9256
Published on মার্চ 27, 2019লড়াইয়ের জন্য জাতিকে পুরোপুরি প্রস্তুত করে যৌক্তিক সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানী শাসন শোষণ থেকে বাঙালীকে মুক্ত করার ঐতিহাসিক ঘোষণার লিখিত রূপ এতকাল ধরে সামনে এসেছে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে একেবারেই নতুন তথ্য। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের ঠিক আগ মুহূর্তে জানা যাচ্ছে, স্বকণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান আর্মি ঢাকা রেডিও’র দখল নিলেও, গোপন তিনটি ট্রান্সমিটার আগে থেকে প্রস্তুত রেখেছিলেন দূরদর্শী নেতা। সেগুলোতে টেলিফোনে নিজের ঘোষণা রেকর্ড করান তিনি। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন বার্তা প্রচারের ব্যবস্থা করেন। চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র নিয়ে প্রচুর মাতামাতি হলেও, এটি চালু হওয়ার অন্তত ১৮ ঘণ্টা আগে গোপন রেডিও মনিটর করে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার সংবাদ প্রকাশ করে বিশ্বগণমাধ্যম।
সে সময় পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে প্রকাশিত দুর্লভ সংবাদপত্র, আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার পর্যালোচনা, বিদেশী সাংবাদিকদের দেয়া বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাতকার, বিভিন্ন বই-পুস্তকে লিপিবদ্ধ ঘটনাবলী পাঠ ও বিশ্লেষণ করে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়কের নিজের কণ্ঠে স্বাধীনতা ঘোষণার প্রমাণ পাওয়া যায়।
বিভিন্ন সংবাদের সূত্র অনুসন্ধান করে জানা যায়, পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হলে পৃথিবীর বহু দেশের সাংবাদিক নিজেদের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ ভারতে অবস্থান নেন। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থান নেন তারা। দিল্লী ও কলকাতায় বসে বাংলাদেশের খবর সংগ্রহ করেন। আসামের গুয়াহাটি ও মেঘালয়ের শিলং থেকে রেডিও মনিটর করে ইউনাইটেড নিউজ অব ইন্ডিয়া। পেট্রাপোলে থেকে মনিটরিংয়ের কাজ করে ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনাল। আগরতলায় রেডিও ব্রডকাস্ট অনুসরণ করে প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া। পরে ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনাল, দ্য এ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, রয়টার্সের মাধ্যমে সারা বিশ্বে শেখ মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষণার খবর ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৭১ সালে আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পত্রপত্রিকার একটি বড় ও দুর্লভ সংগ্রহ ঘেঁটে দেখার সুযোগ হয়েছে এই প্রতিবেদকের। ওইসব পত্রপত্রিকার সংবাদ নিশ্চিত করে, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে ঢাকায় বসে শেখ মুজিব তার গোপন ট্রন্সমিটার ব্যবহার করে নিজের কণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সময়ের দিক থেকে এগিয়ে থাকায় ২৬ মার্চ সকালে আমেরিকা থেকে প্রকাশিত অনেক পত্রিকা শেখ মুজিবের কন্ঠে স্বাধীনতা ঘোষণার খবর প্রকাশ করতে সক্ষম হয়। একইদিন দুপুর এবং সন্ধ্যায় প্রকাশিত দৈনিকে বাংলাদেশের ঘটনাবলীর আপডেট দেয়া হয়। পাকিস্তানের ম্যাপ, দেশটির জন্মের প্রেক্ষাপট, দুই অংশের ভৌগোলিক অবস্থান, বিচ্ছিন্নতা, পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিমা শাসকদের বৈষম্যমূলক নীতি ইত্যাদি জরুরী তথ্য ও ছবি প্রকাশের মাধ্যমে শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণাকে এক ধরনের সমর্থন দিয়ে যায় পত্রিকাগুলো। যৌক্তিকতা তুলে ধরে।
