আঘাত দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। সেটি করা হচ্ছে সামগ্রিক স্বার্থে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “এই যে অনিয়ম, সেটির শুরু কোথায়, গোড়াটা কোথায়- সেটি তো দেখতে হবে। পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পরই যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে শুরু করেছে, ক্ষমতায় বসে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট দিয়ে রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করতে চাইছে, তখনই তারা একটি এলিট শ্রেণি তৈরি করেছে, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন শুরু হয়েছে। মানি ইজ নট আ প্রবলেম- এমন কথা বলেই তো কাড়ি কাড়ি টাকা দিয়ে রাজনীতিকে নষ্ট করা হয়েছে। এখনও তারাই ঘুষ খাবে, দুর্নীতি করবে, সবকিছু করবে। আবার হালাল মাংসও খুঁজবে। এটাই তো ওদের চরিত্র।
“মসজিদে যাবে নামাজ পড়তে, সেখানে গিয়েও তার ফুটানি দেখাতে হবে, তার বডিগার্ড থাকবে, তার জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করে রাখতে হবে, তার গাড়ি ঢুকবে বলে সব গাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে, তার স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স- যাদের কোনো লাইসেন্স নেই, কোনো নিয়ম নেই, কিছু নেই, মনে হয় কোনো দেশের রাজা এসেছে নামাজ পড়তে। এমন বৈষম্য কেন থাকবে?”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মানুষ যত ওপরে উঠে, তত ভদ্র হতে হয়, হাম্বল হতে হয়। আর আমাদের উল্টো। এটা হয় তখনই, যখন হঠাৎ করে পয়সার জোরে নিচ থেকে অনেক ওপরে যায়, তখন তারা ভাবে ‘মুই কী হনুরে’। সমাজের এই জায়গাটায় একটি আঘাত দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। অসৎ উপায়ে অর্জিত অর্থের বাহাদুরি, সে সম্পদের শো-আপ করা, আর যারা সৎপথে চলবে, তারা একেবারে মরে থাকবে, এটা তো হতে পারে না।”
তিনি বলেন, “আমি অভিযান চালাচ্ছি। কিছু মানুষ অখুশি হতে পারে। তাতে আমার কিছু আসে যায় না। কারণ আমার কোনো সম্পদের মোহ নেই। ক্ষমতারও মোহ নেই। আমার বাবা দেশটা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। আমি দেশটাকে গড়ে তুলতে চাই তার আদর্শ দিয়ে, স্বপ্ন নিয়ে।
“আমি সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। আজ অর্থনীতি উন্নত হচ্ছে। সবাই ভাল থাকুক- এটা আমি চাই। কিন্তু এই সুযোগ নিয়ে মুষ্টিমেয় লোক সমাজটাকে কলুষিত করবে, এটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ওয়ান ইলেভেন আসবে না। ওয়ান ইলেভেন আসা লাগবে না। যা করার আমি করব।”
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সম্মেলন যথাসময়ে আয়োজনের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি কুখ্যাত রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশের কাছে ফিরিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে নিজ হাতে নথিপত্র তুলে দিয়েছি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যারা সমালোচনা করে, সেই দেশে কীভাবে একটি দেশের রাষ্ট্রপতি, জাতির পিতার ঘাতক ঠাঁই পায়, এটা কেমন আচরণ, সেটা জানিয়োছি।”
নিউ ইয়র্কে নিজস্ব ভবনে বাংলাদেশ কন্স্যুলেট প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ফ্লোরিডায় কন্স্যুলেট খোলা হবে বলেও জানান সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যা প্রসঙ্গে বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক হয়েও তাদের সরকারের উপর আস্থা রাখতে না পারা দেশটির জন্য লজ্জাজনক। মিয়ানমারকেই এই সংকটের সমাধান করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনের মঞ্চে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ও বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) নূর এলাহী মিনা।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়াসহ নিউ ইয়র্ক সফরে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
নিউ ইয়র্কে আটদিনের সরকারি সফর শেষে রোববার রাতেই দেশের পথে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদঃ বিডিনিউজ২৪ডটকম