বাংলাদেশের ডানপন্থি রাজনীতিঃ সালাম সালেহ উদদীন

3436

Published on ফেব্রুয়ারি 4, 2019
  • Details Image

একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের পর একটি বিষয় জোরালোভাবে উঠে এসেছে, তা হলো বাংলাদেশে ডানপন্থী রাজনীতির ভবিষ্যৎ কী? ডানপন্থি রাজনীতি বলে বাংলাদেশে কিছু থাকবে কিনা? ডানপন্থিরা এখন রাজনৈতিকভাবে বিপযর্স্ত, হতাশ ও দিশাহারা। তারা দীঘির্দন থেকেই অস্তিত্ব সঙ্কটে ভুগছে। ডানপন্থি রাজনীতির এক সময়ের নিয়ন্ত্রক বিএনপির অবস্থা বড়ই করুণ। তারা নিজেদের কারণেই মাথা তুলে দঁাড়ানোর সুযোগ হারিয়েছে। এই দলটির দুবর্ল ও অসংগঠিত কাযর্ক্রমের জন্য তারা নিজেরাই দায়ী। অন্যদিকে উগ্র-ডানপন্থিদের সাথে তাদের দীঘির্দনের সখ্যভাবও দেশের সচেতন ও প্রগতিশীল মানুষ ভালো চোখে দেখছে না। এবারের নিবার্চনেও তার প্রমাণ পাওয়া গেল। দেশের মানুষ উগ্র-ডানপন্থিদের চরমভাবে প্রত্যাখান করেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির আবিভার্ব সম্পকের্ রাজনীতি-সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন। বিভিন্ন দল থেকে আশা নেতাকমীর্রাই মূলত বিএনপিতে যোগ দেন, যেমন দিয়েছেন এরশাদের জাতীয় পাটিের্ত। জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে বিএনপি দল হিসেবে চাঙা থাকলেও ২০১৪ সালের পর থেকে বিএনপি তার জনপ্রিয়তা ও অস্তিত্ব হারাতে শুরু করে তাদের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে। ওই সময়ে তারা জাতীয় সংসদ নিবার্চনে অংশ না নিয়ে চরম ভুল করেছে। জাতীয় সংসদে তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব ছিল না। তারা সংসদে কোনো বক্তব্য রাখার সুযোগ পায়নি। ওই সময়ে তারা অনায়াসে প্রধান বিরোধী দলের ভ‚মিকা পালন করতে পারত। সেই সুযোগ তারা স্বেচ্ছায় হারিয়েছে। সংসদের ভেতরে তো নয়ই, রাজপথেও তারা আন্দোলন করতে পারেনি। তাদের আরেকটি ভুল হচ্ছে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নিবার্চনে অংশগ্রহণ করেও বিজয়ী প্রাথীর্রা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নেয়া। এটা কোনো রাজনৈতিক দূরদশির্তার পরিচয় বহন করে না। সংসদে প্রাপ্ত আসন সংখ্যা যত কমই হোক না কেন, তাদের উচিত সংসদে যোগদান করা, যদি তাদের সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা থাকে, শ্রদ্ধা থাকে জনগণের প্রতি।

বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নিবার্চনে ভরাডুবি হয়েছে এটার জন্য দলটির নেতারা দায়ী। আসলে তাদের এরকম ভরাডুবি হবে, তারা নিজেরা বুঝতে না পারলেও জনগণ কিন্তু আগেই অনুমান করতে পেরেছিল। বিএনপির নেতৃত্বের শূন্যতা ও জনগ্রহণযোগ্যহীনতাই ফল বিপযের্য়র কারণ। তারা নিবার্চনে আসবেন, নিবার্চন প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ ও গণরায় প্রত্যাখ্যান করবেন, তাহলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেন কোন পথে? আবার যদি রাজপথে আন্দোলন করেন, হরতাল ডাকেন। মনে রাখতে হবে জনগণ এই অনাকাক্সিক্ষত কাযর্ক্রমকে আর সমথর্ন দেবে না। জনগণ চায় দেশের সুখ, শান্তি, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি। তারা বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাস দেখতে চায় না। তারা আর দেখতে চায় না জঙ্গি হামলা।

বিএনপির রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে যে মহাবিপযর্য় হয়েছে, তা রোধ করা আর সম্ভব নয়। বিএনপির পরিণতি কী হবে তা একটু ভেবে দেখা দরকার। দেশপ্রেমিক জনগণ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি শেখ হাসিনার ওপরে আস্থা রেখে বিজয়ী করেছে। সুতরাং তিনি জনগণের সেই প্রত্যাশা পূরণে সফলকাম হবেন।

ঐক্যফ্রন্ট নামে যে রাজনৈতিক জোটটি গঠিত হয়েছিল তা শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য, একে কোনো আদশির্ক রাজনৈতিক প্লাটফরম বলা যাবে না। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এ ধরনের জোটের গ্রহণযোগ্যতা নেই। এই জোট আবার আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। তারা কাদের নিয়ে আন্দোলন করবে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। তারা নিবার্চনের আগেও আন্দোলনের হুমকি দিয়েছিল। অবশেষে নিবার্চনে আসতে বাধ্য হয়েছে। এর আগে সরকারবিরোধী ও নিবার্চন বাতিল এবং প্রতিরোধের আন্দোলন করে কিন্তু মহাজোট সরকারের কোনো ক্ষতি হয়নি। তারা সব ধরনের বাধা উপেক্ষা করে ঠিকই সরকার গঠন করেছে। ক্ষতি হয়েছে দেশ ও জনগণের। এক বছরে পাঁচ শতাধিক মানুষ মারা গেছে। জাতীয় সম্পদের অশেষ ক্ষতি হয়েছে এবং হাজার হাজার বৃক্ষ নিধনের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি করা হয়েছে। এর ফলে জনমনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। আর বিনিময়ে ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়েছে।

