কোন গডফাদারকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে নাঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

11462

Published on মে 30, 2018
  • Details Image
    সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল)

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপী মাদক বিরোধী অভিযানের উল্লেখ করে বলেছেন, এই অভিযানের ফলে জনজীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে এবং কাউকেই এই অভিযানে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। কোন গডফাদার বা ডন যদি থেকে থাকে তাদেরকেও না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক জনকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন।

তাঁর সাম্প্রতিক ভারত সফরের সাফল্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাদক বিরোধী অভিযানের ফলে জনজীবনে স্বস্তি ফিরেছে এবং দেশের জনগণের এটা দাবি। মাদকের বিস্তার রোধে বড় বড় পত্রিকাতে এজন্য হেডলাইনও হয়েছিল, সমাজ মাদকের অধীনস্থ হয়ে আছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে আমাদের কাজটা করতে দিন।’

কারা এই মাদকের গডফাদার বা ডন তাঁর জানা নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শুধু এটুকুই বলবো কে গডফাদার, কে ডন আমি কিন্তু জানি না। তবে, শুধু এটুকুই বলতে পারি-যারাই এর সঙ্গে জড়িত যাদের বিরুদ্ধে এর সঙ্গে জড়িত থাকার খবর পাওয়া যাচ্ছে তাদের কাউকেই ছাড়া হচ্ছে না। মাদক পাচার, মাদক ব্যবসায়ী এবং সেবনকারী প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

কোন কাজ শুরু করলে তা সুচারুপেই সম্পাদন করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যখন ধরি ভাল করেই ধরি, এটাতো সকলের ভাল করেই জানা। গড ফাদার যেই হোক এবং সে যে বাহিনীতেই থাকুক তাকে কিন্তু ছাড়া হচ্ছে না। কে কার কি, কার ভাই, কার চাচা ওটা কিন্তু দেখিনা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান চলার সময়ও কথা উঠেছিল, কিন্তু আমরা সন্ত্রাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। যদিও বিশ্বের অনেক সভ্য দেশে এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এখনও অব্যাহত রয়েছে।’

মাদকাশক্তিকে একটা সামাজিক ব্যাধি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হবার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার মাদক পাচারকারী, ব্যবসায়ী এবং সেবনকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে, আমি আশ্চর্য্য হয়ে যাই এই গ্রেফতারের কথাটা কিন্তু সেইভাবে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হচ্ছে না।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন থেকে গোয়েন্দা সংস্থা এটা নিয়ে কাজ করেছে যে কারা এরসঙ্গে জড়িত। আমরা কিন্তু অপারেশনে হঠাৎ করে যাইনি। হয়তো আপনাদের মনে হতে পারে হঠাৎ করে এই অভিযান শুরু হয়েছে। কিন্তু ঘটনা তা নয়। দীর্ঘদিন থেকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে, দেখা হয়েছে- কারা আনে কোন কোন স্পট থেকে ঢুকছে, কোথায় তৈরী হচ্ছে কি হচ্ছে এগুলো খবর নিয়েই কিন্তু অভিযান চলছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপূর্বে শুধু মাদকই ধরা হতো, সেখানে এমন কোন দিন নাই যেদিন ইয়াবা ট্যাবলেট বা মাদক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে নাই। এখন ব্যবসায়ীদের ধরা হচ্ছে এবং জল পথ, স্থল পথ কোন পথই এই অভিযানের বাইরে নেই।

এই অভিযানে সাধারণ জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলা হচ্ছে না, যোগ করেন তিনি।

প্রস্তাবিত তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তির অগ্রগতি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বিষয়টি ভারত সরকার দেখছে বলে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সকলকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা তাঁর সম্প্রতি ভারত সফরের উদ্দেশ্য ছিল না। বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধনই ছিল প্রকৃত উদ্দেশ্য। তিনি আরো বলেন, তিস্তা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) সেখানে রয়েছে।

শেখ হাসিনা জানান, এ বিষয়ে জেআরসির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সে সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রীও কথা বলেছেন।

শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন- কেন নদীর ভাটিতে হওয়া সত্ত্বেও অতীতে বাংলাদেশের তৎকালীন সরকার তিস্তা বাঁধ নির্মাণ করেছিল।

তিনি সরকারি বিপুল অর্থ খরচ করে শুষ্ক মৌসুমে পূর্ণ চাহিদা অথচ নদীতে পানি নেই তখন এই তিস্তা বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তারও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এ ধরনের নিজস্ব বাঁধ নির্মাণের পর এই নদীর পানির জন্য কেন আমরা সোরগোল করছি।’

প্রধানমন্ত্রী পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, পায়রাসহ দেশের প্রধান প্রধান নদীতে সারাবছর নাব্যতা বজায় রাখার জন্য এসব নদী খননে তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন।

যদি তিনি পরবর্তীতে দায়িত্ব পান, তবে নগরীর সকল কালভার্ট ভেঙ্গে ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে এবং পান্থপথ, শান্তিনগর, বেগুনবাড়িতে খাল খনন করে তার ওপর দিয়ে সড়ক তৈরি করা হবে বলে জানান।

একজন সিনিয়র সাংবাদিক যখন প্রধানমন্ত্রীকে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির ব্যাপারে প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার অনুরোধ করেন তখন শেখ হাসিনা বলেন, এমন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার তার কোন আগ্রহ নেই। এমন পুরস্কার অর্জনে লবিস্ট নিয়োগ করার মতো তার কোন আর্থিক সঙ্গতি নেই বলেও উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমার পক্ষে প্রস্তাব এসেছে, কিন্তু আমি কখনো এ ব্যাপারে চিন্তা করি না। আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার হচ্ছে আমার প্রিয় দেশবাসীর জন্য দুবেলা খাবার নিশ্চিত করা, যাতে তারা শান্তিতে বসবাস করতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গরীব মানুষের টাকায় লবিস্ট নিয়োগ করার মতো তার কোন ইচ্ছাও নেই। ‘তাই আমি যে পুরস্কার পেয়েছি, তার জন্য নিজের কোন চাহিদা নেই।’

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর রাজনৈতিক জীবনে যেসব পুরস্কার তিনি অর্জন করেছেন, তার মধ্যে আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি. লিট ডিগ্রি শীর্ষে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কবি নজরুল ইসলামের মেধা ছিল বহুমুখী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সাহিত্যে নজরুলের অবদান অনেক বেশি, যার তুলনা নেই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর ভারত সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ভারত জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগণের জন্য পর্যাপ্ত সাহায্য প্রেরণসহ সকল বিষয়ে সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভারত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে।’

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত