9571
Published on নভেম্বর 19, 2018জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন ‘বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো’। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ‘একটি স্বাধীন, সার্বভৌম সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার।’ বাংলার মানুষের সাংবিধানিক, রাষ্ট্রীয় এবং রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে প্রাধান্য দিয়েছেন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য। বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি গ্রহণ করেছিলেন রাজনৈতিক কর্মসূচী এবং রাষ্ট্রীয় নীতিমালা। বঙ্গবন্ধু ভেবেছিলেন একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়তে হলে চাই একটি স্বাস্থ্যবান জাতি। এজন্য তিনি স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে যেমন গুরুত্ব দিয়েছেন তেমনি গ্রহণ করেছেন সময়োপযোগী পদক্ষেপ। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের সকল ক্ষেত্রে একটি শক্ত নীতিমালা, পরিকল্পনা, অবকাঠামো রেখে গেছেন যার ওপরে গড়ে উঠেছে আজকের বিশ্বনন্দিত অনেক কার্যক্রম। বঙ্গবন্ধুর তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসা সেবার জন্য থানা স্বাস্থ্য প্রকল্প আজও বিশ্বে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার এক সমাদৃত মডেল। বঙ্গবন্ধুর পদক্ষেপের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য রয়েছে-
১. আইপিজিএমআর (পিজি হাসপাতাল) কে শাহবাগে পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল হিসেবে স্থাপন, ২. বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) প্রতিষ্ঠা, ৩. বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান এ্যান্ড সার্জন্স (বিসিপিএস) প্রতিষ্ঠা, ৪. স্যার সলিমুল্লা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন, ৫. ১৯৭৩ সালে প্রণীত প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনাকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান, ৬. চিকিৎসকদের সরকারী চাকরিতে ১ম শ্রেণীর মর্যাদা প্রদান, ৭. নার্সিং সেবা এবং টেকনোলজির উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা ও নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ, ৮. উন্নয়শীল দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূলনীতি হলো- Prevention is better than cure এ নীতিকে বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি স্থাপন করেছিলেন নিপসম- ১৯৭৮-সালে।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর সুদীর্ঘ ২১ বছর চলেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীত ধারায় পাকিস্তানী ভাবধারা অনুসরণ করে। যে কারণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সকল উন্নয়ন ব্যাহত হয়, বঞ্চিত হয় সাধারণ মানুষ। দেশে বিএমএর নেতৃত্বে চিকিৎসকদের দীর্ঘ তুমুল আন্দোলন হয়েছে, ডাঃ মিলন জীবন দিয়েছে গণমুখী স্বাস্থ্যব্যবস্থা বাস্তবায়ন এবং স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের জন্য। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণ করার পর চিকিৎসকদের কোন আন্দোলন করতে হয়নি, বিষয়গুলো উনার নজরে আনলেই বাস্তবায়ন হয়েছে। দ্রুতই চিকিৎসকদের সকল দাবি পূরণ হয়েছে। বাস্তবায়ন হচ্ছে গণমুখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সকল কার্যক্রম। ২১ বছর লড়াই সংগ্রাম নির্যাতনের পর ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন জননেত্রী শেখ হাসিনা বাবার আজীবন লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ার কর্মসূচী বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে সরকার পরিচালনায়ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অগ্রগণ্য থাকে। দেশের মানুষ, চিকিৎসক, সমাজসহ সকল শ্রেণীপেশার প্রস্তাব-পরামর্শ ও উদ্যোগ গ্রহণ করেন দেশে একটি গণমুখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কার্যকর বাস্তবায়ন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে অধ্যাবধি বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও মেডিক্যাল শিক্ষার সকল ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় আজকে বিশ্বের দরবারে সমাদৃত। শেখ হাসিনার তিন দফায় দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশের মেডিক্যাল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হচ্ছে-