মনে রাখতে হবে, ক্ষমতায় যাওয়ার মূল শক্তি ও সুযোগ হচ্ছে জাতীয় নিবার্চন। এই নিবার্চনের মাধ্যমেই ক্ষমতায় আসতে হবে, আন্দোলন করে নয়। এখানে বলা সঙ্গত, শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় গুণ তিনি প্রতিহিংসাপরায়ণ নন। যে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার তাকে নানাভাবে নিযার্তন করেছেন, হয়রানি করেছেন, তাকেই তিনি দিয়েছিলেন উপদেষ্টার মযার্দা। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে যেভাবে তাকে একের পর এক হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে, তারপরেও তাদের সঙ্গে সংলাপে বসেছেন। শেখ হাসিনা আজ শুধু আওয়ামী লীগেরই নেতা নন, তিনি আজ দল-মতের ঊধ্বের্ উঠে স্টেটসম্যান বা রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছেন। ইতিহাস যদি বাংলাদেশের রাজনীতিকদের নাম বুকে ধারণ করতে চায়, তাহলে শেখ হাসিনার নামটি স্বণার্ক্ষরেই লেখা হয়ে থাকবে। তার নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত কতর্ব্য সম্পন্ন হতে চলেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কাযর্কর করার মধ্য দিয়ে। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের রায় কাযর্কর হয়েছে। আজ জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কমর্যজ্ঞ বাঙালি জাতির ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল নতুন অধ্যায় হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে।

শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের জনগণের আস্থার প্রতীক। স্বাধীনতার ৪৭ বছরে এসে বাংলাদেশের উন্নয়ন অভ‚তপূবর্। আর এই উন্নয়নের অন্যতম কারিগর মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষকে তিনি অনেক কিছু দিয়েছেনÑ সীমাহীন প্রতিক‚লতার মুখে পদ্মা সেতু নিমার্ণ কাজ শুরু যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী উন্নয়ন ও অথৈর্নতিক অগ্রগতি তারই সুযোগ্য নেতৃত্বের ফসল। উন্নয়নশীল বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ধারায় পরিচালনার কৃতিত্ব শেখ হাসিনারই। এই সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকার কারণে দেশ ও জনগণের মঙ্গল হবে এটা বলা বা ভাবা যৌক্তিক এই কারণে যে, ক্ষমতার পালাবদল হলে একদিকে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ক্ষুণœ হতো, অন্যদিকে যারা ক্ষমতায় আসতো তারা বাংলাদেশকে স্বগর্ বানাতে পারত না, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। হাসিনা সরকারের আমলে আমরা স্বাধীনতার স্বপ্নগুলো প্রতিফলিত করতে পারছি। আমরা চেয়েছিলাম অথৈর্নতিক মুক্তি, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ। সেই পথে আমরা এগিয়ে চলেছি। এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, বাংলাদেশের উন্নয়ন কখনোই আর ডানপন্থিদের দিয়ে হবে না। তারা জনগণের কল্যাণ চান না, চান ক্ষমতা। অথচ তারা নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখেন না, করেন না আত্মমূল্যায়নও। বিএনপির চেয়ারপারসন দুনীির্তর মামলায় জেলে। তাদের আরেক নেতা তারেক রহমান একাধিক দুনীির্তর মামলায় দÐপ্রাপ্ত। বিএনপির হাল ধরার মতো নেতা নেই। এই অবস্থায় বিএনপির ঘুরে দঁাড়ানোর কোনোই সম্ভাবনা নেই, অন্তত আগামী ৫ বছরে। বাংলাদেশে ডানপন্থিদের দাপটের সঙ্গে রাজনীতি করার দিন শেষ হয়ে আসছে। ডানপন্থিরা এ দেশের রাজনীতি থেকে একসময়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, এ কথা বলা নিশ্চয়ই অসঙ্গত হবে না।

আশার কথা, স্বাধীনতার ৪৮ বছরে আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৬ গুণ। ১৯৭১ সালের পর এ দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ১০০ ডলারের কাছাকাছি। এখন তা ১৬০০ ডলার ছাড়িয়েছে। কেবল মাথাপিছু আয় বেড়েছে তা নয়, অথৈর্নতিক ও সামাজিক সূচকে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিক হয়েছে। বাংলাদেশ অজর্ন করেছে বিস্ময়কর সাফল্য। এই সাফল্যের কৃতিত্ব কোনো ডানপন্থি রাজনৈতিক দলের নয়, শেখ হাসিনা সরকারের। এই সরকার বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছে এক অনন্য উচ্চতায়। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল, এশিয়ার বাঘ। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে অচিরেই বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছে যাবে। আমরা আশাবাদী।

লেখক: কবি, কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও কলাম লেখক

সৌজন্যেঃ দৈনিক যায়যায়দিন

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত