3660
Published on জুন 23, 2019মোহাম্মদ নাসিম এমপি
প্রবল প্রতিকূল পরিবেশে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রাজধানীর কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে এক কর্মী সমাবেশের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক আওয়ামী লীগের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাঙালির যত কিছু মহত্ অর্জন সবই অর্জিত হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। একটি জাতির কাছে স্বাধীনতার চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন দেশ উপহার পেয়েছি। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধু যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিলেন, তা তিনি বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি পরাজিত শক্তি বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা পিছিয়ে দিয়েছিল। ঘাতকরা জাতীয় চার নেতাকেও কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করে। আইনের শাসন রুদ্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় অর্থনীতির চাকাও। সামরিক শাসন ও স্বৈরতন্ত্র জাতির ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে। শুরু হয় হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত লাল-সবুজের পতাকা স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে গাড়িতে তুলে দেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধরে ধরে হত্যা করা হয়। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে ফেলে রাখা হয়। চরম সেই সংকটাপন্ন অবস্থায় ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
দীর্ঘ ছয় বছরের নির্বাসন জীবন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শুরু হয় বাঙালির ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত আন্দোলন-সংগ্রাম জীবনদানের পর দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। তখন থেকে দেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরে আসে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে সংসদকে সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হয়। ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত পানি বণ্টন চুক্তি করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি করে দীর্ঘ দিনের হানাহানি রক্তপাত বন্ধ করা হয়। আইনের শাসন চালু হয়। ২১ শে ফেব্রুয়ারি মর্যাদা পায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই পাঁচ বছরের সময়কাল জাতির ইতিহাসে এক সুবর্ণ সময় হিসেবে বিবেচিত হয়।
এরপর ২০০১ সালে বিএনপি-জামাতের ক্ষমতায় আরোহণের মাধ্যমে দেশ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি হাতে চলে যায়। জঙ্গি উত্থান ঘটিয়ে পুরো দেশকে পরিণত করা হয় মৃত্যু উপত্যকায়। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে শেখ হাসিনার ওপর একের পর এক গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে নারী নেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হয়। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের পাশাপাশি হাওয়া ভবন কেন্দ্রিক লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করা হয়। পছন্দের লোকের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গিয়ে বিএনপি-জামায়াত সরকার দেশে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে শেখ হাসিনাকে। তাকে রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়। সুশীল সমাজ নামধারী একটি গোষ্ঠী মাইনাস টু ফরমুলা দেয়। দলের অনেক নেতাও তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সেই ফরমুলা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ কর্মীরা শেখ হাসিনার পাশে ছিলেন বলেই তারা সে দিন সেই মাইনাস ফরমুলা বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে প্রমাণ হয়েছে, সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরাই আওয়ামী লীগের মূল শক্তি। যখনই আওয়ামী লীগ কোনো সংকটে পড়েছে, তখনই কর্মীরা দৃঢ়—ইস্পাত ঐক্য গড়ে তুলে আওয়ামী লীগকে রক্ষা করেছে। তীব্র জনমতের কাছে ষড়যন্ত্রকারীরা পরাজিত হয়। এরপর সব দলের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারও আওয়ামী দেশ পরিচালনার সুযোগ লাভ করে। সেই থেকে টানা তৃতীয় মেয়াদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। দেশের আর্থ- সামাজিক অবস্থা অতীতের যে-কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। মাথাপিছু আয় ১৭৫২ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। আমরা এখন স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করেছি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঘাতকরা তাকে সেই সুযোগ দেয়নি। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ লাখ লাখ নেতাকর্মী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার পাশে থাকবে। এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাবে।
লেখক :প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