১. কমিউনিটি ক্লিনিক : প্রতি ৬০০০ গ্রামীণ জনগণের জন্য একটি করে ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় ১৯৯৬ সালে এবং ১৯৯৮-২০০১ এর মধ্যে ১০,০০০ এর অধিক চালু করা হয়েছিল যার সফল জনগণ পেতে শুরু করেছিল। কিন্তু ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর কেবল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে জনগণের অতি প্রয়োজনীয় এ সুবিধা বন্ধ করে দেয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক পুনরায় চালু করেন। বর্তমানে ১৩ হাজার ৭০০টি ক্লিনিক চালু আছে। যেখান থেকে ৩০ রকমের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান, স্বাভাবিক প্রসব ব্যবস্থা, টীকাদান কর্মসূচীসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। গ্রামাঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিক এখন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একটি অতি জনপ্রিয় স্বাস্থ্য পরিচর্যা।
২. মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় : দেশের চিকিৎসকদের তিন দশকের দাবি ছিল মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের। এর আগে অনেক সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও বাস্তবায়ন করেনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা ১৯৯৬ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ১৯৯৭ সালের ৩১ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় স্থাপনের সরকারী আদেশ প্রদান করেন যার কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল। এ বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ মেডিক্যাল শিক্ষা, সেবা এবং গবেষণায় বিশ্ব সেরা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এবার ক্ষমতায় এসে আরও তিনটি মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন করেছেন চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং সিলেটে।
৩. জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি : ১৯৯৬ সালের আগে এদেশে কোন সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্যনীতি ছিল না। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির দাবিতে অনেক আন্দোলন হয়েছে, যড়যন্ত্র হয়েছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশবাসীর আকাক্সক্ষা পূরণ করে ১৯৯৬-এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সর্বদলীয় কমিটি এবং সাধারণ মানুষের মতামতের ভিত্তিতে সর্বজন গ্রহণযোগ্য জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ২০০০ প্রণীত হয়। এ স্বাস্থ্যনীতি ২০১১ সালে আবার যুগোপযোগী করা হয়।
৪. মেডিক্যাল শিক্ষা : ২০১০-২০১৮ পর্যন্ত নতুন ২৪টি সরকারী মেডিক্যাল কলেজ (এর মধ্যে ৫টি সামরিক বাহিনীর অধীনে), ৬টি সরকারী ডেন্টাল কলেজ শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। ৩০টি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ এবং ১৪টি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নতুন ১৬টি বেসরকারী হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল এবং ৪টি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
৫. জাতীয় ওষুধ নীতি : ওষুধ শিল্প এখন বাংলাদেশের গৌরবের শিল্প। দেশের ৯৭% চাহিদা পূরণ করে ১০১টি দেশে রফতানি করছে। ওষুধের মান এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জাতীয় ওষুধ নীতি যুগোপযোগী করা হয়েছে।
৬. অটিজম ও স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যা : এ ধরনের রোগে আক্রান্ত শিশু এবং শিশুর অভিভাকরা এক অসহায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদের বিশেষ উদ্যোগে দেশে অটিজম বিষয়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে উঠে এবং এ শিশুদের পুনর্বাসনের নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এখন এ শিশুরা আর অবহেলিত নয় এবং এদের অভিভাবকরা অসহায় নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট ফর পেডিয়াট্রিক নিউরো-ডিজঅর্ডার এ্যান্ড অটিজম (ইপনা) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ২২টি সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে শিশু বিকাশ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
৭. ক্লিনিক্যাল সেবা
ক. ১৯৯৬-২০০১ সালে
১. শেরে-বাংলানগর ৪০০ শয্যার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ৪০০ শয্যার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, কিডনি হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, মানসিক হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, ঢাকার আজিমপুরে ১৭৫ শয্যার মা ও শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টউট, ঢাকার মাতুয়াইলে ২০০ শয্যার শিশু হাসপাতাল ও মাতৃ-স্বাস্থ্য ইনস্টটিউট, ৬০০ শয্যার ডিএমসিএইচ-২ ভবন নির্মাণের ব্যবস্থ্যা যা এ সময়ে বাস্তবায়ন হয়েছে, ২০ তলা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা ভবন নির্মাণের কাজে হাত দেয়া যা বর্তমানে বাস্তবায়িত হয়েছে, ২. ঢাকার মিরপুরে ২০০ শয্যা বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ ঢাকা ডেন্টাল কলেজের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
