4698
Published on অক্টোবর 31, 2018প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল সরকারি হাসপাতালের যথাযথ রক্ষনাবেক্ষণের পাশাপাশি আগত রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণকে সেবা দেয়াটা আপনাদের দায়িত্ব। পাশাপাশি এগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কারণ, এগুলোর নির্মাণে সরকারকে অনেক কষ্ট করে বাজেট বরাদ্দ করতে হয়েছে।’
‘স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। কাজেই আমরা আশা করবো আপনারা চিকিৎসা সেবাটাকে আপনাদের কেবল পেশা হিসেবে নয় মহান দায়িত্ব হিসবে গ্রহণ করবেন,’যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকালে রাজধানীর মহাখালীস্থ বক্ষব্যাধি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ভবন উদ্বোধন এবং আরো কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনকালে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে এবং ইনশাল্লাহ জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো।’
জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের অংশ বিশেষ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালিকে আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবেনা এবং তাঁদের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনিও খেলতে পারবেনা।’
অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী- ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন এন্ড রেফারেল সেন্টার এ্যাট শের-ই- বাংলা নগর এর উদ্বোধন এবং বিএমআরসি ভবন মহাখালী, ঢাকা’র উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ, শের-ই- বাংলা নগর এর উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দি হাসাপাতাল শের-ই- বাংলা নগর-এর উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ, কিডনী ডিজিজেজ এন্ড ইউরোলজি হাসপাতাল শের-ই- বাংলা নগরের সম্প্রসারণ কাজ, ৫শ’ বেড হাসপাতাল মুগদা’র সার্ভিস ব্লকের সম্প্রসারণ, নার্সিং এন্ড মিডওয়াফারি ভবন মহাখালী, অ্যাজমা সেন্টার মহাথালী’র সম্প্রসারণ এবং কনষ্ট্রাকশন অব হেলথ ম্যানেজমমেন্ট, সাভার-এর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন।
যেসব প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন হয়েছে সেগুলোর নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে গেছে এবং এগুলোর কাজ সম্পন্ন হলে আমাদের স্বাস্থ্যসেবার ভিত্তিটা আরো মজবুত হবে, উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী তিনি বলেন, ‘আমি একটা অনুরোধ করবো এই ইনস্টিটিউট এবং হাসপাতাল-যে প্রতিষ্ঠানগুলিই আমরা তৈরী করি না কেন, সেই প্রতিষ্ঠানগুলো যেন সুন্দরভাবে চলে, ভালো ভাবে চলে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘এখানে মানুষ যাতে সেবা পায়। মানুষকে সেবা দেওয়াটাই হচ্ছে সবথেকে বড় কাজ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সুন্দরভাবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং যুগোপযোগী করা এবং সুন্দরভাবে যেন এগুলো পরিচালিত হয়-সেইটুকু আপনাদের কাছে আমি চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার অনেক কষ্ট করেই আজকের এই বাজেট বৃদ্ধি করেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করে এক একটা পরিকল্পনা পাস করছে, কাজেই এই তৈরী করা স্থাপনাগুলো যেন গুণে ও মানে অটুট থাকে।
বাংলাদেশের মানুষের দোড়গোড়ায় তাঁর সরকার স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছে কাজেই মানুষ যেন সেবাটা পায় এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়, -বলেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালিক, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক সিরাজুল ইসলাম শিশির এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব সিরাজুল ইসলাম খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে সরকারের স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে বলেন, মানুষের সেবার মহান ব্রত নিয়ে আপনাদের এই পেশা। এই ব্রত নিয়েই আন্তরিকভাবে মানুষের সেবা করুন।
প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের দেশের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে এখন চিকিৎসা সেবা দেওয়া থেকে শুরু করে গবেষণা, ক্লাস নেওয়াসহ বিভিন্নভাবে অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে।
গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের রোগের ধরন, স্বাস্থ্য সেবার উন্নতি, রোগ নির্ণয় এবং এর সমাধানে কাজ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, নাক-কান গলা ইনস্টিটিউট, ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, বেগম ফজিলাতুন নেছা কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালসহ তাঁর সরকারের বিভিন্ন বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারের তিন মেয়াদে বিশেষায়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে রোগীরা স্বল্পমূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা নিতে পারছেন এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের ফলে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে।
উল্লেখ্য,শেখ রাসেল গ্যাস্টোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে দেশে পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও প্যানক্রিয়াসজনিত গ্যাস্ট্রো ইন্টেসটাইনাল রোগের উন্নত মানের চিকিৎসাসেবা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মহাখালীতে ২ একর জমির ওপর ১০ তলা মূল হাসপাতাল ভবনসহ আরও চারটি পাঁচ তলা ভবন নিয়ে ২৫০ শয্যার এই হাসপাতাল নির্মিত হয়েছে। এখানে ইমার্জেন্সি এন্ডোসকপিক ইন্টারভেনশন, ইমার্জেন্সি সার্জিক্যাল কেয়ার ও ১২ বেডের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডসহ গ্যাস্ট্রো ইনটেসটাইনাল ইমার্জেন্সি সেবার সুবিধা রয়েছে।
বহির্বিভাগে পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও প্যানক্রিয়াসজনিত গ্যাস্ট্রো ইন্টেসটেইনাল রোগগুলোর মেডিকেল ও সার্জিক্যাল কনসালটেশন ব্যবস্থাও রয়েছে। এছাড়া, এই হাসপাতালে রয়েছে চারটি অপারেশন থিয়েটার, আট বেডের আইসিইউ, ১২ বেডের এইচডিইউ, ১২টি ওয়ার্ড এবং ৩০টি কেবিন। পাঁচ তলা ভবনগুলো পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট হোস্টেল, ডক্টরস ডরমেটরি, নার্সেস হোস্টেল ও ইমার্জেন্সি স্টাফ কোয়ার্টার হিসেবে নির্মিত হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি মানুষের সাংবিধানিক অধিকার একথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু সংবিধানে এ অধিকার লিপিবদ্ধ করেছে। এ জন্য সরকার স্বাস্থ্য খাতের দিকে বেশি নজর দিয়েছে এবং দেশের মানুষ যেন সুস্বাস্ব্যের অধিকারী হয় সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
আমাদের জলবায়ু, পরিবেশগতকারণসহ নানাকারণে দেশের মানুষ পেটের পীড়ায় বেশি আক্রান্ত হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন ছিল। এ লক্ষ্যে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ভবন স্থাপন করা হলো। এমন একটি প্রতিষ্ঠান করতে পেরে আমি আনন্দিত।
তিনি হাসপাতালটির নাম ’৭৫ এর ১৫ আগষ্ট বিয়োগান্তক ঘটনায় শহিদ বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে ১০ বছরের শেখ রাসেলের নামে নামকরণ করায় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেটে তিনটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। সামনে নির্বাচন আবার যদি ক্ষমতায় আসতে পারি তাহলে প্রত্যেক বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে বাকী বিভাগগুলোতেও করে দেব।
মানুষ যেন স্বাস্থ্য সেবা পায় সেজন্য হাসপাতাল নির্মানে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, তারা যাতে স্বল্পশুল্কে হাসপাতালের বিভিন্ন সামগ্রী এবং যন্ত্রাংশ আমদানি করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
একটি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সরকারের ধারবাহিকতা রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে আমরা যেমন দেশের উন্নয়ন করেছি, তেমনি বহি:বিশ্বে ও বাংলাদেশের মান মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি ’৭৫ পরবর্তী প্রেক্ষাপট স্মরণ করে বলেন, আগে বিদেশিরা কোনো বাঙালিকে দেখলে বলতো খুনি। এখন আর তা বলে না। বাংলাদেশের হারানো গৌরব আমরা ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশি অনেক রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান তাঁকে প্রশ্ন করে জানতে চান- কীভাবে বাংলাদেশের এত উন্নয়ন হয়েছে, ম্যাজিকটা কী?
তিনি বলেন, উত্তরে তাঁর একটাই কথা, ম্যাজিক কিছুই না, সবটাই হচ্ছে আন্তরিকতা এবং কর্মনিষ্ঠা। মানুষের জন্য কিছু করার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা।
তিনি বলেন, আমার তো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। দিনরাত কাজ করি শুধু জনগণের জন্য। বঙ্গবন্ধু যে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছি।
প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, জনগণ যদি আবার ভোট দিয়ে তাঁকে ক্ষমতায় আনে তাহলে যেসব কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত সেগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করে উদ্বোধনের ব্যবস্থা করবেন তিনি।