2789
Published on ফেব্রুয়ারি 27, 2019প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, আত্মসমর্পণকারী মাদক ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে।
তিনি বলেন, অপরাধবোধের উপলব্ধি থেকেই আত্মসচেতন হয়ে মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ীরা আত্মসমর্পণ করছে। তারা যাতে নতুন কিছু করতে পারে, সে জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে সরকারি দলের মাহফুজুর রহমানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এদিন প্রশ্নোত্তরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অপরাধবোধের উপলব্ধি থেকেই আত্মসচেতন হয়ে মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ীরা আত্মসমর্পণ করছে। আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে যারা মাদকাসক্ত তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরিবারকে সহায়তা করা হচ্ছে। আর যারা মাদক ব্যবসায় যুক্ত তারা এই ব্যবসা ছেড়ে যাতে নতুন কিছু করতে পারে, সে জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। আর্থিক সহায়তা পেয়ে তারা যাতে অন্য নতুন ব্যবসা করে ভালোভাবে চলতে পারে, সেই ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা নিচ্ছি।’
জঙ্গি দমনের মতো মাদকের বিরুদ্ধেও সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনসচেতনতামূলক কর্মসূচির কারণে এখন অনেকের মধ্যে উপলব্ধি এসেছে যে মাদক বিক্রি বা পরিবহন অপরাধ। এ কারণে তারা অপরাধবোধ থেকে আত্মসমর্পণ করছে।’
এর আগে মাহফুজুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা জানান, মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও দমন অভিযানে ২০১৮ সালে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এক লাখ ১৯ হাজার ৮৭৮টি মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় এক লাখ ৬১ লাখ ৩২৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০০৯ থেকে ২০১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাদকবিরোধী প্রচারাভিযানে ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার ৭৯৬টি লিফলেট, এক লাখ ৮৩ হাজার ১৪৮টি স্টিকার, ১০ লাখ ১৭ হাজার ১৭১টি পোস্টার, এক লাখ দুই হাজার ৮০২টি বুলেটিন প্রকাশ ও ৬৪ হাজার ৪৩৬টি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যা ৬৪ থেকে বৃদ্ধি করে ২৭৬টিতে উন্নীত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্রকে ৫০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার কার্র্যক্রমের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই ১শ’ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই মহিলা মাদকাসক্তদের জন্য ওই কেন্দ্রে ২৪ শয্যার একটি ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনায় তিনটি বিভাগীয় শহরে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের শয্যা সংখ্যা ২শ’টিতে উন্নীত করার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই প্রতিটিতে ২৫ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে।
সংসদ নেতা বলেন, দেশের ৬৪টি জেলায় অবস্থিত সকল যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, জেলা কার্যালয় এবং উপজেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত সকল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে যুব প্রশিক্ষণার্থীদেরকে সচেতন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ক্রীড়া চর্চা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুব সমাজের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে। যুব সমাজকে নেশা ও মাদকাসক্তি থেকে মুক্ত রেখে সুস্থ সবল যুব সমাজ গড়ে তুলতে ক্রীড়া বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই সরকার এই উদ্দেশ্যে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও ক্রীড়া পরিদপ্তরের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। মাদক সংশ্লিষ্ট মামলাসমূহ দ্রুত এবং যথাযথভাবে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। নিয়মিতভাবে যানবাহন এবং মাদক স্পটে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
সরকার প্রধান বলেন, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে মাদক বিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সমন্বয়ে সভা, সমাবেশ, র্যালি, প্রচারপত্র বিতরণের মাধমে মাদক বিরোধী জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, কমিউনিটি পুলিশিং,কল্যাণ সভা এবং ওপেন হাউজ ডে’র মাধমে মাদক বিরোধী প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিয়মিত মামলার পাশাপাশি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান পরিচলনা করা হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদকের কুফল সম্পর্কে গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রাখা, কক্সবাজার জেলার টেকনাফে মাদক বিরোধী বিশেষ জোন স্থাপনের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে, চারটি বিভাগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হবে। ডাক্তার ও নার্সদের প্রশিক্ষণ সুবিধাসহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ঢাকা কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করা হবে। মাদক নির্মূলে বিশেষায়িত জনবল সৃষ্টির লক্ষ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি প্রশিক্ষণ একাডেমী নির্মাণ করা হবে। সরকারি পর্যায়ে মাদকাসক্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৭টি বিভাগীয় শহরে ২শ’ শয্যার একটি করে নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুর বিভাগে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তিনটি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করা হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জেলা পর্যায়ে অফিস নির্মাণের অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে ৭টি জেলায় জেলা অফিস নির্মাণ করা হবে। বৃহত্তর জেলা শহর মাদক প্রবণ জেলাগুলোতে ১শ’ শয্যা বিশিষ্ট মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। অবশিষ্ট জেলাসমূহে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন করা হবে এবং বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রসমূহেও সরকারি অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।