খ. ২০০৯ থেকে অধ্যাবধি
১. এ সময়ে ১৩টি নতুন হাসপাতাল এবং ১০ হাজার ৬৬২টি নতুন হাসপাতাল শয্যা যুক্ত হয়েছে। কুর্মিটোলা ও মুগদার ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, ৩০০ শয্যার ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স, তেজগাঁও- এ ৩০০ শয্যার নাক-কান-গলা ইনস্টটিউট, গোপালগঞ্জে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, শেখ ফজিলাতুন্নেছা চক্ষু হাসপাতাল, ২. শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট : প্রধানমন্ত্রী গত ২৪ অক্টোবর এর কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন। ৫০০ বেডের এ হাসপাতালটি বিশ্বের অন্যতম বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল, ৩. বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ে কোরিয়ান সরকারের সহযোগিতায় ১০০০ শয্যার সুপার স্পেশাইসড হাসাপাতাল নির্মাণাধীন।
৮. চিকিৎসক নিয়োগ ও পদোন্নতি :
ক. বিসিএসের মাধ্যমে ৯ হাজার ৯৪৪ জন চিকিৎসকসহ এই সরকারের আমলে ১৪ হাজার ৭৭ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া চলছে যাতে তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসক সঙ্কট না থাকে, খ. পিএসসির দীর্ঘসূত্রিতার পরিবর্তে মেডিক্যাল শিক্ষকদের পদোন্নতি ডিপিসি এবং এসএসবির মাধ্যমে নেয়া- এ সরকারের জন্য একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ছিল। ইতোমধ্যে অধ্যাপক, সহযোগী অধাাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং কনসালট্যান্ট হিসেবে ৫ হাজার ৯০০ চিকিৎসককে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে, গ. চিকিৎসকদের প্রশাসনিক পদে ২২০০ জনকে এবং স্কেলের মাধ্যমে ৮০০০ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।
৯. নার্সিং পেশা :
ক. নার্সদের মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩য় শ্রেণী থেকে ২য় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে, খ. ১৫ হাজার নতুন নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে, গ. নার্সিং জনশক্তি বৃদ্ধির জন্য ১২টি নতুন নার্সিং ইনস্টটিউটে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে। ৭টি ইনস্টিটিউটকে কলেজে উন্নীত করা হয়েছে। ঘ. নার্সদের উচ্চ শিক্ষার জন্য মুগদায় কোরিয়ান সরকারের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে National Institute of Advanced Nursing education and Research (NIANER) যেখানে ইতোমধ্যে মাস্টার্স কোর্স চালু হয়েছে, ঙ. নতুন করে জনবল কাঠামোসহ নার্সিং ও মিডওয়াইকারী অধিদফতর সৃষ্টি করা হয়েছে, চ. বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইকারী কাউন্সিল আইন, ২০১৬ প্রণয়ন করা হয়েছে।
১০. ডিজিটাল স্বাস্থ্য :
ক. ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প ২০২১-এর আলোকে গ্রাম পর্যায়ের মাঠকর্মী থেকে শুরু করে কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং উপজেলা, জেলা এবং আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের সকল হাসপাতালে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়েছে, খ. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর কাগজনির্ভর তথ্য ব্যবস্থাপনা বাদ দিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হয়েছে, গ. ই-টেন্ডারিং চালু হয়েছে, ঘ. টেলিমেডিসিন সেবাকেন্দ্র ৯৫টিতে উন্নীত হয়েছে, ঙ. স্বাস্থ্য ও মেডিক্যাল শিক্ষাব্যবস্থার সকল পর্যায়ে অটোমেশনসহ ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হয়েছে।
১১. বৃহৎ কর্মসূচী গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন :
ক. ১৯৯৮-২০০৩ সালের জন্য পঞ্চম স্বাস্থ্য ও জন সংখ্যা পর্যায়ে পরিকল্পনা (এইচপিএসপি) গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়, খ. ২০০৯- অদ্যাবধি : ৩য় স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচী ২০১১ - ২০১৬ প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করা হয়েছে, গ. ‘৪র্থ স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচী ২০১৬-২০২১’ প্রণয়ন করে বাস্তবায়নাধীন আছে।
১২. হাসপাতাল শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি :
৩৩২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা হতে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হয়েছে। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা হাসপাতাল এখন ৪৪১টি, মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা হাসপাতালগুলোতে প্রায় ২ হাজার ৫০০ শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
১৩. অন্যান্য প্রতিষ্ঠান :
ক. ১৭১টি মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল ও ৫৪টি হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, খ. সাভার ন্যাশনাল ইনস্টটিউট অফ হেল্থ ম্যানেজমেন্ট ভবন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
১৪. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ :
বর্তমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১.৩৭ যা ২০০৮ সালে ছিল ১.৪১। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মাধ্যমে যাবতীয় কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে।
১৫. মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি : ৭২.৮ বছর।
১৬. জরুরী স্বাস্থ্যসেবা ও এ্যাম্বুলেন্স : বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় ৪০০টি এ্যাম্বুলেন্স প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে দুর্গম হাওর অঞ্চলের জন্য ১০টি নৌ এ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করা হয়েছে।
১৭. স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচী : দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী পরিবারসমূহকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে টাঙ্গাইল জেলার তিনটি উপজেলায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা শীর্ষক পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের জন্য কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট সেক্রেটারিয়েট স্থাপন ও কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
১৮. নীতি কাঠামো ও আইন-
ক. বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১১, খ) ধূমপান নিবারণে ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১২, গ) শতাব্দী পুরাতন আমানবিক কুষ্ঠ আইন (লেপ্রসি এ্যাক্ট) ১৮৯৮ বাতিল, ঘ) রোগী ও চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বেসরকারী হাসপতাল ও ক্লিনিক আইন, ঙ) মানবদেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গ সংযোজন (সংশোধন) আইন ২০১৭, চ) বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস এবং সার্জনস (বিসিপিএস) আইন ২০১৭।
১৯) বেসরকারী খাত :
ক. দেশের চিকিৎসা জনবলের অভাব পূরণে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, নার্সিং ইনস্টিটিউট, হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউট, মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল ও মিডওয়াইকারী ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেয়া হয়েছে, খ. বেসরকারী পর্যায়ে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে, গ. সরকারী-বেসরকারী যৌথ অংশীদারিত্ব প্রকল্প চালু হয়েছে।
২০) আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- ক. জাতিসংঘের ২০১০ সালে এমডিজি -৪ এবং ২০১১ সালে ‘ডিজিটাল হেলথ ফর ডিজিটাল ডেভেলপমন্টে’ শীর্ষক সাউথ সাউথ পুরস্কার গ্রহণ করেন, খ. টিকাদান কর্মসূচী সাফল্যের জন্য ২ বার গ্যাভি এওয়ার্ড গ্রহণ, গ. সায়মা ওয়াজেদকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক কার্যালয় অটিজম বিষয়ে অবদানের জন্য এক্সলেন্স ইন পাবলিক হেলথ পুরস্কার প্রদান করে।
এ প্রবন্ধে দেশের মেডিক্যাল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কিছু মৌলিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া মেডিক্যাল শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সকল ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা- বাজেটের স্বল্পতা, দক্ষ মানবসম্পদের অভাব, ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। এরপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি নেতৃত্বের জন্য বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও মেডিক্যাল শিক্ষার অনেক সূচকই ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। এ উন্নয়নের ধারা সৃষ্টি হয়েছে শেখ হাসিনার সুপরিকল্পিত নেতৃত্বের জন্য। এ ধারা দেশের মানুষের প্রয়োজনে অব্যাহত রাখতে হলে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। দেশের মানুষ আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা এবং তাঁর দলকে জয়যুক্ত করে এ উন্নয়ন যাত্রা অব্যাহত রাখবে- এটাই আমাদের বিশ্বাস।
লেখক : সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
সৌজন্যেঃ দৈনিক জনকন্ঠ