২৬ মার্চ ‘East Pakistan In Cvil War’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্বনামধন্য দৈনিক। পশ্চিম পাকিস্তানী আর্মি পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা রেডিও দখল করে নিয়েছে এবং এটি বন্ধ করে দিয়েছে জানিয়ে সংবাদে লেখা হয়: ‘The West Pakistani army seized control of Dacca Radio in East Pakistan and closed it down.’ পাকিস্তান থেকেও পশ্চিমাদের ঢাকা রেডিও দখলের খবর নিশ্চিত করা হয়। এর পরও গোপন স্থান থেকে শেখ মুজিবের স্বকণ্ঠে ঘোষণা শোনা যাচ্ছে এবং তিনি তাঁর অনুসারীদের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন জানিয়ে পত্রিকাটি লিখে: ‘But East Pakistani political leader Sheikh Mujibar Rahman went on the air on a clandestine radiobroadcast to urge his followers to continue their batle.’ কলকাতা থেকে ইউপিআই রেডিও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ঘোষণাটি শুনেছে বলে সংবাদে উল্লেখ করা হয়।
একইভাবে রেডিও ব্রডকাস্ট অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি উল্লেখযোগ্য পত্রিকা শিরোনাম করে : ‘East Pakistan Civil War Breaks out : Mujibur Declares East Independent.’ পূর্ব পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে এবং শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম অংশ থেকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেছেন জানিয়ে সংবাদে লেখা হয়: ‘Civil war broke out today in East Pakistan and East Pakistani leader Sheikh Mujibur Rahman declared his province’s independence from West.Pakistan’
অন্য একটি দৈনিক ‘East Pakistan Hit By Civil War : Rebel Sheikh Proclaims Area’s Independence From W. Pakistan.’ শিরোনামে প্রধান সংবাদ করে। খবরের সঙ্গে ব্যবহৃত বঙ্গবন্ধুর ছবির নিচে ক্যাপশনে জানানো হয়, শেখ মুজিবুর রহমান পশ্চিম পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর দেয়া সাক্ষাতকার থেকেও তাঁর স্বকণ্ঠ স্বাধীনতা ঘোষণার কথা জানা যায়। পাকিস্তানের কারাগার থেকে স্বাধীন দেশে ফেরার এক সপ্তাহর মধ্যে ১৯৭২ সালের ১৬ জানুয়ারি তিনজন আমেরিকান সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। আলোচনায় নানা বিষয় উঠে আসে। বিশেষ গুরুত্ব পায় স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গ। সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করে অত্যন্ত প্রভাবশালী একটি দৈনিক। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৫ মার্চ রাত ১০টার মধ্যে নিরীহ বাঙালীর ওপর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর আক্রমণের কথা জেনে যান মুজিব। এর প্রেক্ষিতে রাত সাড়ে ১০টায় তিনি এক গোপন স্থানে টেলিফোন করে তার স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড করান, যা পরে সিক্রেট ট্রান্সমিটারে সম্প্রচারিত হয়। তখন সাংবাদিকরা জানতে চান, বাঙালীর নেতা ওই ঘোষণায় কী বলেছিলেন? উত্তরে শেখ মুজিব যা বলেন তা ২৬ মার্চের পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।
পরবর্তী গবেষণা থেকে এ ঘোষণার পুরোটা পাওয়া যায়। যেখানে বঙ্গবন্ধু বলছিলেন, ‘আমি শেখ মুজিবুর রহমান পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন ঘোষণা করছি। পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে ৭ কোটি জনগণকেও আমি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজান্ত্রী বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করছি। আমার যাই হোক না কেন, তোমরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত কর এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাও।’
বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে গত প্রায় দশ বছর ধরে দেশ ও বিদেশে গবেষণা করছেন ইতিহাসবিদ ড. ফিরোজ মাহমুদ। তার গবেষণাও উপরে উল্লেখিত তথ্যগুলোকে সমর্থন করে। আরও স্পষ্ট করে। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, ২৫ মার্চ রাত থেকে শুরু করে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহর পর্যন্ত দ্রুত অবনতিশীল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে একাধিক রেডিওতে ঘোষণা দেন খে মুজিবুর রহমান। চমকপ্রদ গবেষণা তথ্য তুলে ধরে ফিরোজ মাহমুদ বলেন, ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান বেতারের ঢাকা কেন্দ্র পাকিস্তানীদের দখলে চলে গেলেও, বঙ্গবন্ধু গোপন তিনটি রেডিও ট্রান্সমিটার তিন জায়গায় প্রস্তুত রেখেছিলেন। পিলখানায় সিগন্যালের এক সুবেদারের কাছে তাঁর একটি প্রি-রেকর্ডেড ভাষণ ছিল, যেটির কোড ‘বলদা গার্ডেন’। ক্র্যাকডাউনের খবর জেনে সেটি প্রচারের লক্ষ্যে ওই সুবেদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি। পরে দ্বিতীয় ট্রান্সমিটারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন, সেখানে টেলিফোনের মাধ্যমে নতুন করে স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড করান বঙ্গবন্ধু। একটু পরেই তা প্রচার করা হয়। আমেরিকার তিন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার সময় এটির কথাই বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেন বলে জানান ফিরোজ মাহমুদ। তিনি বলেন, এ ঘোষণাটিও বঙ্গবন্ধুর স্বকণ্ঠে শোনা গেছে। সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা ঘোষণাটি ছিল এরকম: ‘দিস ইজ মে বি মাই লাস্ট মেসেজ, ফ্রম টুডে বাংলাদেশ ইজ ইন্ডিপেনডেন্ট...।’
বঙ্গবন্ধুর পার্সনাল এইড হাজী গোলাম মোরশেদের সাক্ষাতকারেও গোপন ট্রান্সমিটার ব্যবহার করে এই ঘোষণা দেয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। শারমিন আহমদের ‘তাজউদ্দীন আহমদ: নেতা ও পিতা’ শিরোনামে লেখা বইতে যুক্ত করা সাক্ষাতকারে ২৫ মার্চ রাতে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাসায় অবস্থান করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে গোলাম মোরশেদ বলেন, ‘আমি সোজা ওপরে উঠে গেলাম। ওপরে ওঠে দেখি বঙ্গবন্ধু পাইপ হাতে বসে আছেন। আমি ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘আমরা স্বাধীন হয়ে গেলাম। They are coming to arrest me. I have decided to stay.’ তখন রাত সাড়ে দশটার মতো বাজে বলে জানান গোলাম মোরশেদ। বাকিটুকু ব্যাখ্যা করে বর্তমান গবেষণা বলছে, টেলিফোনের সাহায্যে গোপন রেডিওতে স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড করানো এবং প্রচারিত হওয়ার কিছু সময় পর নেতার সামনে হাজির হয়েছিলেন গোলাম মোরশেদ।
এর পর তার সাক্ষাতকারে বলদা গার্ডেনের আপডেট পাওয়া যায়। সাক্ষাতকারে মোরশেদ বলেন, ‘রাত ১১টা বেজে গেল, ১২টা প্রায় বাজে বাজে, এমন সময় একটা টেলিফোন এলো। বলে, ‘আমি বলদা গার্ডেন থেকে বলছি। মেসেজ পাঠানো হয়ে গিয়েছে, মেশিন নিয়ে কী করব?’ আমি মুজিব ভাইয়ের কাছে দৌড়ে গেলাম, বললাম যে, ফোন এসেছেÑ ‘মেসেজ পাঠানো হয়ে গিয়েছে। মেশিন নিয়ে আমি কী করব?’ জানতে চাইছে একজন। উনি (বঙ্গবন্ধু) বললেন, ‘মেশিনটা ভেঙ্গে ফেলে পালিয়ে যেতে বল।’
এই রেডিও ঘোষণাটির কথা জানা যায় বঙ্গবন্ধুর জামাতা ও শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার বই থেকেও। বইতে তিনি লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু আগেই টেলিফোনে স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড করিয়েছিলেন এবং তা প্রচারও হয়েছে।
এ সংক্রান্ত গবেষণা বলছে, বঙ্গবন্ধুর শেষ ঘোষণাটি রেডিওতে প্রচার হয় রাত সাড়ে ১২টার দিকে। যেখানে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ ঘোষণা করে বলছেন, ‘পাকিস্তানের সৈন্যরা মধ্যরাতে ঢাকায় অবস্থিত পিলখানার ঘাঁটি পিলখানা এবং রাজারবাগে আক্রমণ করেছে এবং বহু নিরস্ত্র লোককে হত্যা করেছে। ইপিআর ও পুলিশের সঙ্গে তাদের তুমুল লড়াই চলছে। জনগণ শত্রুদের সঙ্গে স্বাধীনতার জন্য বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। আমি বাংলাদেশের প্রতি স্তরের নাগরিককে আহ্বান করছি শত্রুদের যে কোন মূল্যে প্রতিহত করতে। আল্লাহ আপনাদের সহায়ক হোন।’ শুরুর দিকে নাম উল্লেখ করা পত্রিকাগুলো এই রেডিও ঘোষণা মনিটর করেই সংবাদ প্রকাশ করে।
ড. ফিরোজ মাহমুদ বলেন, সময়ের পার্থক্যের কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার সংবাদ প্রকাশে এগিয়ে ছিল উত্তর আমেরিকার পত্রিকাগুলো। এসব পত্রিকায় গুরুত্বের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর শেষ ঘোষণাটির খবর ছাপা হয়। বঙ্গবন্ধু যদি ২৫ মার্চ রাত ১২টা ১৫ মিনিটে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে থাকেন তাহলে নিউইয়র্কে তখন ২৫ মার্চ দুপুর ১২টা ১৫ মিনিট। শিকাগোতে ২৫ মার্চ ১১টা ১৫ মিনিট। ক্যালিফোর্নিয়ায় ২৫ মার্চ ৯টা ১৫ মিনিট। ফলে ওইসব অঞ্চলের পত্রিকাগুলো সংবাদ তৈরি ও ছাপবার জন্য পর্যাপ্ত সময় পেয়েছিল। এ কারণে ২৬ মার্চ সকালে উত্তর আমেরিকার শত শত পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার খবর বের হয়। অবশিষ্ট চারটি মহাদেশে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার খবর ছাপা হয় ২৭ তারিখ।
কিন্তু ভারতসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোতে ২৬ মার্চের কাগজ ২৫ তারিখ রাত ১০টার মধ্যে ছাপা হয়ে যায়। এ কারণে পরের দিন ভারতবর্ষের অনেক পত্রিকা ঘেটে গণহত্যা কিংবা স্বাধীনতা ঘোষণার খবর পাওয়া যায়নি। একই কারণে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশ থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার খবর দিতে পারেনি। বরং কোন কোন পত্রিকায় লেখা হয়, ইয়াহিয়া খান ঢাকায় অবস্থান করছেন। তার সঙ্গে শেখ মুজিবের আলোচনা অব্যাহত আছে। এ কারণে বাংলাদেশ ভারতসহ এশিয়া মহাদেশের পাঠক বঙ্গবন্ধুর স্বকণ্ঠ ঘোষণা সম্পর্কে পরদিন কিছু জানতে পারেননি।
অহর্নিশ গবেষণা থেকে জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার অন্তত পক্ষে ১৮ ঘণ্টা পর চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারের জন্ম হয়। এত কিছুর পরও স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে প্রচুর ভুল চর্চা হচ্ছে বলে মনে করেন ড. ফিরোজ মাহমুদ। দুঃখ করে তিনি বলেন, এমনকি আওয়ামী লীগের অনেক লোকজনও না জেনে অহেতুক বক্তৃতা করে ফেলেন। এর ফলে জটিলতা আরও বাড়ে। এতকাল ধরে চলা সব বিভ্রান্তি দূর করতে বিষয়ের ওপর ইংরেজীতে বিশালাকার পুস্তক রচনার কাজ করছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী সামনে রেখে বিষয়টি নিয়ে সরকারীভাবেও কিছু জরুরী কাজ করা যেতে পারে বলে মনে করেন নিভৃতচারী ইতিহাসবিদ।
প্রকাশঃ দৈনিক জনকণ্ঠ