২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ৯০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করবেঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

9007

Published on সেপ্টেম্বর 11, 2018
  • Details Image
  • Details Image
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্য ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করেছে এবং আশা করছে এ প্রক্রিয়ায় ভারত তাঁদের পাশে থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতা কাঠামোর অধীনে ২০৪১ সালের মধ্যে প্রতিবেশি দেশগুলো থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করছি। আমি আশা করি, এই লক্ষ্য অর্জনে ভারত আমাদের পাশে থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একযোগে বিদ্যুৎ ও রেল য্গোযোগের তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধনকালে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন।

প্রকল্পগুলো হচ্ছে- কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় নবনির্মিত ৫শ’ মেগাওয়াট এইচভিডিসি (২য় ব্লক) প্রকল্পের নির্মাণ কাজ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন’ ও ‘আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেল সংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ)’।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নয়াদিল্লীস্থ তাঁর কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন।

ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং বাংলাতেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী কোলকাতা থেকে এবং ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আগরতলা থেকে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

ই-সুইচ টিপে দুই প্রধানমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী একযোগে প্রকল্প তিনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এবং জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খরিজ সম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এবং ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা এ সময় অন্যান্যের মধ্যে গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশের উন্নয়ন অন্বেষায় সহযোগিতার জন্য প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব চিরস্থায়ী হোক আমরা সেটাই চাই। যার ফলে দুদেশ আরো একসঙ্গে কাজ করে দু’দেশের জনগণের উন্নতি সাধন করতে পারবে।

তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত যে, আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায় অনেক সাফল্যগাঁথা আগামীতে আমাদের সামনে উপস্থাপিত হবে যা আমরা উদযাপন করতে পরবো। ভারত- বাংলাদেশ স্থল সীমানা সমস্যার সমাধান হয়েছে। ভারতের সকল সংসদ সদস্যদের এ জন্য আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। কারণ তাঁরা সকলে এক হয়ে এই স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছেন। ভারত বাংলাদেশের বিষয়ে সব সময় যে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয় এখানে সেটিই আবার প্রমাণিত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, পাশাপাশি আমরা আমাদের অন্যান্য সমস্যাগুলোরও সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি। কাজেই আমি আশাকরি, আমাদের এই বন্ধুত্ব অটুট থাকবে। আমি আশকরি ভবিষ্যতে আরো সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র নিয়ে আমরা দুই দেশের জনগণের সামনে উপস্থিত হতে পারবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ খাত আমাদের দুই দেশের মধ্যেকার দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বর্তমানে ভারত থেকে আমরা ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি। ভারত থেকে আরও ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা গত সাড়ে ৯ বছরে ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট থেকে ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।’

আমরা ১৩ হাজার ৬৯০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন আরও ৫৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছি।

তবে, আমাদের উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য আরও বিদ্যুৎ প্রয়োজন উল্লেখ করেন অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী এমন ধারণা ব্যক্ত করেন যে, বাংলাদেশকে আরো ৫শ’ মেগাওয়াট অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রদানের সামর্থ পশ্চিমবঙ্গের রয়েছে এবং কেন্দ্র অনুমতি দিলে সেই বিদ্যুৎ তারা বাংলাদেশে রফতানি করতে চায়। এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গ থেকে আরো ৫শ’সহ মোট এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির আগ্রহ অনুষ্ঠানে ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে মমতা আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বলেন, পরবর্তী নির্বাচনে আপনি জিতুন, তখন আমি বাংলাদেশে যাবো।
রেলওয়ে খাতেও আমাদের দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে মালামাল পরিবহনের জন্য আমরা ১৯৬৫-পূর্ব রেল সংযোগ পুনরায় চালু করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, আমরা শিগগিরই লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় ভারতীয় অর্থায়নে যৌথভাবে ঢাকা ও টঙ্গীর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ রেললাইন এবং টঙ্গী ও জয়দেবপুরের মধ্যে ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণের ভিত্তিফলক স্থাপন করতে পারব।’

প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতার শুরুতেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার ও জনগণের অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার ও সেদেশের জনগণের গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে আমরা সব সময়ই কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। এটি আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে চিরদিনই একটি মাইলফলক হিসাবে বজায় থাকবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের দু’দেশের মধ্যে প্রভূত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ব্লু-ইকনোমি, সামুদ্রিক সহযোগিতা, পারমাণবিক শক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, মহাকাশ গবেষণার মত নতুন নতুন ক্ষেত্রগুলোতেও কাজ আমরা শুরু করেছি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর ভাষণে ১৯৬৫ সালের পূর্বে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বিদ্যমান রেল যোগাযোগ পুনঃস্থাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বলেন, ‘আখাউড়া-আগরতলা রেল কানেকটিভিটির কাজ পুরো হলে আমাদেও আন্তঃদেশীয় সংযোগের ক্ষেত্রে আরেকটি যোগসূত্র স্থাপিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য যে মহৎ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন- ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলা, তাঁর লক্ষ্য সফল করার ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা করতে পারাটা একটি গর্বের বিষয়।

মোদী বলেন,‘ আমি বিশ্বাস করি যেভাবে আমরা আমাদের সম্পর্ককে দৃঢ় করবো এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে হৃদ্যতা শক্তিশালী করবো, সেভাবেই আমরা উন্নতি এবং সমৃদ্ধির নবদিগন্ত উন্মোচিত করতে সক্ষম হব।’

এরপর তিনি বাংলায় উচ্চারণ করে বলেন, ‘আজ থেকে আমরা আরো কাছে এলাম, আমাদের সম্পর্ক আরো গভীর হলো।’

প্রধানমন্ত্রী পরে আখাউড়া, ভেড়ামারা এবং কুলাউড়ার স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

বিদ্যুৎ ও জ্বালনি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে ৩শ’ মেগাওয়াট সরবরাহ করবে ভারতের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ন্যাশনাল থার্মাণ পাওয়ার প্লান্ট এবং ২শ’ মেগাওয়াট সরবরাহ করবে প্রাইভেট পাওয়ার ট্রেডিং কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া। এই ৫শ’ মেগওয়াট যোগ হওয়ায় ভারত থেকে আমদানী করা বিদ্যুতের পরিমাণ দাঁড়াবে ১১৬০ মেগাওয়াট।

বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৫৩ কি.মি, দৈঘ্যেও ‘কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুননির্মাণে ব্যয় হবে ৬৭৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ভারতের এলও সি’র আওতায় এই নির্মাণ ব্যয়ের ৫৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা দেয়া হবে। ব্রিজ, প্যাসেঞ্জার প্লাট ফর্ম, শেড, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন ভবন এবং অন্যান্য স্থাপনা এই প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হবে।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত